বড়ই আজব এক চিরিয়াখানা

একটি চিড়িয়াখানায় গেলেন, সেখানে গিয়ে দেখলে, একজন নারীর কোলে বসে আছে ফুটফুটে এক সাদা বক। আবার তার পাশেই অন্য এক নারীর সঙ্গে খেলছে দুষ্টু হরিণের দল আর দৌড়াচ্ছে তেজি ঘোড়া। সেখান থেকে হেঁটে একটু এগিয়ে গেলে। দেখলে সেখানে ইয়া বড় বাঁশ ঝাড়। সেখানে দুই গরিলা খাবার খুঁজছে। সেই চিড়িয়াখানায় কিন্তু একটা কলাবাগানও আছে।

সেই কলাবাগানে শিম্পাঞ্জির দল পাকা কলা না পেয়ে খুব হতাশ হয়ে বসে আছে। অথচ বেজায় ফূর্তিতে আছে লেমুরের দল এবং ময়ূর- এসব দেখে নিশ্চয়ই তুমি খুব অবাক হবে। এবার তাহলে শোনো বলছি, এতক্ষণ তোমরা যে সাদা বক, হরিণ, শিম্পাঞ্জি, ময়ূরের কথা শুনলে সেগুলো যদি হয় গাছ দিয়ে বানানো তাহলে কি আরও অবাক হবে না?

অবাক তো হওয়ারই কথা। তেমনই এক অবাক করা চিড়িয়াখানা রয়েছে কানাডার মন্ট্রিলে। শুধু অবাকই নয়, এত মজার চিড়িয়াখানা মনে হয় আর কোথাও নেই! এটি আসলে ঠিক চিড়িয়াখানা নয়, একটি উদ্যান বা ‘থিম পার্ক’।

এই থিম পার্কে গরিলা, বানর, শিম্পাঞ্জি, হরিণ সবই আছে। তবে এরা জীবন্ত প্রাণী নয়। জীবন্ত গাছ দিয়ে বানানো হয়েছে এদের। একটু আগে যে প্রাণিগুলোর কথা বললাম জানতে চাও সেগুলো কী ধরনের গাছ দিয়ে তৈরি? বলছি শোনো, নারী আর সাদা বকের নকশা করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ কেটে।

ক্যাক্টাস প্রজাতির গাছ দিয়ে নকশা করা হয়েছে হরিণ আর ঘোড়ার। পাতাবাহার গাছ দিয়ে করা হয়েছে গরিলা। আবার সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য করতে গাছ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রাণির মুখ ও নখও বসানো হয়েছে। সেগুলো অবশ্য গাছ দিয়ে নয় আলাদাভাবে প্লাস্টিক দিয়ে বানানো।

কানাডার মন্ট্রিলে ‘মোসাকালচারস ইন্টারন্যাশনাল ডি মন্ট্রিল’ নামে এই উদ্যানে বিশ্বের ২৫টি দেশের ২২ হাজারেরও বেশি প্রজাতির গাছ আছে। থিম পার্কটিতে ৩০টি আলাদা আলাদা থিম বাগান আছে।

তবে শুধু শুধু গাছ দেখতে এত মজা লাগে না। তাই গাছগুলোকে বিভিন্ন প্রাণির আদলে বানানো হয়েছে। প্রতিবছর উদ্যান নকশাবিদদের মধ্যে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এখানে।

২০১৩ সালের প্রতিযোগিতার শিরোণাম ছিল ‘ল্যান্ড অব হোপ’ অর্থাৎ ‘আশার পৃথিবী’। তবে এর শুরুটা হয় সেই ২০০০ সালে। সে বছর ১৪টি দেশের ৩৫টি শহরের আদলে বিভিন্ন নকশা দিয়ে এ উদ্যানের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিবছর উদ্যানে স্থাপত্যের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন অনেক।

মানব জাতির সঙ্গে প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণীদের মধুর যোগসূত্র তুলে ধরে এই উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে বিশ্বের পরিচিত প্রাণিদের সঙ্গে স্থান পেয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিও।

অনেক নক্সার উচ্চতা ৫০ ফুটের মতো যা দর্শণার্থীদের অবাক না করে পারে না। এ উদ্যানটি সব বয়সীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক পর্যটন স্থান হলেও বিশেষ করে শিশুরা এখানে পায় প্রকৃতির আসল মজা। তাই পশুপাখি ও উদ্ভিদ চিনতে হলে ও জানতে হলে চলে যাও কানাডার এই থিম পার্কে।

শেয়ার করুন: