মার্ক সল - Merc Sol.

'মার্ক সল' হোমিওপ্যাথিক: ব্যবহার, উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

মার্ক সল (Merc Sol / Mercurius solubilis / Mercurius Solubilis) ঔষধটি পানি বসন্তের শেষের দিকে খাওয়াতে হয়, যখন ফোষ্কা উঠা শেষ হয়ে যায় এবং পাকতে শুরু করে। এটি ফোস্কাতে পূঁজ হওয়া বন্ধ করে এবং এন্টিবায়োটিকের মতো ফোষ্কা শুকিয়ে আরোগ্য করে। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু রোগী আরাম পায় না, ঘামে দুর্গন্ধ বা মিষ্টি গন্ধ থাকে, রোগী ঠান্ডা পানির খাওয়ার জন্য পাগল, রোগের উৎপাত রাতের বেলায় বেড়ে যায়, মুখ থেকে লালা ঝরে ইত্যাদি।

Mercurius solubilis / Mercurius Solubilis – মার্ক সল যে ফোড়া বা ঘায়ে পুঁজ হয়ে গেছে, তাতে মার্ক সল প্রযোজ্য। মার্ক সলের ব্যথা রাতের বেলা বৃদ্ধি পায়। দাঁতের মাড়িতে ঘা বা ফোড়া হলে মার্ক সলের কথা এক নাম্বারে চিন্তা করতে হবে। মার্ক সল নিম্নশক্তিতে খেলে সেটি ফোড়াকে পাকিয়ে সারাবে আর উচ্চশক্তিতে খেলে না পাকিয়ে সারিয়ে থাকে।

পতিশব্দ: হাইডাজিয়াম অক্সিডাম নায়গ্রাম হ্যানিমানি (ল্যাটিন), মার্কারী অক্সাইড অব ব্লাক হ্যানিমান (ইংলিশ), এমোনিয়েটেড নাইট্রেট অব মার্কারি (ইংলিশ), হ্যানিমানস কুইক সিলভার (জার্মান), মার্কুরিয়াস।

উৎস: ইহা এক প্রকার ঝাঁঝালো ধাতব স্বাদযুক্ত ধূসর কালো বর্ণের চূর্নবৎ পদার্থ। তাপ প্রয়োগে সম্পূর্ণভাবে ইহা বাষ্পীভূত হইয়া উডিয়া যায়।

আবিষ্কারক: মহত্না হ্যানিমান স্বয়ং ইহা পরীক্ষা করেন।

ক্রিয়াস্থান: শরীরের সকল স্থানের উপর ইহার ক্রিয়া প্রকাশ পায়। মিউকাস মেমব্রেন, শ্লৈষ্মিক প্রন্থি সমূহ, চর্ম, রক্ত, মাংস, মেদের উপর ইহার প্রভাব অসীম। মাংস পেশী, অস্থি ও দন্তমাড়ী।

মায়াজম: এন্টিসোরিক, এন্টি সাইকোটিক, এন্টি সিফিলিটিক।

মাসসিক লক্ষণ:
১। রোগীর মনটি অস্থির, ব্যাকুল ও ব্যস্ত নানা রকম খেয়ালে পূর্ণ।
২। লেখা পড়ায় মন বসে না, যতই বোঝানো হোক বা শাসন করা হোক।
৩। স্মৃতিশক্তির অভাব। প্রশ্ন করিলে অনেক চিন্তা করিয়া উত্তর দেয়।
৪। রোগী কলহ প্রিয়, কাহাকেও বিশ্বস করেনা।
৫। খুন জখমের কাজ রোগীর কাছে স্বাভাবিক কর্ম মনে হয়।
৬। খেয়ালের বশে রোগী জিনিসপত্র ভাঙ্গিয়া চুরমান করে, আপনজনকেও গালাগালি করে।

চরিত্রগত লক্ষণ:
১। রোগ লক্ষণ রাত্রিতে, বিছানার গরমে, বর্ষাকালে, শীতকালে এবং ঘর্ম্মে বৃদ্ধি।
২। দাঁতের বেদনা রাতিকালে বৃদ্ধি, মাড়ী ফোলা, রক্তপড়া, দাঁতের গোড়ায় ঘা, দাঁত নড়া, দাঁতের মাড়ী সরিয়া যাওয়া।
৩। জিহ্বায় ঘা, গলার ভিতরে ঘা, টনসিলে ঘা, কর্ণমূলের প্রন্থিফোলা, গলায় ফোঁড়া হওয়া।
৪। মুখ হইতে অনকরত লালা নিঃসরণ, মুখে লোণা আস্বাদ, জিহবায় প্রচুর পরিমাণ রস থাকা সত্বেও অত্যন্ত পিপাসা।
৫। আমাশয় ও রক্তমাশয় তাহাতে অত্যন্ত কোঁথনি, শূলানি ও বেগ।
৬। উদরাময় – পিত্তযুক্ত বাহ্যে, সবুজ বাহ্যে, হলদে-রঙ্গের জলের মত বাহ্যে, তাহার সহিত পেটে অত্যন্ত ব্যথা।
৭। ছোট ছোট ক্রিমি মলদ্বারে সুড়সুড় করা।
৮। গলা সুড় সুড় করিয়া কাশি, দিনের মধ্যে যে কোন সময় হোক দুই বার কাশি বৃদ্ধি।
৯। জিহবা মোটা বড় ও থলথলে, তাহাতে দাঁতের দাগ।
১০। ডিপথেরিয়া, টনসিলের প্রদাহ, আলজিব ফোলা ও বড় হওয়া।
১১। অনবরত প্রস্রাবের বেগ ও যে পরিমাণে জলপান করে তাহার অপেক্ষও প্রস্রাবের পরিমাণ অধিক হয়।
১২। শ্বেত-প্রদস্রাব রাত্রিতে বৃদ্ধি কোথাও লাগিলে চুলকায়, যোনি হাজিয়া যায়, যোনিতে টাটান বেদনা হয়।
১৩। ঋতুর সময়ে স্থনে বেদনা, রজঃস্রাবের পরিবর্ত্তে স্থনে দুগ্ধ সঞ্চয়।
১৪। দ্রুত ও তাড়াতাড়ি কথা বলে।
১৫। রাত্রিতে শুক্রস্খলন তাহাতে রক্তের দাগ।
১৬। শিশু লিঙ্গ ধরিয়া টানে, যে কোনও পীড়ায় এই লক্ষণটি পাইলে।

প্রয়োগক্ষেত্র: সিপিলিস পীড়া, প্রমেহ, গ্ল্যান্ড স্ফীতি, পুংজননেন্দ্রিয় ক্ষত, মূত্র প্রন্থি প্রদাহ, গাত্র চর্মে, স্ফোটক, মুখ ক্ষত ও জিহবা ক্ষত, অস্থির পীড়া, টনসিল প্রদাহ, চর্মরোগ, জ্বর, টাইফয়েড, সর্দ্দিজ্বর ও পিত্তজ্বর, নিমোনিয়া, দন্তের পীড়া, সর্দ্দি, কর্ণের পীড়া, লিভার পীড়া, উদরাময়, আমাশয়, স্ত্রীরোগ, বাত প্রভৃতি।

সিপিলিস: জননেন্দ্রিয়ে ক্ষত এই পীড়ার প্রধান লক্ষণ। অর্জিত আকারে সিফিলিস দোষটি দেহে অবস্থান করিলে ক্ষত প্রবল হইয়া লিঙ্গের অর্ধ অথবা সেকি ভাগ ধ্বংস হইলে মার্কসল উপযোগী। কোমল ও কঠিন উভয় ক্ষতেই ব্যবহৃত হয়।

গণোরিয়া: কিডনীতে তীক্ষ্ণ বেদনা, সময়ে সময়ে সেই বেদনা মুত্রনালীতে, অন্ডকোষে ও উরুতে পর্যন্ত পরিচালিত হয়। নাড়িতে চড়িতে, উঠিতে বসিতে, চিৎ হইয়া শুইতে কোমরে ভয়ানক যন্ত্রনা, বার বার প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছা, অল্প প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাব বন্ধ, প্রস্রাবের সময় কোঁথানি, বেগে প্রস্রাবসহ রক্ত পূঁজ শ্লেম্মা নিঃসরণ, বমি, কাঁপ দিয়ে জ্বর হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।

মুখে ক্ষত: মুখ হইতে দুর্গন্ধ বাহির হয়, জিহবা সাদা ও ময়লাবৃত, লালা নিঃসরণ হয়, লালা নিঃসরণ সত্বেও পিপাসা এবং বাম দিকে শয়নে অপারগতা।

দন্তপীড়ায়: দাঁতের মাড়ী ফোলে, রক্ত পড়ে, ঠান্ডা জল সহজ্য হয় না, মাড়ীতে ঘা হয় ক্রমশঃ মাড়ী হইতে দাঁত সরিয়া আসে। দাঁত কাল বর্ণ ও আলগা হয়, শেষে পড়িয়া যায়। পানসে দাঁত একটু স্পর্শ করিলে বা চাপে রক্ত পড়ে, মুখে দুর্গন্ধ হয়। মুখে প্রচুর দুর্গন্ধযুক্ত লালা, বিছানার গরমে যন্ত্রনার বৃদ্ধি। দন্তের সহিত আবরণীর পর্দার-প্রদাহে পাকে, পূঁজ হয়, গোড়া আলগা হয়, দাঁত বড় ও লম্ভা মনে হয় ও দেখায়।

বৃদ্ধি: রাত্রিকালে, ডান পার্শ্বে শয়নে, গরমের সঙ্গে সঙ্গে, বিছানার উত্তাপে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, বিশেষ করিয়া ঠান্ডা ও ভিজা আবহাওয়ায় ও শরৎকালে, মল ত্যাগের পূর্বে, প্রস্রাব কালে ও পরে, আলোকে।

উপশম: বাম পার্শ্বে শয়নে, বিশ্রামে, সঙ্গমের পর, কাজে নিযুক্ত থাকিলে।

পরবর্তী ঔষধ: বেলেডোনা, আর্সেনিক, কার্বোভেজ, চায়না, হিপার, রাসটক্স, লাইকোপোডিয়াম, ল্যাকেসিস, নাইট্রিক এসিড, সালফার, থুজা।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ: কার্বোভেজ, বেলেডোনা, কুপ্রাম, কোনিয়াম, ডালকামরা, হিপার, আয়োডাম, কেলি বাইক্রম, এসিড নাইট্রিক, ফাইটোলাক্কা, সিপিয়া, সালফার।
সম্পুরক ঔষধ – কেলি আয়োড।

ক্রিয়াস্থিতিকাল: ৩০ হইতে ৬০ দিন।

ব্যবহার শক্তি: ২x হইতে ২০০ শক্তি। ধতুগত অবস্থা পরিবর্তন করিতে ১এম, ১০এম, সি এম পর্যন্ত প্রয়োগ হয়।

শেয়ার করুন: