ইসলাম কিছু কাজে দেরি করতে নিষেধ করেছেন। তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো উপযুক্ত ছেলে-মেয়ের বিয়ে সম্পাদন করা। যখন কোনো মেয়ে কিংবা ছেলে বিয়ের উপযুক্ত হবে তখন দেরি না করে বিয়ে দেয়াই উত্তম।
বিয়ে ক্ষেত্রে ছেলে যেমন মেয়ে পছন্দ করতে পারবে তেমনি মেয়েরও ইখতিয়ার রয়েছে ছেলে পছন্দ করার। ‘পরিবারের পছন্দনীয় ছেলেকে বিয়ে করতে হবে’-এ মর্মে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো মেয়ের ওপর জোর করার কোনো নিয়ম নেই। হাদিসে পাকে এসেছে-
> হজরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন এক মেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা, কতইনা উত্তম পিতা।
আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সঙ্গে (আমাকে) বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি।
এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে (মেয়েটির) পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ বিয়ে হবে না, (মেয়েটিকে বললেন) তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও’। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)
হাদিসের আলোকে পাত্র নির্বাচনে মেয়ের মতামত নেয়া আবশ্যক। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র নির্বাচনে কোনোভাবেই কোনো মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর খাটানো ঠিক হবে না। তবে কোনো পিতামাতাই চান না তার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাক।
তবে ছেলে নির্বাচনের আগে অবশ্যই মেয়ের সঙ্গে পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পরামর্শ করা জরুরি। কেননা সারা জীবন সংসার করবে মেয়েটি। পরিবার যদি ভালো কোনো পাত্র নির্বাচন করে, তার সঙ্গে ছেলের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা আবশ্যক।
আর মেয়ে যদি কোনো ছেলেকে পছন্দ করে সেক্ষেত্রে পরিবারের লোকদেরকেও ছেলের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়া জরুরি। তাহলে পরিবারও ছেলের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে সহজ হবে। কেননা মেয়ে তার অধিকারের ব্যাপারে বেশি হকদার। হাদিসে এসেছে-
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার।’ (মুয়াত্তা মালেক, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)
তবে বিয়েকে কেন্দ্র করে কিংবা পিতা-মাতা বা পরিবারের অগোচরে পালিয়ে ভালোভাবে চেনা-জানাবিহীন কোনো ছেলেকে বিয়ে করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। যদিও প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ের জন্য ছেলে নির্বাচনের অধিকার দিয়েছেন প্রিয়নবি।
বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের পাত্র নির্বাচনের অধিকার প্রসঙ্গে অন্য হাদিসে এসেছে-
হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক মহিলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
হাদিস বর্ণনাকারী রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের (ইচ্ছার) ওপর ন্যস্ত করেন। (অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে) তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন,
তা আমি মেনে নিলাম। আমার (প্রিয়নবিকে বিষয়টি জানানোর) উদ্দেশ্য ছিল, (প্রাপ্ত বয়স্ক) মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের (চূড়ান্ত) মতের অধিকার নেই।’ (ইবনে মাজাহ, দারাকুতনি)
মনে রাখতে হবে,
বিয়ের ব্যাপারে অবশ্যই দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিতে হবে । সামাজিক কুফু তথা সামঞ্জস্য ঠিক আছে কিনা তা বিবেচনায় রাখতে হবে। সঠিকভাবে সাংসারিক হক আদায় করতে পারবে কিনা সে বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব মেয়েকে পাত্র নির্বাচনে সঠিক দ্বীনদারি বিবেচনার তাওফিক দান করুন। পরিবারের মর্যাদা রক্ষায় শ্রদ্ধাশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। পরিবারের দায়িত্বশীলদেরকেও মেয়েদের সঙ্গে পরামর্শের আলোকে সঠিক পাত্র নির্বাচনের তাওফিক দান করুন। আমিন।