কোরবানির ঈদ পরবর্তী সময়ে বিয়ে বা ওয়ালিমাসহ অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনেকে এসব অনুষ্ঠানের মেহমানদারির নিয়তেও কোরবানির পশু জবাই করে থাকেন। কিন্তু কোরবানির পশুর গোশত দিয়ে বিয়ের দাওয়াত খাওয়ানো যাবে কি? আবার এ নিয়তে পশু কোরবানি দেওয়া যাবে কি?
কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। শুধু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই তা করা হয়। কোরআন-সুন্নাহ ও ইসলামিক স্কলারদের মতে, কোরবানির পর এ গোশত যেমন নিজে খেতে পারবে তেমনি অন্যকেও খাওয়াতে পারবে। এ সময় বিয়ের অনুষ্ঠান হলে সেখানেও এ গোশত দিয়ে মেহমানদারি করতে নিষেধ নেই। কোরবানির গোশত দিয়ে বিয়ে কিংবা ওয়ালিমা অনুষ্ঠান করতেও বাধা নেই।
কিন্তু বিয়ে, ওয়ালিমা কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠান করার উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে তা সহিহ বা বৈধ হবে না। তাই কোনো অনুষ্ঠানের গোশতের যোগান দিতে কোরবানি বৈধ নয়। কারণ কোরবানি দিতে মহান আল্লাহর জন্য। কোরবানির উদ্দেশ্য ছাড়া বিয়ে কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্দেশ্যে কোরবানি দিলে তা বৈধ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَهَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
‘এগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম মিনায় এসে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আবেগ-ভালোবাসায় প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসলামইল আলাইহিস সালামকে কোরবানির কার্যক্রম করেছিলেন। এ কুরবানির নিয়ত ও চুক্তি হলো এমন-
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু মহান আল্লাহর জন্য। যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক। তাঁর কোনো শরিক নেই।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)
মনে রাখতে হবে
কোরবানির গোশত দিয়ে মুমিন মুসলমান বিয়েসহ যে কোনো বৈধ অনুষ্ঠানই উদযাপন করতে পারবেন। কিন্তু এ উদ্দেশ্যে কুরবানি দেয়া যাবে না। কোরবানির উদ্দেশ্য থাকবে শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। তাই কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্দেশ্যে কোরবানি নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোরবানি করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করার পর চাইলে যে কোনো বৈধ অনুষ্ঠানে এ গোশত দিয়ে মেহমানদারি করা যাবে। এতে কোনো বাধা নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কোরবানির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।