নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত সবচেয়ে কম জড়িয়েছে। প্রতিবেশীদের কাছে এখন ভারতের পরিচয় স্থিতিশীলতার স্থায়ী প্রতীক হিসেবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত শুক্রবার এ মন্তব্য করেন।
রাজধানী দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে নরেন্দ্র মোদির শাসনের ৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের ‘সাফল্য’ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ
কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এই ৯ বছরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন এসেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সব রাজনৈতিক দল ও সব সরকারের সঙ্গে একভাবে কাজ করার ক্ষমতা ও দক্ষতা আজকের ভারত আয়ত্ত করেছে। প্রতিবেশীদেরও এভাবে গড়ে তুলতে ভারত সচেষ্ট।’
কেন এ প্রচেষ্টা, তার ব্যাখ্যায় জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারতের প্রতিবেশী নীতি সবাইকে নিয়ে এগোনোর। তাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রত্যাশার অপেক্ষা না করে উদার হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। কারণ, ভারত যেভাবে উন্নতির দিকে এগোচ্ছে, তাতে নিরীহ শান্তিকামী সুপ্রতিবেশীর সাহচর্য পাওয়া খুবই জরুরি। জয়শঙ্কর বলেন, ‘সুপ্রতিবেশী এমনি এমনি হয় না। প্রতিবেশীকে তখনই কাছে পাওয়া যায়, যখন বড় শক্তিধর দেশ প্রতিবেশী দেশে লগ্নি করে। তাদের ভালোমন্দের অংশীদার হয়। সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়। আমরা ঠিক সেটাই করতে চেয়েছি।’
মোদি জমানায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে জয়শঙ্কর বৈশ্বিক রাজনীতিতে আজকের ভারতের ভূমিকার ব্যাখ্যা করেন। বৃহৎ শক্তি ভারতকে কেন সমীহ করছে, গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বিস্তারে জানান। অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থানের প্রসঙ্গ টানেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপের চোখে ভারতের গুরুত্ব পাওয়ার কারণগুলো ব্যাখ্যা করে প্রতিবেশী নীতির ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলেন। পাশাপাশি চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কেন স্বাভাবিক নয়, সেই ব্যাখ্যাও করেন।
প্রতিবেশীদের মধ্যে জয়শঙ্কর নেপাল ও শ্রীলঙ্কার উল্লেখ বিশেষভাবে করেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন, তার রপ্তানি, সর্বস্তরে যোগাযোগ বৃদ্ধির কথা বলতে গিয়ে জয়শঙ্কর প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কম জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। সব রাজনৈতিক দল ও সরকারের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করার ক্ষমতা ও দক্ষতা আয়ত্তের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সব প্রতিবেশীকে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে মোদি যে বর্ষপ্রাচীন প্রথা ভেঙে নতুন পদক্ষেপ নিতে চেয়েছেন, তার উল্লেখ করে বলেন, প্রতিবেশী নীতি এই সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য।
প্রতিবেশী নীতির ‘সাফল্য’ নিয়ে জয়শঙ্করের মন্তব্য ও ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে সাবেক কূটনীতিক দেব মুখোপাধ্যায় গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, নেপাল ও বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশীর সঙ্গেই বহুমুখী যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু অবাঞ্ছিত বিতর্কও ভারত ডেকে এনেছে। নেপাল ও বাংলাদেশ, দুই প্রতিবেশী দেশেই ভারতের রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করা এই প্রবীণ কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি অবশ্যই তিস্তা চুক্তি না হওয়া। অখণ্ড ভারতের মানচিত্র নিয়েও এই দুই প্রতিবেশী দেশে তীব্র অসন্তোষ দৃশ্যমান। সবাই যে ভারতের ওপর ভালোবেসে আস্থা রাখছে, তা বিশ্বাস করা কঠিন।
প্রতিবেশীদের মধ্যে স্থিতিশীলতার স্থায়ী প্রতীক হয়ে ওঠা সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে দেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কে পি শর্মা ওলির নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (ইউএমএল) বা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) ওই দাবির সঙ্গে সহমত হবে কি না, সে বিষয়ে আমি যথেষ্ট সংশয়ী।’ প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ক্রমেই কম জড়িয়ে পড়া সম্পর্কে জয়শঙ্করের মন্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি খুবই বিচক্ষণ কূটনীতিক। সম্ভবত এটাই তিনি বলতে চেয়েছেন, ভারত অতীতে প্রতিবেশী দেশের রাজনীতিতে স্বেচ্ছায় জড়ায়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কিংবা নেপালে মাওবাদী বিদ্রোহের মোকাবিলা অবাঞ্ছিত নাক গলানো নয়।’