কোরআন

পবিত্র কোরআন কোথায় নাজিল হয়েছে?

সমগ্র মানবজাতির মুক্তি, হেদায়েত ও মঙ্গলের জন্য আমাদের প্রিয় মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর কাছে মহান আল্লাহতা’লা যে আসমানি কিতাব নাজিল করেন, সেই সম্মানিত কিতাবই আমাদের ‘পবিত্র কোরআন শরীফ’।

মানবজাতির ত্রাণকর্তা হযরত মোহাম্মদ (স.) চলি­শ বছর বয়সে মক্কার ‘হেরা’ পর্বতে মহান আল­াহ্র ধ্যানে মগ্ন থাকা অবস্থায় নবুয়তপ্রাপ্ত হন। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে মহান আল­াহ ফেরেস্তা জিব্রাইলের মারফত বিভিন্ন ঘটনা, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে রাসূলুল­াহর কাছে ‘ওহি’ পাঠিয়েছেন।

ওহি পাওয়ার সাথে সাথে তিনি সেই ওহি নিজে বারবার আবৃত্তি করতেন, পাশে বসা সাহাবীরা সেই আবৃত্তি শুনে নিজেরাও আবৃত্তি করে মুখস্ত করতেন আর যারা লেখাপড়া জানতেন তারা সঙ্গে সঙ্গে ওহি পশুর চামড়া বা শ্লেট অথবা পাথরে লিখে রাখতেন।

এই আবৃত্তি ও লেখা শুদ্ধ হলো কিনা সাহাবীগণ তা পুনরায় আবৃত্তি করে এবং লেখাগুলো পাঠ করে রাসূলুল­াহকে শুনাতেন। তিনি ওহি শোনার পর কোন আয়াত আগে, কোন আয়াত পরে বসবে তা বলে দিতেন। এভাবেই নাজিলকৃত পুরো কোরআন শরীফ রাসূলুল­াহর (স.) জীবিতকালেই বিন্যস্ত ও লিপিবদ্ধ হয়েছিল।

কিন্তু বর্তমান কালের কোরআন শরীফের মত মসহাফ (বাঁধানো ও বিন্যাস্ত) ছিল না। রাসূলুল­াহ (স.)-এর ইন্তেকালের পর মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ওহি লেখকদের ডেকে এনে লেখাগুলোকে যাচাই-বাছাই করে পবিত্র কোরআন শরীফের আকারে সংকলন করে রাষ্ট্রীয় মহাহেফাজত খানায় সংরক্ষণ করেন।

২য় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতের সময় মুসলিম জাহানের সীমানা বর্ধিত হয়ে পূর্বে ইরান (পারস্য) থেকে পশ্চিমে লিবিয়া এবং উত্তরে আর্মেনিয়া আজারবাইজান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।

এতে বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন ভাষা ও উচ্চারণ থাকার কারণে পবিত্র কোরআন পাঠ ও উচ্চারণ অভিন্ন রাখার জন্য তিনি দশজন আরবী ভাষা শুদ্ধ উচ্চারণ বিশেষজ্ঞ সাহাবীদের মুসলিম জাহানের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠালেন।

হযরত ওমর (রা.) ইন্তেকালের পর হযরত ওসমান (রা.) ৩য় খলিফা হিসাবে স্থলাভিষিদ্ধ হওয়ার পর পবিত্র কোরআন মজিদকে বাঁধাইকৃত গ্রন্থরূপে সংকলনের জন্য ১২ জন সাহাবী সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করেন।

তারা দীর্ঘদিন ধরে পবিত্র কোরআন শরীফের সংকলনটি যাচাই-বাছাই করে পুনরায় একটি ‘মুসহাফ’ প্রস্তুত করে খলিফা আবু ওসমান (রা.)-এর নিকট দাখিল করেন। এই মসহাফই গ্রন্থকারে বর্তমানে পবিত্র কোরআন শরীফ।

মহান আল­াহ পাক বলেছেন, পবিত্র কোরআন শরীফ পাঠ করা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য একান্ত ফরজ কাজ, কেবল মধুর সুরে কোরআন মজিদ পাঠ করলেই চলবে না, পাঠ করার সাথে এর অর্থ বুঝে নিজ জীবনে প্রতিফলিত করতে হবে।

পবিত্র কোরআন মজিদ-এর প্রকৃত অর্থ না বুঝলে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআন মজিদ মহান আল­াহতায়ালা আরবী ভাষায় নাজিল করেছেন। আরবী আমাদের মাতৃভাষা নয়।

আমরা প্রতিদিন সোবেহ-সাদেকে ফজরের নামাজ শেষে মুক্ত মনে সুর করে পবিত্র কোরআন শরীফ পড়ে এর প্রকৃত অর্থ না বুঝেই চুমু খেয়ে ঘরের কোণে উঁচু শেলফে রেখে দেই। পবিত্র কোরআন মজিদ শুধু আক্ষরিকভাবে সুর করে পড়ার জন্য মহান আল­াহ পৃথিবীতে নাজিল করেননি।

বান্দারা এই আসমানি কিতাব পড়ে এর অর্থ অনুধাবন করে নিজ জীবনে প্রতিফলিত করে, সে জন্যই মহান আল­াহ এই মহান আসমানি কিতাব অর্থাত পবিত্র কোরআন শরীফ পৃথিবীর বুকে নাজিল করেছেন। ইহকালীন জীবন ও পরকালীন জীবনের জন্য বান্দাদের যা যা করণীয়, তার সব কিছুরই নিদর্শন রয়েছে এই পবিত্র (কোরআন মজিদে বিদ্যমান)।

ইহকালীন জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে বান্দাদের পবিত্র কোরআন মজিদে উলে­খিত নির্দেশগুলো আমল করতে হবে। এই নির্দেশের মধ্যে অন্যতম হলো সত্কর্ম ও প্রচুর জ্ঞান আহরণ। তদ্রূপ পরকালীন জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে পবিত্র কোরআন মজিদে পরকালীন জীবনের জন্য কি কি অবশ্যই করণীয় সেগুলো আমলে নিয়ে মান্য করলেই পরকালীন জীবনেও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তাই আমাদের (মুসলমান ভাই বোনদের) পবিত্র কোরআন শরীফের অর্থ বুঝে পড়া এবং নিজ জীবনে তা প্রতিফলন করা উচিত।

শেয়ার করুন: