মা

এয়ারপোর্টে বৃদ্ধা মাকে রেখে ফিরতি ফ্লাইটেই চলে যায় সন্তান

সব থেকেও তাদের কিছুই নেই। যে সন্তানকে সবকিছু দিয়ে বড় করে তুলেছেন সেই সন্তানরাই খোঁজ নেন না বাবা-মার। বয়স্ক এসব মানুষের জায়গা হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানরা পর করে দিলেও আশ্রমের একজন আরেকজনের ভীষণ আপন। জীবন সায়াহ্নে এসে অতীতের সুখস্মৃতি মনে করে ভুলে থাকতে চান সন্তানদের অবহেলা।

৭২ বছরের মোহাম্মদ সেলিম চট্টগ্রামের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। চাকরিজীবী দুই মেয়েই থাকেন চট্টগ্রামে। দেখতে আসা তো দূরের কথা, ৫ বছর ধরে বাবার কোনো খোঁজও নেন না মেয়েরা। মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “খারাপ তো লাগবেই। আসে না, ৫ বছর হলো এখানে এসেছি। বড় করলাম, লেখাপড়া করালাম, চাকরি দিলাম। সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করে।”

এইসব প্রবীনদের একসময় নিজেদের সংসার ছিল। এখনও অনেকের ছেলেমেয়ে কিংবা নাতী-নাতনী আছে। কিন্তু সেই সংসারে তাদের ঠাঁই হয়নি। পড়েছিলেন রাস্তার ধারে, সেখান থেকে তুলে এখানে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এখানে আসার পরেও ছেলেমেয়েদের খোঁজ নেওয়ার সময় হয়নি।

সেলিমের পাশেই থাকেন মোস্তাক আহমেদ। একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এক ছেলে থাকেন সিঙ্গাপুরে। একদিন গুলশানে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় বাবাকে। দুঃখ-অভিমানে ছেলের কথা স্বীকারও করতে চান না তিনি। সালমা আমজাদের জীবনের গল্পটা আরও করুণ। ২ ছেলে, ৩ মেয়ের সবাই লন্ডনে। লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এয়ারপোর্টে মাকে ছেড়ে দিয়ে ফিরতি ফ্লাইটেই চলে যায় তার সন্তান। হাঁটতে হাঁটতে অন্যের সহায়তায় এই বৃদ্ধাশ্রমেই জায়গা হয় সালমার।

সালমা আমজাদ বলেন, “আপ্রাণ চেষ্টা করে বড় করলাম, মানুষ করলাম। সেই আমাকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গেল।” মিরপুরের এই চাইল্ড এন্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারটির পরতে পরতে আছে এরকম অসংখ্য দুঃখকথা। ২০১৪ সালে আশ্রয় কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছিলেন মিল্টন সমাদ্দার।

চাইল্ড এন্ড ওল্ড কেয়ারের পরিচালক মিল্টন সমাদ্দার বলেন, “আমরা এ পর্যন্ত এক হাজারের মতো বাবা-মাকে রাস্তা থেকে তুলেছি। এর মধ্যে ৪শ’ মা-বাবাকে হারিয়েছি। যাদের শরীরে পচন ধরেছে শুধু তাদেরকে আনা হয়। যাদেরকে সুস্থ্য দেখছেন এরা দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে সুস্থ্য হয়ে গেছেন। এরাও রাস্তায় খারাপ অবস্থায় পড়েছিলেন।” সেন্টারটি চলছে অন্যের সহায়তা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে।

শেয়ার করুন: