পূর্ণ বয়স্ক মানুষের – আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে চলে এ আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া। হঠাৎ করেই বছরের চিরাচরিত অভ্যাসগুলো পাল্টে যায় এ মাসে। এ সময় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমে। এ পরিবর্তন মানিয়ে নেওয়া প্রথম দিকে একটু কঠিন হয়ে যায়। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে পবিত্র রমজানের গুরুত্ব অনেক।
ছোট, বড়, নারী-পুরুষ ভেদে মুসলমানরা রোজা রাখেন। এতে দীর্ঘ ১১ মাসের স্বাভাবিক আহার, নিদ্রা, নিয়ম-নীতির কিছুটা পরিবর্তন আসে। তবে কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করলে থাকতে পারেন সুস্থ, সবল এবং রাখতে পারেন রোজা। কিভাবে রোজা রেখে সারা মাস সুস্থ থাকা যায় আসুন জেনে নেই….
রোজার পুরো মাসেই নানা রকম আয়োজন করে থাকেন সবাই। সাধারণ সময়ের চেয়ে রোজার সময় খাবারের সময়সূচির অনেক পরিবর্তন হয়। সেহেরি, ইফতার ও রাতের খাবার- এই তিনটি সময়ে খাদ্য গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
খাবারের পাশাপাশি ঘুম, ব্যায়াম এমনকি কাজের সময়সূচিরও অনেক পরিবর্তন হয়। সুস্থভাবে রোজা সম্পন্ন করতে শরীরকে সুস্থ রাখা, ক্লান্ত না হওয়া, দুর্বলতা বা যেকোনো রোগের উপসর্গ এড়িয়ে চলা ইত্যাদি বিষয়কেও মাথায় রাখা জরুরি।
রোজা স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্যকে ধরে রাখার জন্য যতটুকু ঘুম দরকার ততটুকু ঘুমই হলো স্বাভাবিক ঘুম। কিন্তু তা জন এবং মানুষের বয়স ভেদে পরিবর্তনীয়।
সাধারণত ভাবে আমরা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমকে স্বাভাবিক বলে থাকি। তবে সেটা নির্দিষ্ট হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। তাছাড়া মানুষ তো বিভিন্ন বয়সের আছে তাই তাদের ঘুমের তারতম্যও আছে।
বিশেষ করে রাতে তারাবি নামাজ শেষ করে ঘুমাতে যেতে প্রায় রাত ১২টা বেজে যায় আবার সেহেরী খাবার জন্য ভোর রাতে উঠতে হয়। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ঘুমের পরিমান একটু কমে যায়।
তারপরেও একজন সুস্থ্য ও পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য ৭-৮ ঘন্টা ঘুম কন্টিনিউ করা জরুরী। বিশেষজ্ঞরা রোজার সময় ঘুমের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে বলেছেন।
তাদের মতে, প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টার ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সেহরির সময় ইবাদত করার জন্য শক্তি পাওয়া যাবে। তবে অবশ্যই সেহরি খাওয়ার পর অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমানো ঠিক নয়।
রোজার সময় ব্যায়ামের বিষয়টিও অনেক জরুরি। সাধারণত রোজায় অনেক ইবাদত করা হয়। এটি অনেক ভালো ব্যায়াম। সাধারণ সময়ের মতো অনেক ব্যায়াম না করাই ভালো। শক্তি বজায় রেখে হালকা পাতলা ব্যায়াম করাই ভালো।
এ ক্ষেত্রে ২০ মিনিট হাঁটা যেতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীরা যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁরা কোনোভাবেই রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা না করে হাঁটবেন না। রোজায় যাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
রোজার আগে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটা জরুরি। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের লিপিড প্রোফাইল, ক্রিয়েটিনিন, হিমোগ্লোবিন ও লিভার টেস্ট করানো উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখলে সুস্থ থাকা যায়।
রোজার সময় ইফতারের মেন্যু যাতে সঠিক হয়, সে জন্য রোজার আগ থেকেই পরিবারের সবার সঙ্গে আলোচনা করে মেন্যু তৈরি করে ফেলা উচিত। রোজাও সেই রকমভাবে করতে হবে, যাতে রোজা রেখে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে না হয়।
ইফতারের ক্ষেত্রে সুষম খাবারের বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। শুধু ইফতার নয়, পুরো রোজায় সুষম ও পরিমিত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাবারের লক্ষ্যে নিরাপদ উপায়ে খাদ্য তৈরি ও সংগ্রহ করতে হবে।