পূর্বসূরি মনীষীদের ঈদ

মাহফুয আহমদ: প্রকৃত ঈদ: হাসান বসরি (রহ.) বলেন, যেদিন নিজেকে আল্লাহ তাআলার নাফরমানি থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারবে, তোমার জন্য সেদিনই ঈদের দিন। মুমিন বান্দা যে দিনটি আপন মাওলার স্মরণ, কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্যে অতিবাহিত করল, সেই দিনটি তার জন্য মহা আনন্দের দিন। (লাতায়িফুল মাআরিফ; ইবনে রজব হাম্বলি : ১/২৭৮)

দৃষ্টি সংযত রাখা: ওয়াকি (রহ.) বলেন, ঈদের দিন আমরা মুহাদ্দিস সুফিয়ান সাওরি (রহ.)-এর সঙ্গে বের হলাম। তিনি আমাদের সম্বোধন করে বলেন, যে বিষয় দিয়ে আমরা ঈদের দিনটি শুরু করি তা হলো নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখা। (আল ওয়ারা; ইবনে আবিদ দুনিয়া, পৃ. ৬৩, কুয়েত, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৮ হি.)

ঈদ ও কিয়ামতের সাদৃশ্য: আল্লামা ইবনুল জাওজি (রহ.) কতই না সুন্দর লিখেছেন, ঈদের দিনে লোকদের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এটাকে কিয়ামতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হয়েছে। কেননা লোকেরা ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে জেগে ঈদগাহর দিকে ছুটতে থাকে; তেমনিভাবে কিয়ামতের দিন কবর থেকে উঠে সবাই হাশরের ময়দানের দিকে ছুটতে থাকবে।

ঈদের দিন কারো পোশাক ও গাড়ি থাকে খুব উন্নতমানের, কারো থাকে মাঝারি মানের, আবার কারো থাকে একেবারে নিম্নমানের; তেমনিভাবে কিয়ামতের দিন মানুষের স্তর হবে ভিন্ন ভিন্ন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন দয়াময়ের কাছে পরহেজগারদের অতিথিরূপে সমবেত করব।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৮৫) অর্থাৎ আরোহী অবস্থায়।

তারপর আল্লাহ বলেন, ‘এবং অপরাধীদের পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৮৬) অর্থাৎ তৃষ্ণার্ত অবস্থায়। এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে লোকদের সমবেত করা হবে, কেউ আরোহী অবস্থায়, কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ উপুড় অবস্থায়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪২৪)

ঈদের দিন ভিড়ের কারণে কোনো মানুষ পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায়; তেমনিভাবে কিয়ামতের দিন জালিমদের মানুষ পা দিয়ে পিষ্ট করবে। ঈদের দিন কোনো মানুষ থাকে ধনী এবং দানকারী; তেমনিভাবে কিয়ামতের দিন দুনিয়ার দানশীলরা ওখানেও দানশীল প্রমাণিত হবে, পক্ষান্তরে কিছু মানুষ থাকবে ভিক্ষুক ও (নেকির) মুখাপেক্ষী। ঈদের দিন লোকেরা নামাজ শেষে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘরে আসে, ফুর্তি করে, অন্যদের জানায় যে এরা সব তার বন্ধু; তেমনিভাবে কিয়ামত দিবসে মানুষ নিজের আমলের পুরস্কার পেয়ে পুলকিত হয়ে নিজ জান্নাতে ফিরবে, পক্ষান্তরে কিছু মানুষ খালি হাতে শূন্য ঘরে ফিরবে। সুতরাং বুদ্ধিমানদের জন্য উচিত হলো এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। (সায়দুল খাতির; ইবনুল জাওজি, পৃ. ৪৮০-৪৮১)

লেখক: আলোচক, ইকরা টিভি, লন্ডন

শেয়ার করুন: