ইনডোর প্ল্যান্ট

ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন ও কিছু ভুল ধারনা

ছায়ায় বেঁচে থাকে, ঘরের ভিতরে টবে লাগানো যায, এমন গাছগুলোই মূলত ইনডোর প্ল্যান্টস। ঘরোয়া এই গাছগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকায় কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির ফিলাডেনড্রন, প্যাথোস, পিস লিলি, স্নেক প্ল্যান্ট, মনস্টেরা, ক্যাকটাস, বিভিন্ন প্রকার অর্কিড এবং ফার্ন ইত্যাদিই এগিয়ে। কিছু কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের বাতাসকে রাখে দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন।

পানিঃ ইনডোরে কোনও গাছ রাখা হলে তার পানির চাহিদা কম থাকে, প্রতিদিন পানি গাছের মৃত্যুর প্রধান কারন। আবার আল্লাহের নাম এ সপ্তাহে ১ দিন পানি দিলেও হবে না। প্রজাতি ও ঋতু ভেদে পানি দেওয়ার গ্যাপ ২ দিন পরপর থেকে শুরু করে ১ মাস পর্যন্ত হতে পারে।

আলোঃ আমাদের একটা ধারনা হল যে একটা গাছ ছাদে বা বারান্দায় না রেখে ঘরে রাখলে আলোর পরিমানে কি আর কম বেশি ঘটে। ঘরেও তো ভালই আলো, সব দেখতে পাই আমরা। এটা একটা ভুল ধারনা। আপনি আমি না বুঝলেও গাছ ঠিকই বুঝে। লাইটমিটার দিয়ে মাপলে দেখা যায় ছাদে আলো ১৬ হাজার লাক্স (আলোর একক) , বারন্দায় গ্রিলের কাছে ২ হাজার লাক্স,বারান্দায় ভিতরের দিকে ৫০০ লাক্স, ঘরের জানালার পাশে ২০০ লাক্স আর ঘরে টেবিলের উপর হয়ত ৩৫ লাক্স। বুঝতে পারছেন কি পরিমানে আলো কমে যাচ্ছে? আমাদের যদি দৈনিক ৫ বেলা খেতে না দিয়ে ৫ দিন পর পর ১ বেলা খেতে দেওয়া হয় তাহলে যেই অবস্থা হবে আপনার গাছের ও আসলে সেই অবস্থা হয়, বেচারা যে মরে যায়না এটাই বেশি, তার কাছে গ্রোথ চাওয়া আসলে পর্বতের মূষিক প্রসব এর মতো ব্যাপার হয়ে যায়। ইনডোর গাছ মানে সারা জীবন ঘরে থাকবে এমন না, প্রতি সপ্তাহে এক দিন হলেও বারান্দায় রোদ খাওয়ানো উচিৎ।

সারঃ খালি পানি আর আলো দিয়ে গাছের পেট ভরে না। গাছের সারের দরকার আছে। তবে ইনডোরে যেকোনো গাছেই সারের পরিমান তুলনামূলক কম লাগে। দয়া করে গাছের প্রজাতি অনুযায়ী সার দিন।

আদি-নিবাস জানাঃ কোনও একটা গাছ কেনার আগে গাছটি কোন খান থেকে উৎপত্তি হয়েছে তা জানা খুবই জরুরী, আমি অনেক কে অর্কিড মাটিতে পুতে রাখতেও দেখেছি। সে যদি জানত অর্কিড পরগাছা এবং এটা গাছে উলটা হয়ে ঝুলে থাকে তাহলে সে নিশ্চয়ই গাছ কখনই মাটিতে পুতে দিত না। আদি নিবাস জানলে আম্র মনে হয় একটা গাছের জত্ন সম্পর্কে ৫০% জানা হয়ে যায়।

ধূলা- বালিঃ ইনডোর প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে যে জিনিস টা প্রায়ই হয় সেটা হল আমরা গাছের গোঁড়ায় পানি দিলেও পাতা ধুয়ে দেই না। এর ফলে যেটা হয় টা হল পাতার ছিদ্র গুলো বন্ধ হয়ে থাকে, পর্যাপ্ত খাবার তৈরি করতে পারে না, দেখতেও বাজে লাগে।

অতিরিক্ত নড়ানোঃ আমাদের যেমন খাট পরিবর্তন হলে ঘুম আসতে চায়না, তেমনি গাছের ও কিন্তু জায়গা পরিবর্তন হলেই অ্যাডজাস্ট করতে প্রব্লেম হয়। আমরা কি করি, আজ ড্রইং রুমে ট কাল বেড রুমে পরশুদিন সিঁড়িতে, এই ভাবে খালি জায়গা পরিবর্তন করি। এটা করা ঠিক না। একজায়গাতে নিম্নে ১ মাস রাখা উচিৎ।

অতিরিক্ত যত্নঃ অতিরিক্ত আদরে যেমন সন্তান নষ্ট , অতিরিক্ত যত্নে গাছ ও নষ্ট হয়। অতিরক্ত আদর বন্ধ করুন, অদের কে নিজের মতো ছেরে দিন।

রিপটিংঃ প্রতি বছর বসন্ত ( সামার ডমিন্যান্ট গাছ) বা শীতের শুরুতে ( উইন্টার ডমিন্যান্ট গাছ) রিপটিং করা উচিৎ। মাটি টা ঝুরঝুরে হওয়া প্রয়োজন।
আশা করি এই বিষয় গুলো মাথায় রাখলে আপনার গাছ অনেকটাই ভালো থাকবে।

লেখক: উদ্যোক্তা, গার্ডেনার ডিপো।

শেয়ার করুন: