মুসলমানের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত দিন জুমা। এ দিনের রয়েছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ৫ আমল। যার বিনিময়ও অসাধারণ। জুমার দিনের এ আমল ও তার বিনিময় প্রদানের কথা ঘোষণা করেছেন স্বয়ং নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কী সেই আমল ও প্রতিদান?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমরাই সর্বশেষ আগমনকারী এবং কিয়ামাতের দিন আমরাই প্রথম। যাদের জন্য (হিসাব-কিতাব ও জান্নাতে প্রবেশের) আদেশ সমস্ত সৃষ্টির পূর্বে দেয়া হবে। এ দিনের ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন- ’হে ঈমানদারগণ! জুমার দিন নামাজের জন্য যখন তোমাদের আহ্বান করা হয়; তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর। ইহা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ‘অতপর যখন নামাজ শেষ হয়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা (উত্তম রিজিক ও নেয়ামত লাভে) সফলকাম হও।' (সুরা জুমা : আয়াত ৯-১০)
বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ আমল
জুমার দিনের অনন্য আমল হলো- এ দিনের একটি আমলেই মিলবে হাজার বছরের নামাজ-রোজার সওয়াব। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ৫টি কাজ করার মাধ্যমে ১টি আমল করবে। অর্থাৎ জামআর নামাজ পড়তে আসবে। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির মসজিদে আসার প্রতি কদমে (পদক্ষেপে) ১ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াব দান করবেন। (সুবহানাল্লাহ!) তাহলো-
১. জুমার দিন গোসল করা। ২. আগে আগে মসজিদে আসা। ৩. পায়ে হেঁটে মসজিদ আসা। ৪. ইমামের কাছাকাছি বসা। এবং ৫. মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা।
আমলের সওয়াব
জুমার দিন এ পাঁচটি কাজের আমল করলে আল্লাহ তাআলা জুমা আদায়কারী ওই ব্যক্তির প্রতি কদমে (পদক্ষেপে) ১ বছরের আমলের সওয়াব দেবেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আমলের সওয়াবের বর্ণনাও দিয়েছেন অন্য হাদিসে। তাহলো- ১ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াব।
বাড়ি থেকে মসজিদে আসতে যে কয় কদম হেঁটে আসবে, ওই ব্যক্তি তত বছর নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াবের অধিকারী হবেন।
ধরা যাক- কোনো ব্যক্তির বাড়ি থেকে মসজিদে আসতে ১০০ কদম হাটা লাগে। ওই ব্যক্তি যদি উল্লেখিত ৫ কাজ মেনে জুমার দিন আমল করে তবে তার আমল নামায় ১০০ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াব যোগ হবে।
হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে- জুমার দিনের এ আমলের সুযোগের চেয়ে বেশি আমলের সুযোগ লাভের আর কোনো দ্বিতীয় মাধ্যম নেই।
বিখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব বলেন, ‘আমার কাছে নফল হজ করার চেয়ে বেশি উত্তম শুক্রবারের আমল করা।’
মুসলিম উম্মাহর জন্য নসিহত হলো-
জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে মুসলমানগণ যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মাধ্যমে এ দিনটিকে ইবাদাত-বন্দেগির দিন হিসেবে পালন করে থাকে।
তাছাড়া আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র তার ইবাদাত-বন্দেগির জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এ মহত্বের প্রতি দৃষ্টি রেখেই আল্লাহ তাআলা ইবাদাত-বন্দেগির সাপ্তাহিক অনুশীলনের জন্যই জুমার দিনটিকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দিনের হক আদায়ে আজানের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততার সহিত নামাজ আদায়ে মসজিদ পানে ছুটে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। ইবাদাত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নিজেদেরকে আল্লাহ বন্দেগিতে নিযুক্ত রাখতে নিজেদেরকে সেভাবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।