ফ্রিল্যান্সিংয়ে হালাল-হারামের মূলনীতি

মাওলানা মিরাজ রহমান: ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা সিস্টেমে চাকরি বা কাজ করার হুকুম কী? এ ধরনের পেশার ক্ষেত্রে কাজ হারাম ও হালাল হওয়ার পেছনে কোন দিকগুলো সম্পৃক্ত হতে পারে? বিশেষত গ্রাফিক্স ডিজাইন, সৃজনশীল লেখালেখি, গবেষণা ও নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট এ জাতীয় সেক্টরগুলোতে?

উম্মতে মুসলিমার ওপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ হচ্ছে- হালালের পরিধিকে বিস্তৃত করা এবং হালালকে মূল ও প্রধান হিসেবে সাব্যস্ত করা এবং হারামকে সংকীর্ণ করা। তিনি হারামকে রেখেছেন বিরল ও ব্যতিক্রম হিসেবে। আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে বলেন, আল্লাহ ইচ্ছে করেন তোমাদের কাছে বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে। আর আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আর আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান। আর যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হও। আল্লাহ্‌ তোমাদের ভার কমাতে চান; আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলরূপে। [সূরা নিসা, আয়াত: ২৬-২৮]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। [সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৫]

আল্লাহ আরও বলেন, আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা করতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। [সূরা মায়েদা, আয়াত: ০৬]

ইমাম শাতেবি (রহ.) বলেন, (লেনদেন ও স্বভাবগত বিষয়ের ক্ষেত্রে) মূলনীতি হচ্ছে- অর্থের দিকে দেখা; ইবাদতের ক্ষেত্রে নয়। লেনদেনের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে- যে কোন বিষয়ে সাধারণ অনুমতি থাকা; যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন দলিল এর বিপরীত কিছু প্রমাণ করে। [আল-মুওয়াফাকাত (১/৪৪০) থেকে সমাপ্ত]

অতএব, আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স, লেখালেখি, গবেষণা করা, ডেভেলপ করা, সৃজনশীল-সাংস্কৃতিক-শিক্ষণীয় কর্মে কোন বাধা নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- কাজের মধ্যে একটি আদর্শিক মেসেজ থাকা চাই। সে মেসেজ হতে পারে— মানুষকে সুখী করা, তাদের জন্য জীবন ধারণের উপকরণগুলো সহজ করা কিংবা মানুষের মাঝে সত্য-সঠিক ও ন্যায়-নীতির প্রসার ঘটানো কিংবা তাদেরকে শিক্ষিত করে তোলা অথবা দীন-দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়ানো। এগুলো ভাল মেসেজ; ফ্রিল্যান্সিং কাজের মধ্যে এমন ভালো মেসেজগুলো থাকা উচিত। আর যেসব সৃজনশীল কর্মের সাথে হারাম ম্যাসেজ বা হারাম কাজে সহযোগিতার বিষয় সম্পৃক্ত হতে পারে সেগুলো থেকে দূরে থাকা। যেমন- কোন অশ্লীল ছবির ডিজাইন করা, যৌন সূড়সূড়িমূলক কোনো কাজকে প্রমোট করা, অশ্লীলতা প্রসারে অংশ গ্রহণ করা কিংবা হারাম কিছু বিক্রি করা ইত্যাদি।

মূল কথা হলো ইসলাম নির্দিষ্ট হারাম যে কোনো কাজ করা বা যে কোনো হারাম কাজের সহযোগিতা করা অনলাইন ও অফলাইন সব ক্ষেত্রে হারাম। আর হালাল যে কোনো কাজ করা বা হালাল কাজের সহযোগিতা অনলাইন ও অফলাইন সব ক্ষেত্রেই হালাল-বৈধ।ফ্রিল্যান্সিংয়ে হালাল-হারামের মূলনীতি

শেয়ার করুন: