ইফতারের সুন্নাত ও ফজিলত

শুরু হয়েছে মাহে রমজান। আজ মঙ্গলবার (৭ মে) রাতে সেহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম রোজা রেখেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। সিয়াম বা রোজার অন্যতম শর্ত হলো যথা সময়ে সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করা।

নির্দিষ্ট সময়ের পর সেহরির খাবার খেলে রোজা হবে না। আবার ইফতারের সময়ের আগে খাবার গ্রহণ করলেও রোজা হবে না। তাই যথা সময়ের মধ্যেই সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করতে হবে।

‘ইফতার’ আরবি শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো নাশতা করা, খাবার খাওয়া, উপবাস ভঙ্গ করা ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় ইফতার বলতে রোজাদার মুমিন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নাত অনুসারে যে হালকা খাবার গ্রহণ করে, তাকে বোঝায়।

রোজা রাখা যেমন একটি ইবাদত, তেমনি ইফতার করাও একটি ইবাদত। রমজানের রোজা রাখা ফরজ আর ইফতার করা সুন্নত। ইফতার করা ও ইফতার করানোর মধ্যে সীমাহীন সওয়াব রয়েছে। তবে সেটা অবশ্যই রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নত অনুযায়ী হতে হবে।

ইফতারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহর সুন্নত হলো, সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে অনতিবিলম্বে ইফতার করতে হবে। হজরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- মানুষ তত দিন কল্যাণের ওপর থাকবে, যত দিন তারা অবিলম্বে ইফতার করবে। (সহিহ আল-বোখারি : ১৯৫৭, মুসলিম : ১০৯৮, ইবনে মাযা : ১৬৯৮, তিরমিীজ : ৬৯৯, সহিহ ইবনে খুজাইমা : ২০৫৮, মুসনাদে আহমাদ : ২২৮০৪)

হজরত আবু আতিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি ও মাসরুক হজরত আয়েশার (রা.) নিকট গিয়ে বললাম- হে উম্মুল মুমিনীন! হজরত মুহাম্মদের (সা.) সাথিদের মধ্যে দুজন এমন আছেন, যাঁদের একজন অবিলম্বে ইফতার করেন এবং অবিলম্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।

আর অপরজন বিলম্ব করে ইফতার করেন এবং বিলম্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, দুজনের মধ্যে কে অবিলম্বে ইফতার করেন এবং অবিলম্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন? রাবী বলেন, আমরা বললাম, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এভাবেই করতেন। (সহিহ মুসলিম : ১০৯৯, সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৪, সুনানে নাসাঈ : ২১৬১, মুসনাদে আহমাদ : ২৪২১২)

খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত : হজরত সালমান ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে, তার উচিত খেজুর দিয়ে ইফতার করে। তবে সে যদি খেজুর না পায়, তাহলে সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ পানি পাক-পবিত্র। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৮৪৭, মুসনাদে আহমাদ : ১৬২২৫, সহিহ ইবনে খুজাইমা : ২৭৮, বায়হাকি শুআবুল ইমান : ৩৬১৫)

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয় : সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্বে ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করাও সুন্নত। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের প্রতি মুমিন বান্দার নিখাদ আনুগত্যের এক পরম অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়, যা মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয়। কারণ ওই সময়ে রোজাদার থাকে সাংঘাতিক ক্ষুধার্ত।

মারাত্মক ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার সামনে থাকার পরও না খেয়ে সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকার মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্বের সামনে নিজের চরম অসহায়ত্বের প্রকাশ করে এবং খোদানুগত্যের এক বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তাই ইফতারের পূর্বমুহূর্তে ইফতারি সামনে নিয়ে রোজাদার দোয়া করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর সে দোয়া কবুল করেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল না করে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (ক) ন্যায়বিচারক শাসনকর্তার দোয়া, (খ) ইফতারের পূর্বে রোজাদারের দোয়া এবং (গ) মাজলুমের (নির্যাতিত ব্যক্তির) দোয়া। (মুসনাদে আহমাদ : ৯৭৪২ )

রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত : রোজাদারকে ইফতার করানোর মধ্যেও রয়েছে সীমাহীন সওয়াব। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, এর দ্বারা তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।

আর রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব তাকে দান করা হবে অথচ রোজাদারের সওয়াব একটুও কমানো হবে না। সাহাবাগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে সকলের তো রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সংগতি নাই!

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- যে কেউ কোনো রোজাদারকে একটি মাত্র খেজুর দিয়ে বা পানি পান করিয়ে অথবা এক ঢোক দুধ দিয়ে ইফতার করাবে, মহান আল্লাহ তাকে এই সওয়াব দান করবেন। (সহিহ ইবনে খুজাইমা : ১৮৮৭, বায়হাকি, শুআবুল ইমান : ৩৩৩৬, আত-তারগিব ওয়াত-তারহীব : ১৭৫৩)

শেয়ার করুন: