এক দরবেশের কুকুরে পরিণত হওয়ার ঘটনা!

প্রত্যেক কোন অলী-আল্লাহ্‌ এমনও মরতবা পেয়েছেন যে, প্রত্যেক,দিনই স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর সাক্ষাৎ লাভ করতেন। তাঁদেরকে “সাহেবে হুজুরী” বলা হয়।

তন্মদ্ধে হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)’ও ছিলেন।তিনি যখন মদীনায়ে মোনায়ারায় ইলমে হাদীসের অধ্যয়ন সুসম্পন্ন করলেন,তখন তাঁকে স্বপ্নে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই নির্দেশ দান করলেন, তুমি হিন্দুস্তানে গমন কর এবং ইলমে হাদীসের প্রচারে আত্মনিয়োগ কর,যেন সেখানে লোকেরা উপকৃত হয়।

তিনি আরয করলেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম),হিন্দুস্তানে গমন করলে আপনার দরবারে কিভাবে হাজির হবো? আর আপনার দরবারে হাজির হতে না পারলে কি করে বাঁচবো?”

তখন হুকুম হল, “তুমি ব্যাকুল হয়োনা। রাতে মোরাকাবা কর, আমার নিকট পৌছে যাবে। প্রত্যেক দিনই তুমি সাক্ষাৎ লাভ করবে।”এভাবে নিশ্চিন্ত হবার পর যখন তিনি হিন্দুস্তানে রওনা দিলেন; তখন হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে নির্দেশ দিলেন,হিন্দুস্তানে যারা আল্লাহ্‌ ওয়ালা রয়েছে তাঁদের দিকে নজর রেখো।

এ নির্দেশটির একটা বিশেষ প্রতিক্রিয়া হল হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) উপর। তাই হিন্দুস্তানের যে কোন স্থানে তিনি গমন করতেন,সেখানে যদি কোন আল্লাহ্‌ ওয়ালা লোক থাকতেন, তবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন।

হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “আখবারুল আখিইয়ার ফি আছরারিল আবরারে” হযরত আব্দুল ওহাব মনভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)’এর অবস্থা লিপিবদ্ধ করেছেন।একবার তাঁর সাথে এস্তেদরাজ সম্পর্কে কথা হয়েছে। তিনি বললেনঃ “পথভ্রষ্ট,বে-দ্বীন এবং

বেদআতীদেরও এমন শক্তি অর্জিত হয় যে,তারা মানুষের মনকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে এবং শরীয়তের পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে।”এরপর হযরত শেখ তাঁর একটি ঘটনা বর্ণনা করলেন,একবার আমার দাক্ষিণাত্যের একটি শহর গমন করার সুযোগ হয়েছিল। শহরের প্রধান বিচারপতি ছিলেন কাজী আব্দুল আযীয। তিনি শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন।

আমি কাজী সাহেবকে বললাম যে, যদি শহরে কোন ফকীর দরবেশ থাকে, আমাকে বলবেন আমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবো। তিনি বললেন, এক ব্যক্তি এ শহরে রয়েছে। তবে তার শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপের কারনে আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট নই।কাজী সাহেবের প্রদত্ত ঠিকানা মোতাবেক ফজরের নামাজের সময় আমি সে দরবেশের খিদমতে হাজির হলাম।

আমাকে দেখেই ফকীর বলল,মওলবী আব্দুল হক, আপনার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। যখন আমি বসলাম তখন কুশলাদি জিজ্ঞাসা করার পর সেই ফকীর বোতল বের করে এক গ্লাস নিজে পান করলো এবং আর এক গ্লাস আমাকে দিলো।

আমি বললাম,আমি তোমার কাজে প্রশ্ন করছি না তবে আমার জন্য এ বস্তু হারাম। এভাবে আমি তিনবার অস্বীকার করলাম। সে বলল, পান কর। অন্যথায় তোমাকে আক্ষেপ করতে হবে।রাত্রে যখন আমি মোরাকাবায় বসলাম তখন দেখলাম প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম)’এর দরবারের তাবু রয়েছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি সাক্ষাৎ দিতে কিন্তু ফকীর আমাকে বাধা দিয়েছে। অবশেষে আমি ফেরত এসেছি। সকালে ফকীরের নিকট পুনরায় গমন করলাম। সে আমার সম্মুখে সেই হারাম বস্তুর পান-পাত্র রেখে দিলো। আমি বললাম এটি আমার জন্য হারাম।

আল্লাহ্‌ তা’আলা ও তার হাবীব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর হুকুমের সামনে তোমার হুকুমের কোন গুরুত্ব নেই। সে বললঃ পান করো অন্যথায় আক্ষেপ করবে। রাত্রে সেই ঘটনাই যা পূর্বের রাত্রে ঘটেছিল।

তৃতীয় দিন আমি ফকীরের নিকট গমন করলাম। সে পান-পাত্র পেশ করলো। কিন্তু আমি তা গ্রহণে অস্বীকার করলাম। চতুর্থ রাত্রে আমি রাত্রে আমি যখন মোরাকাবা করে দরবারে নববীতে হাজিরী দিতে ইচ্ছা করলাম, ঐ ফকীর বাধা দিলো এবং লাঠি নিয়ে দ্রুত বেগে আমার দিকে অগ্রসর হয়ে বললঃ খবরদার! এক কদমও সামনে আসবে না।

ঐ সময় আমি অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়লাম।তখন আমার রসনা থেকে এই বাক্যটি বের হলঃ “ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল গিয়াস!”ঠিক ঐ মুহূর্তে হযরত রাসুলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সাহাবীকে লক্ষ্য করে এরশাদ করলেন,

“আব্দুল হক গত চার রাত থেকে উপস্থিত হয়নি। দেখ বাইরে কে ডাক দিচ্ছে, তাকে ডাকো।” সেই সাহাবী আমাকে এবং সেই ফকীরকে হাজির করলেন।তখন হুজুর (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেনঃ “আব্দুল হক,তুমি গত চার রাত কোথায় ছিলে?”আমি গত চার রাতের সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম।

তখন তিনি ঐ ফকীরকে লক্ষ্য করে বললঃ “হে কুকুর! যাও”।সকালে আমি তার নিকট রওনা হলাম, দেখি যে তার কক্ষটি বন্ধ রয়েছে। দু”চার জন মুরীদ বসে আছে।আমি বললাম, কি ব্যাপার? ফকীরের দুয়ার এখনও খুলেনি? দুয়ার খুলে দেখা গেল ফকীর সেখানে নেই।

হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বল্লেনঃ “এখান থেকে কোন জীব-জন্তু বেরিয়ে গেছে?”লোকেরা বলল, “একটা কালো কুকুর এখান থেকে যেতে দেখেছি।”হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বল্লেনঃ “সেইতো তোমাদের পীর ছিল।

রাত্রে এ ঘটনা ঘটেছে। তোমাদের পীর কুকুরে পরিণত হয়েছে। এখন তোমাদের ইচ্ছা, তোমরা তার মুরীদ থাকবে না মুরীদী বর্জন করবে?”তখন সমস্ত লোক তওবা করলো এবং হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)’এর মুরীদ হল। (আল বালাগুল মুবিন)

শেয়ার করুন: