দাঁতরাঙা

দাঁতরাঙা বা বন তেজপাতা

এটি প্রধাণত পাহাড়ি বা উচুঁ এলাকায় বেশি জন্মে থাকে; বাংলাদেশ ছাড়াও এটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দেখা যায়। যারা সিলেটের জাফলং ঘুরতে গিয়েছেন। যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে টিলাগুলোয়, রাস্তার পাশে কিংবা জাফলং এর পাথরের স্তুপের পাশে বেগুনি-গোলাপি রঙের বন্য কোনো ফুল চোখে পড়েছে? পাতাটা অনেকটা তেজ পাতার মতো দেখতে? যদি চোখে পড়ে থাকে তাহলে মনে কৌতুহল উঁকি দিয়েছে নিশ্চই? আর নাম জানার ইচ্ছাটাও? কিন্তু নামটা অজানা থেকেই যায়, তাই না? আজকে নামের পাশাপাশি জানবো সেই গুল্ম উদ্ভিদের বেশ কিছু তথ্য। আমাদের দেশে গাছটির এলাকা ভেদে নাম লুটকি, বন তেজপাতা, দাঁতরাঙা (দাঁতরাঙ্গা নামের কারণ এর ফল খেলে দাঁত লাল হয়ে যায়)। চাকমা ভাষায় বলা হয় মুওপিত্তিংগুলো। ইংরেজি নাম Malabar melastome পাশাপাশি Indian Rhododendron, Singapore Rhododendron, Malabar Melastome, Planter’s Rhododendron ও Senduduk নামেও পরিচিত।

শ্রেণিবিন্যাস –
রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Angiosperm
অবিন্যাসিত: Edicots
বর্গ: Myrtales
পরিবার: Melastomataceae
গণ: Melastoma
প্রজাতি: M. malabathricum
বৈজ্ঞানিক নাম: Melastoma malabathricum

নামকরণ –
দাঁতরাঙা ফুলের ফল , দাঁতরাঙা ফুলের বিচি, এই বিচি খেলেই দাঁত রাঙা বা রঙিন হয় বলে এই ফুলর নাম করণ হয়েছে দাঁতরাঙা।

বর্ণনা –
দাঁতরাঙা গুল্মজাতীয় (গুল্ম হলো সুস্পষ্ট একক কাণ্ড বা গুঁড়িবিহীন অধিক শাখা-প্রশাখাযুক্ত ঝোঁপজাতীয় উদ্ভিদ) গাছটি প্রায় তিন মিটার লম্বা হয়। এর উপ-শাখাগুলো চতুষ্কোণী এবং চ্যাপ্টা থেকে প্রশস্থ, সূক্ষ্ম খন্ডিত এবং তামাটে শঙ্কদ্বারা ঘন আবৃত। গাছের পাতা দেখতে উপবৃত্তাকার। পুষ্পমঞ্জরিতে তিনটি থেকে সাতটি ফুল থাকে। মঞ্জুরিপত্র কখনো স্থায়ী, বৃহৎ ও সুদৃশ্য, আর ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। বহিঃপৃষ্ঠা বিশেষ করে মাঝের দিকে চ্যাপ্টা এবং সাদাটে বা লাল শঙ্কা দ্বারা ঘন আবৃত। এরা চিরহরিৎ অর্থাৎ সারা বছরই সতেজ থাকে।
দাঁতরাঙা গাছটি বেশ ঝোপালো। উম্মুক্ত জায়গায় এই গাছ সহজেই বেড়ে উঠতে পারে। মূলত পাহাড়ে বা লাল মাটি আছে এমন জায়গায় এই গাছ ভালো জন্মে। বিঘ্ন মাঠ, রাস্তার পাশে, টিলা/পাহাড়ে, নদীর ধারে, জঙ্গলে, ঝোপঝাড়ে এই গাছ বেশি চোখে পড়ে। বাংলাদেশে পঞ্চগড়, গাজীপুর, সিলেট, কাশিমপুর, শ্রীপুরে এই গাছ বেশি দেখা যায়। তাছাড়া বান্দরবান ও টেকনাফ এর আরও কয়েকটি জাতের দেখা মেলে। সিলেট যাবার পথেও জাফলং এ প্রচুর দেখা যায় এই গাছ। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভারত, মালয়েশিয়া এবং নিউগিনি, ফিলিপাইন ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এর দেখা মেলে।

দাঁতরাঙা একটি জংলি ফুল হলেও এর রয়েছে বহুজাতিক ঔষধি গুণ। বিভিন্ন অঞ্চলে এটি আয়ুর্বেদীয় (Ayurvedic) চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর পাতার নির্যাস মানবদেহের ক্যান্সার ও হৃদরোগ রোধে সহায়ক বলে গবেষণায় দেখা গেছে। তাছাড়া এর পাতার রস আমাশয়, পেটেরব্যাথা ও বাত জ্বর কমাতে পারে। লোক চিকিৎসায় এটি দাঁত ব্যাথা, উচ্চরক্তচাপ, আলসার, ডায়রিয়া, চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। থাইল্যান্ডে মেওহিল আদিবাসীরা এর শেকড়ের নির্যাস গরম পানিতে ফুটিয়ে প্রসব পরবর্তী জটিলতায় ব্যবহার করে। ফিলিপাইনে এর বাকল সর্দিজনিত গলবিল প্রদাহ এবং মুখের পঁচনে ব্যবহৃত হয়।

এই উদ্ভিদের একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হলো যে জায়গায় এই গাছটি জন্মে সেই জায়গাটাকে চা চাষের উপযুক্ত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তাই একে চা নির্দেশক বা টি ইন্ডিকেটর শ্রেণির উদ্ভিদ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

ঔষধি গুণাগুণ –

এটি কৌষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগে ব্যবহৃত হয়। দাঁতরাঙার পাতার নির্যাস মানবদেহের ক্যান্সার, হৃদরোগ রোধে সহায়ক। তাছাড়া এর পাতার রস আমাশয়, পেটব্যথা, বাত ও বাতজ্বর দূর করতে পারে। আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, দাঁত ব্যথা, চর্মরোগ ও ডায়রিয়া চিকিৎসায় দাঁতরাঙা ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কাটাছেঁড়ায় ফুটকির পাতা তাৎক্ষণিক রক্ত পড়া বন্ধ করে।

শেয়ার করুন: