দেশি পেটারি

দেশি পেটারি গুল্মের বিবরণ ও দশটি ভেষজ ব্যবহার

দেশি পেটারি (ইংরেজি: Indian Abutilon বা Indian Mallow); (Abutilon indicum) হচ্ছে মালভেসি পরিবারের গুল্ম; যা উষ্ণমণ্ডলীয় এবং উপউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। এটিকে মাঝেমাঝে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদটি প্রায় ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং কিছু উষ্ণমণ্ডলীয় দ্বীপে আগ্রাসী হিসেবে বিবেচিত।

দেশি পেটারি

দেশি পেটারি হচ্ছে মালভেসি পরিবারের গুল্ম; যা উষ্ণমণ্ডলীয় এবং উপউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। এটিকে মাঝেমাঝে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদটি প্রায় ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।

ইংরেজি নাম: Indian Abutilon বা Indian Mallow

বৈজ্ঞা‌নিক নাম: Abutilon indicum

পরিচিতিঃ

দেশি পেটারির উচ্চতা ৭-৮ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। তবে গড় উচ্চতা ৪ ফুটের মতো। পেটারির কাণ্ডের রং গাঢ় বাদামী। কাণ্ড ২-৩ ইঞ্চি মোটা হয় এবং কাণ্ড শক্ত ও ভঙ্গুর। কাণ্ডের একেবারে শুরু থেকে ডালপালা বের হয়। এজন্যে পেটারি গাছকে ঝোপালো মনে হয়।

ফুল: পৌষ-ভাদ্র। ফুল হলুদ বর্ণের, পাপড়ি পাঁচটি। ফল গোলাকার, ১০-১৬টি খণ্ডক

ফল: ফলের ওপরে শুয়া আছে। এর আঁশ দিয়ে হালকা জিনিসপত্র বানানো যায়। বীজ থেকে চারা হয়।

অন্যান্য নাম:
বাংলা অভিধানে ‘পেটারি’ বলে কোনো শব্দ নেই। তাই এ নামের উৎস সম্বন্ধে জানা যায় না। কিন্তু এর সংস্কৃত নাম ‘অতিবলা’ রাখার যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। পেটারির আরও কয়েকটি নাম আছে- বালিকা, বল্যা, বিকঙ্কতা, বাট্যপুষ্পিকা, শীতপুষ্প, ভূরিবলা, বৃষ্যগন্ধিকা। এটি হিন্দিতে কাংঘি, ঝমলি; আরবিতে মস্তুলগোলা; ফারসীতে দরখতশান; মায়ানমার- ফা-ফা-চোক; আসামে- ঝাঁপা; সাঁওতাল- মিরুবাহা; ইংরেজিতে- Indian mallow, country mallow।

দেশি পেটারি গুল্মের বিবরণ:
দেশি পেটারি গাছ ওষুধি বা গুল্মজাতীয়, বর্ষজীবী বা বহুবর্ষজীবী ঝোপঝাড়সম্পন্ন গাছ। কোনো কোনো গাছের উপরের অংশ মরে গিয়েও গোঁড়া জীবিত থাকে এবং তা থেকে নতুন গাছ বেরোয় এবং এভাবে কয়েক বছর বেঁচে থাকতে পারে। গাছ ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাণ্ড গোলাকৃতি, পার্পল রঙের ছোপবিশিষ্ট। পাতা ডিম্বাকৃতি বা হৃদপিণ্ডাকৃতি, অগ্রভাগ সরু, কিনারা অসমভাবে খাজকাটা। পাতাসমৃদ্ধ গাছ দেখতে বেশ সুন্দর। কাণ্ডে সূক্ষ্ম শ্বেতাভ মখমলি রোমাবরণ থাকে।

ফুল হলুদ বা কমলা-হলুদ বা পীত-নারঙ্গী রঙের। এক একটি ফুল বা গুচ্ছে জন্মে, সন্ধ্যায় ফোটে। ফল রোমাবৃত, চক্রাকৃতি বা গোল, বাইরের দিক কাটা কাটা, প্রতি ফলে ৩ থেকে ৫টি বীজ থাকে, বীজ বৃক্কাকৃতি, গাঢ় খয়েরি বা কালো, ফল থেকে ফেটে গিয়ে আপনাআপনি বীজ ছড়িয়ে যায়। কার্তিক থেকে ফাল্গুনে ফুল ও ফল হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সারা বছর কমবেশি ফুল ও ফল হয়।

প্রাচীন শাস্ত্রে উল্লেখ:
পেটারি একটি আয়ুর্বেদ প্রমাণিত ওষুধি উদ্ভিদ, কেননা প্রায় প্রতিটি সংহিতা এবং চিকিৎসাগ্রন্থে পেটারির উল্লেখ দেখা যায়। চরকসংহিতার সূত্রস্থানে বল্য দশমানির মধ্যে অতিবলাকে বলবীর্য রক্ষাকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সংহিতারই চিকিৎসাস্থানের ৪০ শ্লোকে অতিবলায়। রসায়ন গুণের উল্লেখ আছে। সুশ্রুত সংহিতার গ্রন্থে উল্লেখ আছে, বাত সংশমনীয় দ্রব্যগুলোর মধ্যে অতিবলার উল্লেখ রয়েছে। অষ্টাঙ্গহৃদয় সংগ্রহ গ্রন্থে অশ্মরী রোগ চিকিৎসায় এবং রসায়ন হিসাবে এর ব্যবহারের উল্লেখ দেখা যায়। চক্রদত্তে অতিবলার ক্বাথ মূত্রকৃচ্ছে ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। ধন্বন্তরি নিঘণ্টতে গুণ বর্ণনায় তিনটি বলার অর্থাৎ বলায়ম যথা বলা, নাগবলা এবং অতিবলা একত্রে গুণ বর্ণনা করা হয়েছে- এগুলো বাতপিত্তনাশক, সংগ্রাহী, বলবর্ধক এবং শুক্রজনন। ভাবপ্রকাশে গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে এটা শীতবীর্য, মধুর, বলকর, কান্তিবর্ধক, স্নিগ্ধ, মল-সংগ্রাহক, বায়ু-পিত্ত-রক্তদুষ্টি এবং ক্ষতনাশক।

পেটারির ভেষজ গুণ

১.দাঁতব্যথা বা মাড়ির প্রদাহে পাতার নির্যাসকে মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করলে উপশম হয়।

২.গনোরয়িা বা মূত্রথলির প্রদাহেও উপকারী। পাতাসিদ্ধ পানি দিয়ে ঘাযুক্ত ক্ষতস্থান পরিস্কার করা যায়।

৩.অর্শজনিত রক্তপাত বন্ধের জন্য পাতা রান্না করে খেলে উপকার হয়।

৪.গাছের নির্যাস শিশুদের নাকের ক্ষত সারাইয়ে ব্যবহার্য।

৫.পেটারির মূল বা মূলের ছাল জ্বর, মূত্রকৃচ্ছ্রতা, অর্শ, গলিত কুষ্ঠ, রক্তপ্রদর ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে।

৬.চন্দনঘষা ও চালমুগরা তেল মধুসহ এর শিকড়বাটা শ্বেতিতে লাগালে আরোগ্য হয়।

৭.রক্তবমি ও কফজনিত সমস্যায় ফুলচূর্ণ ঘি-সহযোগে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

৮.বীজের শরবত ঠাণ্ডা পানীয় হিসেবে ব্যবহূত হয়।

৯.মূত্রকৃচ্ছ্রতায় পাঁচ গ্রাম পরিমাণ শুকনো পেটারির শেকড় তিন কাপ পানিতে সিদ্ধ করে একে কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা করে দিনে ২-৩ বার করে খেলে উপকার হয়। এসব ছাড়া পেটারি আরও অনেক রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।

শেয়ার করুন: