সারি সারি বসে হাজারও মুসল্লির মধ্যে কেউ তসবিহ পাঠ করছেন কেউবা মশগুল দোয়া-দরুদ পড়তে। সামনে সাজানো ইফতারের প্লেট। আট রকমের ইফতার দেওয়া হয়েছে প্রতিটি প্লেটে। যতই ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ইফতার করতে আসা মানুষের সংখ্যা।
মুসল্লিদের কাতারে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী যেমন আছেন, তেমনি দিনমজুরের সংখ্যাও কম নয়। দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের এতো বড় আয়োজন তবু কোথাও নেই কোনো কোলাহল। এ যেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এক মিলনমেলা। মসজিদের মাইকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসতেই সবাই একসঙ্গে ইফতার শুরু করেন।
রোববার সন্ধ্যার এই চিত্র চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা শাহ জামে মসজিদের। মসজিদ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোজা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজারে। প্রতিবারই এমনটি দেখা যায়।
শাহী জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদ সূত্র জানায়, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোছাইন তাহের জবেরী আল মাদানী ভিন্ন রকম এই ইফতার আয়োজনের চিন্তা করেন। সেই চিন্তা থেকে ২০০১ সালে তিনি সৌদি আরবের মক্কা মদিনার আদলে সবার জন্য একসঙ্গে ইফতারের রেওয়াজ চালু করেন। ২০০৭ সাল থেকে আয়োজন বড় আকারে রূপ নেয়।
এ ব্যাপারে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিবের একান্ত সচিব মো. হাসান মুরাদ বলেন, এখানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। ইফতারের এ আয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা করেন বিত্তশালীরা। তারা কেউই দানের কথা প্রচার করেন না। আবার অনেক যুবক ইফতার আয়োজনের সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।
হাসান মুরাদ জানান, নয় পদের ইফতার সামগ্রীর আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে জিলাপি, মুড়ি, খেজুর ও বিরিয়ানি বাইরে থেকে আনা হয়। ছোলা, সমুচা, পেঁয়াজু, আলুর চপ ও শরবত নিজস্ব বাবুর্চিরা তৈরি করে থাকেন।
আছরের নামাজ শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, একদল স্বেচ্ছাসেবক রান্না করা ইফতারিগুলো প্লেটে তুলছিলেন। ২৫ জনের অধিক কর্মী একসঙ্গে কাজ করলেও নেই কোনও কোলাহল। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যেই ইফতারগুলো প্লেটে সাজিয়ে তুলেছেন।
ইফতার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আজহারুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে ইফতার করার এক ধরনের আত্মতৃপ্তি আছে। সময় পেলেই আমি এখানে ইফতার করতে চলে আসি।
এমনই আরেকজন এনায়েত বাজার এলাকার রিকশাচালক খায়েস মিয়া। তিনি দিনভর যেখানেই থাকেন না কেন, ইফতারের আগে আন্দরকিল্লা মসজিদে চলে আসেন। এখানে ইফতার করতে এসে ভালো লাগে তার।