হারিয়েই যেতে বসেছিল এই ঔষধি গাছড়া। বিরল প্রজাতির তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিল। হিমালয়ের হাজারো ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে এই গাছড়া বহু রোগ নিরাময় করতে পারে। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে তৈরি করেও বাঁচাতে পারছিলেন না গবেষকরা। সেই কাজই করে দেখাল এক শ্রেণির ব্যাকটেরিয়ারা। অবাক হয়ে বিজ্ঞানীরা দেখলেন, মাটিতে জন্মানো এই বিশেষ শ্রেণির ব্যাকটেরিয়ারা ভেষজ গাছ-গাছড়া বাঁচাচ্ছে তাই নয়, গাছের পুষ্টির রসদও দিচ্ছে। এই ব্যাকটেরিয়াদের সান্নিধ্যেই গাছগাছড়া শিকড় ছড়াচ্ছে বহুদূর। তাজা পাতা, ফুল ফুটছে গাছে।এই খোঁজকে বিরলই বলা যায়। প্রকৃতিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া অনেক আছে। তাদেরই কিছু যে গাছের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে সেটাই আশ্চর্যের। ব্যাকটেরিয়াদের দিয়ে বিরল প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদের প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করছেন সিএসআইআরের ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান বায়োরিসোর্স টেকনোলজি (সিএসআইআর-আইএইচবিটি)-র বিজ্ঞানীরা। ‘জিনোমিক্স’ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে।
পিক্রোরাইজা কুরোয়া (Picrorhiza kurroa) যাকে স্থানীয়দের ভাষায় বলা হয় কুটকি বা কুটাকি। হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি এলাকায় এই গাছড়ার দেখা মেলে। পরিবেশ বদল, আবহাওয়া বদলের কারণে এই ভেষজ গাছড়ার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যে কটা টিকে আছে, সে কটাও প্রায় মরতে বসেছে। ১৯৯৭ সালে এই ভেষদ উদ্ভিদকে বিরল ও লুপ্তপ্রায় বলে দাগিয়ে দেন পরিবেশবিদরা।
এই গবেষণার দায়িত্বে থাকা বিজ্ঞানী অমিতা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কুটকি ভেষজ উদ্ভিদের অনেক গুণ। মানুষের অনেক রোগ নিরাময় করতে পারে। হিমালয় পার্বত্য এলাকায় একটা সময় এই ভেষজ উদ্ভিদ জন্মাতো। এখন প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে। এই গাছড়া চারা ও মাটি নিয়ে এসে ল্যাবরেটরিতে কালচার করে দেখা গেছে, গাছ বেশিদিন বাঁচেনি। ল্যাবরেটরির টেস্ট টিউব বা কনিকাল ফ্লাস্কে গাছের চারা বড় করে তাকে ফের মাটিতে পোঁতার পরে দেখা গেছে, বেশিদিন টেকেনি। মাটি, জল হাওয়ার সংস্পর্শে এসেও শুকিয়ে যেতে বসেছে গাছ। তারপরেই ওই উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের নিয়ে আসেন বিজ্ঞানীরা।
সেও এক মজার ব্যাপার। সিএসআইআরের গবেষক সঞ্জয় কুমার বলছেন, ল্যাবরেটরি থেকে নিয়ে গিয়ে গাছ মাটিতে পুঁতলেই শুকিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মাটিতে উপকারী ‘বন্ধু’ ব্যাকটেরিয়াদের ছেড়ে দিলে দেখা যাচ্ছে আবার তাজা হয়ে উঠছে গাছ। দিব্যি পাতা, ফুল গজাচ্ছে। বেশিদিন বেঁচেও থাকছে। ব্যাকটেরিয়া আর গাছের এই সখ্য চমকে দিয়েছে গবেষকদের।
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস মানেই ধারণা আছে যে তারা সংক্রামক, ক্ষতি করে। কিন্তু সব ব্যাকটেরিয়া তেমনটা নয়। মানুষের অন্ত্রেও তো থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যারা বিপাকে সাহায্য করে। তেমনি মাটিতেও এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া জন্মায় যারা উদ্ভিদদের পুষ্টি জোগাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তেমনই গাছেদের বন্ধু ব্যাকটেরিয়া হল সেরাটিয়া কুইনিভোরানস (serratia quinivorans PKL:12)। গবেষকরা বলছেন, অনেক খুঁজে এই ব্যাকটেরিয়াদের চিহ্নিত করা হয়েছে । এতেদর একটা আশ্চর্য গুণ আছে। গাছগাছড়ার সংস্পর্শে এলেই এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। গাছের বৃদ্ধি ঘটানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। শুকিয়ে যাওয়া গাছকে তরতাজা করে তোলে। কুটকি গাছের সঙ্গে এই ব্যাকটেরিয়াদের কালচার করে মাটিতে পোঁতার পরে দেখা গেছে, গাছের শিকড় আড়াই গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই তরতরিয়ে বেড়ে উঠেছে গাছ। মূলের ভেষজ গুণও বেড়েছে। এমনকি গাছের জীবনকালও কয়েকগুণে বেড়ে গেছে।
বিজ্ঞানী অমিতা বলছেন, কুটকি গাছড়ার মূল শুকিয়ে তার থেকে ওষুধ তৈরি হয়। পেটের যে কোনও রোগ, অন্ত্রের রোগ সারাতে সেই ওষুধ বিশেষ ভূমিকা নেয়। লিভারের যে কোনও জটিল অসুখ সারানোর ক্ষমতা আছে এই গাছড়ার। দেখা গেছে, পিক্রোরাইজারা জ্বর, অ্যালার্জি, প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন কমাতেও পারে। এমনকি ক্যানসার কোষ নষ্ট করার ক্ষমতা আছে বলেও দাবি বিজ্ঞানীদের। এই নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে। কিন্তু এই গাছই লুপ্ত হতে বসায় অনেক গবেষণাই থমকে গিয়েছিল। বন্ধু ব্যাকটেরিয়ারা সেই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। প্রকৃতিতে বিরল প্রজাতির যত ভেষজ উদ্ভিদ আছে যারা জলবায়ু ও পরিবেশ বদলের প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে, এই ব্যাকটেরিয়ারা তাদেরও ফিরিয়ে আনতে পারবে কিনা সে নিয়েও এখন পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।
bdview24.com Bangla News from Bangladesh regarding politics, business, lifestyle, culture, sports, crime. bdview24 send you all Bangla News through the day.