চুলকানি

চুলকানি কেন হয়, কী করবেন

চুলকানি একটি অতি পরিচিত অস্বস্তিকর অনুভূতি, যা আমাদের প্রায় সকলেরই কোনো না কোনো সময় হয়েছে। এই অনুভূতি এতটাই তীব্র হতে পারে যে, আক্রান্ত স্থানে অনবরত আঁচড় কাটার প্রবল ইচ্ছা জাগে। তবে চুলকানির তীব্রতা ও সংবেদনশীলতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় সামান্য কারণেই কেউ বেশি চুলকানি অনুভব করেন। শুধু চর্মরোগ নয়, সাধারণ কিছু কারণ এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গের রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও চুলকানি দেখা দিতে পারে। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া কারও কারও ক্ষেত্রে এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

চুলকানির নেপথ্যে:

হিস্টামিন এবং অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার (স্নায়ুকোষে সংকেত বহনকারী রাসায়নিক পদার্থ) চুলকানির প্রধান কারণ। চুলকানিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা যায়:

১. প্রুরাইটোসেপটিভ ইচ: এটি মূলত বিভিন্ন চর্মরোগের কারণে হয়ে থাকে।
২. নিউরোজেনিক ইচ: এর উৎপত্তি মস্তিষ্কে এবং এটি বিভিন্ন রোগের ফলস্বরূপ হতে পারে।
৩. নিউরোপ্যাথিক ইচ: স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার কারণে এই ধরনের চুলকানি দেখা দেয়। স্নায়ু আমাদের শরীরের সকল অনুভূতির জন্য দায়ী।
৪. সাইকোজেনিক ইচ: মানসিক সমস্যা, যেমন প্যারাসাইটোফোবিয়ার (শরীরে পোকা হাঁটার বা দেখার ভয়) কারণে এই চুলকানি অনুভূত হয়।

চুলকানির অসংখ্য কারণ বিদ্যমান। অনেক সময় কোনো রোগ ছাড়াই কেবল চামড়া শুষ্কতার কারণেও চুলকানি হতে পারে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের শীতকালে ত্বক বেশি চুলকায়। এছাড়াও কৃমি সংক্রমণ, প্রসাধনীতে অ্যালার্জি, উলের পোশাক ব্যবহার, আবহাওয়া বা তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তনও চুলকানির কারণ হতে পারে।

কিছু বিশেষ খাবার, যেমন দুধ, ডিম, গরুর মাংস, চিংড়ি, মাশরুম, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি এবং বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও চুলকানি হতে পারে। চর্মরোগের মধ্যে স্ক্যাবিস (পাঁচড়া), ছত্রাক সংক্রমণ, একজিমা এবং অ্যালার্জি প্রধানত চুলকানির জন্য দায়ী। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের রোগ, যেমন লিভারের রোগ (জন্ডিস, হেপাটাইটিস, ক্রনিক লিভার ডিজিজ), কিডনির রোগ (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, ইউরেমিয়া), ক্যান্সার (লিম্ফোমা) এবং অন্যান্য রোগের বহিঃপ্রকাশও চুলকানির মাধ্যমে শুরু হতে পারে। সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যাও চুলকানির কারণ হতে পারে।

আমাদের দেশে স্ক্যাবিস, একজিমা, অ্যালার্জি, আর্টিকেরিয়া (চাকা ওঠা) এবং দাউদের মতো রোগের কারণে চুলকানি বেশি দেখা যায়। চুলকানি না সারলে এবং তীব্র হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এর পেছনে বিভিন্ন জটিল কারণ থাকতে পারে। নিজে থেকে অ্যান্টিহিস্টামিন কিনে খাওয়া এবং মলম ব্যবহার করলে রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করতে বিলম্ব হতে পারে।

করণীয়:

যাদের চুলকানির সমস্যা রয়েছে, তারা কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে উপকার পেতে পারেন:

  • সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন।
  • ঘাম হলে দ্রুত মুছে ফেলুন।
  • যেসব খাদ্য, ওষুধ, কাপড় বা প্রসাধনীতে অ্যালার্জি হয়, সেগুলো পরিহার করুন।
  • মাঝেমধ্যে কৃমিনাশক ওষুধ খান।
  • শুষ্ক ত্বকে নিয়মিত ইমোলিয়েন্ট ক্রিম, ভালো ময়েশ্চারাইজার বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
  • চুলকানি কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রহণ করতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চুলকানির মূল কারণ শনাক্ত করে সেই নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা করানো।
শেয়ার করুন: