জিন

জ্বীনদের সাথে মানুষের বিয়ে হালাল না হারাম?

জ্বীন জাতি সম্পর্কে অনেকেরই আগ্রহ। জ্বীনরা কেমন কি খায়, তাদের জীবন যাত্রা কিরকম। বিশেষ করে আল-কোরানে সূরা জ্বীন নাযিল হবার পর সাহাবীদেরও জ্বীনদের প্রতি কৌতূহল দেখা গিয়েছিল। আমি এখানে মুসলিম বিশ্বের প্রবাদ পুরুষ আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি (রহঃ) জ্বীন জাতিকে নিয়ে লেখা লাক্বতুল মারজ্বানি ফী আহকামিল জ্বান্ন নামক আরবী গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ “জ্বীন জ্বাতির বিস্ময়কর ইতিহাস” বইটি থেকে ও আরো কিছু সহীহ হাদীস থেকে জ্বীন জাতি সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করব। এই বইটি মদীনা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান। এখানে বলে রাখা ভাল অনেক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যেমন অবলোহিত, মাইক্রো ওয়েভ, X-Ray, গামা রশ্মি আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা।

জ্বীন ফেরেশতা হয়ত এমন কোন সূক্ষাতি সুক্ষ তরঙ্গ যাদেরকে কোন যন্ত্রপাতি দ্বারাও দেখা যাবে না। জ্বীন শব্দের মোটামুটি অর্থ গুপ্ত, অদৃশ্য, লুকায়িত। শয়তানরাও হল একপ্রকার জ্বীন যারা আল্লাহর অবাধ্য এবং এরা অভিশপ্ত ইবলিশের বংশধরদের অন্তর্গত। হাদীস তত্তবীদদের মতে জ্বীনদের কয়েক টি শ্রেণী আছে। যেমন সাধারন জ্বীন, আমির জ্বীন এরা মানুষের সাথে থাকে, শয়তান এরা অবাধ্য, উদ্ধত, ইফরীত্ব জ্বীন এরা শয়তানের চাইতেও বিপদজনক। জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদম আঃ এর ২০০০ বছর পূর্বে।

জ্বীন জাতির আদি পিতা (আবূল জিন্নাত) সামূমকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আগুণের শিখা দ্বারা তৈরী করার পর আল্লাহ সামূমকে বলেন তুমি কিছু কামনা কর। তখন সে বলে আমার কামনা হল আমরা মানুষ কে দেখব কিন্তু মানুষরা আমাদের দেখতে পারবে না। আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয় মৃত্যুর পূর্বে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তায়ালা জ্বীন দের এই দুইটি ইচ্ছাই পূরণ করেন। জ্বিনরা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর পূর্বে আবার যুবক হয়। জ্বীন রা আগুণের তৈরী হলেও এরা মূলত আগুণ নয়। যেমন মানব সৃষ্টির মূল উপাদান কাদামাটি হলেও মানুষ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কাদামাটি নয়। ঠিক তেমনি জ্বিনের পূর্ব পুরুষ আগুণের তৈরী হলেও জ্বীন মানেই আগুন নয়। এর প্রমাণ মুসনাদ আহমদে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস- “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন শয়তান নামাযের মধ্যে আমার সাথে মুকাবেলা করতে আসে তখন আমি তার গলা টিপে দেই। তখন আমি শয়তানের থুথুর শীতলতা নিজের হাতেও অনুভব করছি। ” সুতরাং শয়তান বা জ্বীন যদি দাহ্য আগুণ হয় তাইলে তার থুথু ঠান্ডা হতে পারে না।

আশাকরি আপনারা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। অনেকের মাঝে একটা প্রশ্ন আসে যে জ্বীনরা যদি আগুনের তৈরী হয় তাইলে কিভাবে জ্বীন রা জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। আমি প্রথমেই বলেছি যে জ্বীনদের আদিপিতা আগুন দ্বারা তৈরী হলেও জ্বীনরা মূলত আগুণ নয়। জ্বীনদের শরীর মূলত খুব সূক্ষাতি সূক্ষ। জ্বীনরা চাইলে যেকোন কঠিন পদার্থের বাধা অতিক্রম করতে পারে। তাই জাহান্নামের আগুন দ্বারা জ্বীনদের ঠিকই কষ্ট হবে। জ্বীন দের কে আল্লাহপাক বিশেষ কিছু কথা ও কাজ শিখিয়ে দিয়েছেন যার দ্বারা জ্বীনরা চাইলে এক আকার থেকে আরেক আকারে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে জ্বীন দের কাছে সবচেয়ে প্রিয় আকার হল সাপের আকার। জ্বীনরা বেশিরভাগ সময় সাপের আকারে চলাফেরা করতে পছন্দ করে।

জ্বীনদের খাবার হল শুকনা হাড় ও গোবর। সহীহ হাদীসে শুকনা হাড় ও গোবর দ্বারা এসেঞ্জা করতে নিষেধ করা আছে। হাদিসে বলা হয়েছে এ দুটা হল জ্বীনদের খাবার। জ্বীন দের সাথে মানুষের বিয়ে হওয়া সম্ভব। সহীহ হাদিসে বলা আছে যে রাণী বিলকিসের পিতা মাতার মধ্যে একজন ছিল জ্বীন। তবে জ্বীনদের সাথে মানুষের বিয়ে হালাল না হারাম এ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ আছে। তবে বেশিরভাগ আলেমদের মতে জ্বীন বিয়ে করা মাকরুহ। অনেক অন্ধ বুযুর্গ জ্বীন মেয়েকে বিয়ে করেছেন।যেন সফরে ঐ বুযুর্গের হাটা চলায় সুবিধা হয়। তবে জ্বীনরা যদি চায় তাইলেই মানুষ জ্বিনদেরকে দেখতে পারে। জ্বীন দের সাথে মানুষের উটাবসা, বিয়ে শাদি এটা পুরাটাই জ্বীনদের ইচ্ছা। মানুষের মাঝে যেমন বিভিন্ন ফেরকা, মাযহাব আছে ঠিক তেমনি জ্বীন দের মাঝেও বিভিন্ন দল মত আছে। অনেক জ্বীন সাহাবী ছিলেন। সীরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পরে প্রথমে ফেরেশতারা এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দেয় এরপরে জ্বীনেরা এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দেয়।

3 দিন পূর্বে উত্তর প্রদান করেছেন Ferdausi 1 টি পছন্দ 0 জনের অপছন্দ কুরআন অনুসারে জিন জাতি মানুষের ন্যায় আল্লাহ্‌ তা'য়ালার এক সৃষ্ট একটি জাতি যারা পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই তারা ছিল এবং এখনো তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে মানুষের চর্মচক্ষে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়।

তবে জিনরা মানুষকে দেখতে পায়। তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। তাদেরও সমাজ রয়েছে। তারা আয়ূ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।উদাহরনস্বরূপ, তারা ৩০০ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ঈমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে জিন জাতি তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে।

ইসলামের মতে জিন জাতি এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরা আল জ্বিন এ শুধু জিনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাস এর শেষ অংশে জিন জাতির উল্লেখ আছে।কুরআনে আরো বলা আছে হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে জিন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আ:) এর সেনাদলে জিনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে। ইসলামে আরো বলা আছে "ইবলিশ" তথা শয়তান প্রকৃতপক্ষে জিন জাতির একজন ছিল। ইসলামের মতে, শয়তান হচ্ছে দুষ্ট জিনদের নেতা। ইবলিশ বা শয়তান ছিল প্রথম জিন যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।

কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ইবলিশ এক সময় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিল । কিন্তু আল্লাহ যখন হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন হিংসা ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে ইবলিশ আল্লাহর হুকুম অমান্য করে। এ কারণে ইবলিশ কে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর থেকে তার নামকরণ হয় শয়তান। ইসলাম পূর্ব আরব উপকথা গুলোতে জ্বিন সদৃশ সত্ত্বার উল্লেখ আছে। প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগণ জিন নামক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতো। তাদের মতানুসারে নানাপ্রকারের জিন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, ঘুল (দুষ্ট প্রকৃতির জিন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো) এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জিন আছে যারা জিন দের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রাচীন আরবদের মতে জিন রা আগুনের তৈরি।

উল্লেখ্য যে, আরব্য রজনীর কাহিনীর মতো সবসময় জিন অসাধ্য সাধন করতে পারে না। কেননা ঝড়-বাদলের দিনে জিনরা চলতে পারে না। কারণ তারা আগুনের তৈরি বিধায় বৃষ্টির সময় আয়োনাজাইশেন ও বজ্রপাতের তীব্র আলোক ছটায় তাদের ক্ষতি হয়ে থাকে এবং কোন ঘরে যদি নির্দিষ্ট কিছু দোয়া-কালাম ও কাঁচা লেবু থাকে, তাহলে ঐ ঘরে জিন প্রবেশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর একটি কথা মানুষ মাটি দিয়ে সৃষ্টি হলেও, শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কারণ মানুষ মূলত মাটি, পানি, বায়ু ও অগ্নির সংমিশ্রণ। আর তাই জিন আগুনের শিখা দিয়ে পয়দা হলেও তাদের দেহে জলীয় পদার্থের সমাবেশ লক্ষণীয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি হলো: রসুল (স.) একদা উল্লেখ করেছিলেন যে, শয়তান বলে একটি জিন একদা নামাজের সময় তাঁর সাথে মোকাবিলা করতে এলে তিনি ঐ জিনকে গলা টিপে ধরলে, সেইক্ষণে জ্বিনের থুথুতে শীতলতা অনুভব করেছিলেন।[সুরা সাদ ৩৮:৩৫] এতে প্রতীয়মান হয় যে, জিন যদি পুরোপুরি দাহ্য হতো, তাহলে ঠাণ্ডা থুথুর থাকার কথা নয়। এদিকে জিন তিন প্রকারের আওতায় বিদ্যমান, প্রথমত. জমিনের সাপ, বিচ্ছু, পোকা-মাকড়, ইত্যাদি; দ্বিতীয়ত. শূন্যে অবস্থান করে এবং শেষত সেই প্রকারের জিন, যাদের রয়েছে পরকালে হিসাব।

পূর্বেই বলেছি, এরা সূক্ষ্ম, তাই স্থূল মানুষ বা পশু-পাখি জিনদের দেখতে পারে না। তবে কুকুর ও উট এদের হুবহু দেখতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, রাতে কোন অপরিচিত বস্তু বা জীব চোখে না দেখা গেলেও কুকুর কি যেন দেখে ছুটাছুটি ও ঘেউ ঘেউ করলে তাতে জ্বিনের আবির্ভাব হয়েছে বলে বুঝতে হবে। জিন বহুরূপী। এরা মানুষ, পশু-পাখি, ইত্যাদি যে কোন সুরত ধরতে পারে। সেই ক্ষণে উক্ত জীবের বৈশিষ্ট্যের আদলে তার ঘনত্ব কম-বেশি হয়ে থাকে এবং মানুষের দৃষ্টির মধ্যে আসে।

জ্বীন জাতির পিতার নাম কি? জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদম আঃ এর ২০০০ বছর পূর্বে। জ্বীন জাতির আদি পিতা (আবূল জিন্নাত) সামূমকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আগুণের শিখা দ্বারা তৈরী করার পর আল্লাহ সামূমকে বলেন তুমি কিছু কামনা কর। তখন সে বলে আমার কামনা হল আমরা মানুষ কে দেখব কিন্তু মানুষরা আমাদের দেখতে পারবে না। আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয় মৃত্যুর পূর্বে।

জ্বীনদের সাথে মানুষের বিয়ে হালাল না হারাম? জ্বীনদের সাথে মানুষের বিয়ে হালাল না হারাম এ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ আছে। তবে বেশিরভাগ আলেমদের মতে জ্বীন বিয়ে করা মাকরুহ। অনেক অন্ধ বুযুর্গ জ্বীন মেয়েকে বিয়ে করেছেন।যেন সফরে ঐ বুযুর্গের হাটা চলায় সুবিধা হয়। তবে জ্বীনরা যদি চায় তাইলেই মানুষ জ্বিনদেরকে দেখতে পারে। জ্বীন দের সাথে মানুষের উটাবসা, বিয়ে শাদি এটা পুরাটাই জ্বীনদের ইচ্ছা।
প্রত্যেক মানুষের সাথে কি জিন থাকে?

প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে স্বতন্ত্র একজন করে জিন রয়েছে যাকে ক্বারিন (সঙ্গী) বলা হয়। এটা মানুষের এই জীবনের পরীক্ষার অংশ বিশেষ। জিনটি তাকে সর্বদা অবমাননাকর কামনা-বাসনায় উৎসাহিত করে এবং সার্বক্ষণিকভাবে তাকে ন্যায়-নিষ্ঠা হতে অন্য দিকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করে।

রাসুল (সঃ) এই সম্পর্ককে এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, “তোমাদের প্রত্যেককে জিনদের মধ্য হতে একজন সঙ্গী দেয়া হয়েছে।” সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এমনকি আপনাকেও ইয়া আল্লাহর রাসুল (সঃ)? তিনি বলেনঃ এখন সে আমাকে শুধু ভাল করতে বলে।” [মুসলিম কর্তৃক সংগৃহীত Sahih MusliM, enlgishtrans, vol. 4 p.1540 , no. 7134]

জিন ছাড়ানোর জন্য পশু পাখী জবেহ করা কি শরীয়ত সম্মত? জবেহর মাধ্যমে জীনকে সন্তষ্ট করে তাকে সরে যেতে বলা শিরক। যেহেতু আল্লাহ ছাড়া আর কারোর সন্তুষ্টি লাভের জন্য জবেহ বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন, বল, “ নিশ্চয় আমার নামায, আমার উপাসনা (কুরবানি), আমার জীবন, আমার মরণ, বিশ্ব-জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।” (আনআমঃ ১৬২)

আর নবী (সঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তাকে অভিশাপ করেন (বা করুন), যে গায়রুল্লাহর জন্য জবেহ করে।” (মুসলিম ১৯৭৮ নং)
জিন ছাড়াতে কি আগুন ব্যবহার করা যায়?

জবেহর মাধ্যমে জীনকে সন্তষ্ট করে তাকে সরে যেতে বলা শিরক। যেহেতু আল্লাহ ছাড়া আর কারোর সন্তুষ্টি লাভের জন্য জবেহ বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন, বল, “ নিশ্চয় আমার নামায, আমার উপাসনা (কুরবানি), আমার জীবন, আমার মরণ, বিশ্ব-জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।” (আনআমঃ ১৬২)

আর নবী (সঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তাকে অভিশাপ করেন (বা করুন), যে গায়রুল্লাহর জন্য জবেহ করে।” (মুসলিম ১৯৭৮ নং)

জিন কত প্রকার? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেছেন: জিন তিন প্রকার। এক. যারা শূন্যে উড়ে বেড়ায়। দুই. কিছু সাপ ও কুকুর। তিন. মানুষের কাছে আসে ও চলে যায়। (সূত্র : তাবারানী। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ আল জামে আস সাগীর, হাদীস নং ৩১১৪, আবু সালাবা আল খাশানী রা. থেকে বর্ণিত।) (মুজামু আলফাজ আল-আকীদাহ) জিন বিভিন্ন প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। কিন্তু তাদের একটি গ্রুপ সর্বদা সাপ ও কুকুরের বেশ ধারণ করে চলাফেরা করে মানব সমাজে। এটা তাদের স্থায়ী রূপ।

জিন ও ভূতের মধ্যে পার্থক্য কি? জিন আরবী শব্দ। বাংলাতেও জিন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ভূত বাংলা শব্দ। এর আরবী হল ইফরীত, বহুবচনে আফারীত। আল কুরআনে ইফরীত কথাটি এসেছে এভাবে : قَالَ عِفْريتٌ مِنَ الْجِنِّ أَنَا آَتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ تَقُومَ مِنْ مَقَامِكَ وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।(সূরা আন-নামলঃ ৩৯ )

এ আয়াতে ইফরীতুম মিনাল জিন অর্থ্যাৎ জিনদের মধ্যে থেকে এক ইফরীত বা ভূত .. কথাটি এসেছে। এমনিভাবে উপরে বর্ণিত হাদীসেও ইফরীতুম মিনাল জিন কথাটি এসেছে। তাফসীরবিদগণ বলেছেন, জিনদের মধ্যে যারা অবাধ্য, বেয়ারা, মাস্তান, দুষ্ট প্রকৃতির ও শক্তিশালী হয়ে থাকে তাদের ইফরীত বলা হয়। (আল মুফরাদাত ফী গারিবিল কুরআন)

ইফরীত শব্দের অর্থ বাংলাতে ভূত। অতএব দেখা গেল ইফরীত বা ভূত, জিন ছাড়া আর কিছু নয়। সব ভূতই জিন তবে সব জিন কিন্তু ভূত নয়।

প্রত্যেক মানুষের সাথে কি জিন থাকে? প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে স্বতন্ত্র একজন করে জিন রয়েছে যাকে ক্বারিন (সঙ্গী) বলা হয়। এটা মানুষের এই জীবনের পরীক্ষার অংশ বিশেষ। জিনটি তাকে সর্বদা অবমাননাকর কামনা-বাসনায় উৎসাহিত করে এবং সার্বক্ষণিকভাবে তাকে ন্যায়-নিষ্ঠা হতে অন্য দিকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করে। রাসুল (সঃ) এই সম্পর্ককে এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, “তোমাদের প্রত্যেককে জিনদের মধ্য হতে একজন সঙ্গী দেয়া হয়েছে।” সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এমনকি আপনাকেও ইয়া আল্লাহর রাসুল (সঃ)? তিনি বলেনঃ এখন সে আমাকে শুধু ভাল করতে বলে।” [মুসলিম কর্তৃক সংগৃহীত Sahih MusliM, enlgishtrans, vol. 4 p.1540 , no. 7134]

শেয়ার করুন: