গ্রাউন্ড অর্কিড

গ্রাউন্ড অর্কিড

শুভ সালাতিন: ইদানিং গ্রাউন্ড অর্কিড শৈখীন বাগানীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গ্রাউন্ড অর্কিডের দাম বেশ চড়া। বেশীর ভাগই থাইল্যান্ড বা চীন থেকে আমদানীকৃত। উচ্চমূল্যের জন্য এই গ্রাউন্ড অর্কিড সবাই কিনতে পারে না। গ্রাউন্ড অর্কিড অনেকে শখ করে কিনেন, কিন্তুু বাঁচাতে পারেন না। অথচ সামান্য যত্ন করলে এই অর্কিড সারাবছর ফুল দিয়ে আপনার মনকে সতেজ রাখবে। আসুন, দেখা যাক, কিভাবে যত্ন করলে গ্রাউন্ড অর্কিড আপনাকে নিরাশ করবে না এবং অকৃপণভাবে সারা বছর জুড়ে ফুল উপহার দিবে।

১. সুস্থ গাছ নির্বাচন: গাছটি সতেজ কিনা দেখে নিন। সতেজ গাছের পাতা উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের হবে। এক বাল্ব-এর গাছ না কিনে বেশ কয়েকটি বাল্বসহ গাছ কিনুন। একাধিক বাল্বের গাছ কিনলে যে সুবিধাটি পাবেন সেটি হলো, একটি বাল্ব যদি পঁচে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে অন্য বাল্ব থেকে আরেকটি গাছ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । পরিণত গাছ কিনলে ভালো হয়।

২. মাটি বা মিডিয়া তৈরী: ভালোমানের মাটি/ শুকনো গোবর (৬০%)। শুকনো গোবর না পেলে কেঁচো সার,কোকোডাস্ট,মোটা বালি,হাড়ের গুড়া(৩০%),ডিমের খোসা কুচি,পচানো চা ব্যবহৃত) পাতা,পাথরকুচি,ইটের কুচি বা কয়লা ( ১০%)। উপাদানগুলো মিশিয়ে কমপক্ষে ১৪ দিন রেখে দিন। এতে উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশে যাবে। ১৪ দিন পরে গাছ লাগাতে হবে।

৩. সঠিক পটিং: গ্রাউন্ড অর্কিডের ক্ষেত্রে সঠিক পটিং অতি গুরুত্বপূর্ণ । পটিং ঠিক না হলে গাছটি মরে যেতে পারে। গাছের বাল্ব পুরোটা মাটির নীচে না লাগিয়ে খানিকটা মাটির উপর রাখতে হবে এবং শিকড় মাটির ভিতর থাকবে। গাছ লাগানোর পরে টব ভরে পানি দিন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, পানি যদি টব থেকে সম্পূর্ণ বের হয়ে যায়, তাহলে আপনার তৈরীকৃত মিডিয়া ঠিক আছে।

৪. উপযুক্ত পরিবেশ: গ্রাউন্ড অর্কিড ছায়াচ্ছন্ন পরিবেশ পছন্দ করে। এই জাতীয় অর্কিড অতিরিক্ত রোদ সহ্য করতে পারে না। পাতা পুড়ে যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে গাছের বাল্ব পচে যায়। ছাদে গাছ রাখলে শেড নেটের নীচে রাখুন। শেড না থাকলে আবহাওয়া অনুযায়ী গাছের পজিশন পরিবর্তন করতে হবে।

৫. পানি প্রয়োগ: মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে। মাটির উপরের তল যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে,তখন পানি দিবেন।

৬. খাদ্য: মিডিয়ার মিশ্রণ ঠিক থাকলে তেমন সার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। পঁচা খৈলের পাতলা পানি দিতে পারেন মাসে একবার। শুকনো মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। শুকনো গোবর দিতে পারেন মাসে একবার।

৭. রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ: গ্রাউন্ড অর্কিডে তেমন রোগ-বালাই দেখা যায় না। মাসে একবার ছত্রাক আর মাকড় নাশক ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ইন্ডোফিল এবং এবোম মিশ্রণ করে প্রয়োগ করতে পারেন। মাটি বেশী ভেজা থাকলে গাছের পাতায় মিলিবাগ দেখা দিতে পারে। পাতার উল্টোদিকে নিয়মিত থেয়াল রাখুন। গরমকালে গাছের পাতাসহ পুরো গাছটি নিয়মিত ধূঁয়ে দিন।

৮. রি-পটিং: রি-পটিং এর আর্দশ সময় হলো জানৃয়ারী থেকে মার্চ মাস। এক্ষেত্রে অধিক বাল্বসহ পুরাতন গাছটি টব থেকে তুলে ফেলুন। পুরানো গাছ তুলে ফেলে মড়া শিকড় ও পাতা পরিস্কার করে নিতে হবে। এরপর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধূঁয়ে ফাঙিসাইড মিশ্রিত পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। উপরের বর্ণিত ( ২ নং) উপায়ে মিডিয়া তৈরী করুন। পুরানো মিডিয়া ব্যবহার করবেন না। সঠিকভাবে পটিং ( ৩ নং) করে গাছ লাগান। টব ভরে পানি দিন। কিছুক্ষণ পরে সমস্ত পানি নেমে গেলে বুঝবেন আপনার তৈরীকৃত মিডিয়া ঠিক আছে। ৭ দিন গাছটি ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন ( শেডে নীচে রাখলে গাছ ভালো থাকে-শীতের সময় কুয়াশা আর গরমের সময় তাপ থেকে রক্ষা করে)। গাছে গোড়া যেন নড়েচড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৯. অন্যান্য যত্ন: নিয়মিত আগাছা পরিস্কার করুন। মাটি শক্ত হয়ে গেলে খুঁচিয়ে দিন। অনেকসময় টবে ছোট ছোট শামুক ও ব্যাঙের ছাতা জস্মায়। সেগেুলো পরিষ্কার করুন।

১০. শেষ কথা: নিরাশ হবেন না। গাছ বেঁচে থাকলে অবশ্যই ফুল পাবেন। একটি পরিণত গাছ সারাবছর ফুল দিবে। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এই অর্কিড বিরামহীনভাবে ফুল দেয়। গ্রাইন্ড অর্কিডের একেকটা স্টিক দুই/তিন মাসেরও বেশী সময় ফুল দেয়। আলো/তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু গ্রাউন্ড অর্কিডের ফুলের রঙেরও পরিবর্তণ ঘটে। আর শেষ কথা হলো, অর্কিডটিকে ভালোবাসুন, বিনিময়ে সেও আপনাকে ভালবেসে নিজেকে ফুলে ফুলে সজ্জিত করবে।

শেয়ার করুন: