আজকাল ব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস এর জন্য ইনডোর প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অস্থির এক কর্মময় জীবনে সবুজের ছোঁয়া পেতে মানুষ ইনডোর প্ল্যান্ট লাগাতে উৎসাহ বোধ করছে দিন দিন। এই গাছ শুধু আপনার ভালো লাগার সাথে
ঘরের শোভাবর্ধনেও কাজ করে। চলুন জেনে নেই তেমই ১০ টি ইনডোর প্ল্যান্টের নাম, দাম ও তাদের পরিচর্যা।
১১ টি ইনডোর প্ল্যান্ট এর নাম ১) ফিলোডেনড্রন এবং পোথাস( মানি প্ল্যান্ট) ২) স্নেক প্ল্যান্ট ৩) এ্যালোকেশিয়া ৪) এ্যালো ভেরা ৫) পীস লিলি ৬) মিন্ট ৭) সার্কুলেন্ট ৮) স্পাইডার প্ল্যান্ট ৯) মথ অর্কিড ১০) মেইডেনহেয়ার ফার্ণ ১১) মুনলাইট পথোস। এবার জেনে নেই উপরে বর্ণতি দশটি ইনডোর প্ল্যান্ট এর যন্ত ও মূল্য সহ সকল তথ্য-
১. ফিলোডেনড্রন এবং পোথাসের পরিচর্যা নামে বেশ খটমটে এই গাছের অনেকগুলো নাম।এটি ডেভিল্স নামেও পরিচিত। তবে আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই গাছ মানিপ্ল্যান্ট নামে পরিচিত। গাছটির মূল আবাস আমেরিকার উপকূলবর্তী অঞ্চলে। প্রায় ৫০০ প্রজাতির রয়েছে এই গাছ। সাধারণত ১৫-১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গাছটি সাচ্ছন্দ্যে বেড়ে উঠি। খুব অল্প যত্নে এই গাছ বেড়ে উঠে। তাই সবার প্রিয় মানিপ্ল্যান্ট গাছটি। মানিপ্ল্যান্ট গাছ আপনি চাইলে পানিতে বা মাটিতে উভয় জায়গায় লাগাতে পারেন। অল্প মাটিতে লাগানো যায় এই গাছ কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই। যে পাত্রে এই গাছ লাগাবেন তার আকার অনুযায়ী পানি দিতে হবে। সপ্তাহে একবার রোদ লাগাবেন গাছে। তাতে গাছ ভালো থাকবে অনেকদিন। আর নিয়ম করে এই গাছে পানি দিতে হয় বিধায় অনেকেই পানিতে লাগাতে পছন্দ করেন। মানিপ্ল্যান্ট গাছের উপকারিতা অনেক।এটি যেমন আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায় তেমনই বায়ু পরিশোধন করে। তবে বায়ু পরিশোধক হওয়ায় এই গাছ কিছুটা বিষাক্ত তাই পোষা প্রাণী ও বাচ্চাদের থেকে দূরে রাখবেন।
২. স্নেক প্ল্যান্ট দেখতে সবুজ আর হালকা হলুদভাব এই গাছটি অনেকটা সাপের মতো বিধায় এই গাছের নামকরন যথার্থ। গাছটির আদি আবাস্থল দক্ষিন আফ্রিকা। স্নেক প্ল্যান্ট নাম হলেও এই গাছটি খুব উপকারী গাছ। বাতাসে ক্ষতিকারক ৫ টি বিষাক্ত উপাদানের মধ্যে স্নেক প্ল্যান্ট ৪ টি উপাদান শোধনে করতে সক্ষম। তাই অনলাইন গাছের মার্কেটে এই গাছ চড়া দামে বিক্রি হয়। অথচ এই গাছ আগে পথের পাশে অবহেলায় বেড়ে উঠতে দেখা যেত। এই গাছের যত্ন তেমন একটা নিতে হয় না। তাই এটি ব্যস্ত মানুষের পছন্দের তালিব শীর্ষে অবস্থান করে। ঘরের শোভাবৃদ্ধি ও পরিবেশ সুরক্ষার ভূমিকার জন্য এই গাছের চাহিদা ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে অনেক। লিভিং রুম বা বেসিনের পাশে অথবা শোবার ঘরের কোনায় এই গাছ রাখতে পারেন। তবে এর পাতা একটু বিষাক্ত তাই সাবধানে রাখবেন।
৩. এ্যালোকেশিয়া ইনডোর প্ল্যান্ট এ্যালোকেশিয়া গাছকে বাংলায় মানুষ এলোকেশী বলে ডাকতে পছন্দ করে। এটি যেমন ডাকা সহজ তেমনই বেশ শ্রুতিমধুর। প্রতি কান্ডে গাছটির একটি পাতা থাকে শুধু। এই গাছের যত্ন নিতে হয় অনেক। তাই অনেকেই এড়িয়ে যান ইনডোর প্ল্যান্ট রুপে এই গাছ নিতে। তবে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই গাছের জুড়ি মেলা ভার। গাছটি নিয়মিত পানি প্রদানে সুস্থ থাকে। তাই আপনি যদি যত্নবান গাছপ্রেমী হন এই গাছটি আজই নিয়ে ফেলুন। দাম তেমন বেশি না।
৪. এ্যালো ভেরা ভেষজ গুনসম্পন্ন বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে পরিচিত গাছের নাম এই এ্যালো ভেরা। গাছটির ভেষজগুণসম্পন্ন। তাই এই গাছ সবার প্রিয়। জন্য উপকারী বিধায় মেয়েদের মধ্যে এই গাছের চাহিদা অনেক।প্রায় সবার বাসায় কম বেশি এই গাছ পাওয়া যায়।চুলের জন্য আর পেটের জন্যও উপকারী এই গাছ। তাছাড়া জরুরি মূহুর্তে একে এ্যান্টিসেপ্টিক রুপে ব্যবহার করা হয়। এই গাছকে সুন্দর করে মাঝারি সাইজের টবে রাখবেন। মূল থেকে এই গাছের চারা হয় তাই গাছ বৃদ্ধির জন্য জায়গা থাকে এমন টবেই লাগানো ভালো। মাটি শুকিয়ে যাবার আগে পানি দিবেন।এই গাছে তেমন পানির প্রয়োজন হয় না। তাই লাগানো যেমন সহজ তেমন যত্ন করা ও সহজ।
৫. পীস লিলি সৌন্দর্য বর্ধনকারী একটু বড় প্রজাতির এই গাছ, আপনি চাইলে ড্রইংরুমের একপাশে রাখতে পারেন সুন্দর দেখার জন্য। এতে করে ঘরের পরিবেশ বেশ একটা সবুজভাব এসে যায়। প্রায় ৪০ প্রজাতির গাছ আছে পীস লিলির। গাছের মাটি শুকিয়ে উঠলে তবেই পানি দিবেন। সপ্তাহে একবার পানি দিলেই হয় এই গাছে। অন্যান্য গাছের মতো এই গাছও বায়ুশোধক। আর তাই পাতা বিষাক্ত। তবে এই গাছে ফুল দেখতে বেশ আকর্ষণীয় বিধায় গাছপ্রেমীরা সৌন্দর্য রক্ষার জন্য এই গাছ ঘরের জন্য নিয়ে থাকে। মোটামুটি দাম আছে এই গাছের। তবে তা সহজলভ্য আপনার ঘরের শোভা বৃদ্ধির জন্য।
৬. মিন্ট এর ব্যবহার ও যত্ন মিন্ট নাম শুনলেই সবাই বুঝতে পারে গাছটির কথা। বাংলায় এটি পুদিনা নামে পরিচিত। হার্ব গোত্রের এই গাছ ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে এখন অনেক সমাদৃত। এই গাছ রান্নায়,পোকামাকড় দমনে,এয়ার ফ্রেশনার আর মাউথ ফ্রেশনার রুপে কাজ করে। তাছাড়া পেটের জন্য এই হার্বটি ভালো। সহজেই উৎপাদন যোগ্য এই গাছ তাই ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর তাই আপনার খাবার এ স্বাদ বাড়াতে আর ঘরের পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৭. সার্কুলেন্ট এর উপকারিতা বর্তমান বিশ্বে সার্কুলেন্ট ইনডোর প্ল্যান্ট এর চাহিদা অবিশ্বাস্য। মানুষ তার ঘরের শোভা বাড়ানোর পাশাপাশি আয়ের উৎস রুপে একে ব্যবহার করছে।এই গাছের মূল্য অনেক বেশি।দেখতে ছোট হলেও এই গাছ নাম ও দামে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। ক্যাকটাস এর মত এই গাছে তেমন পানির প্রয়োজন পড়ে না। তবে এই গাছের নিয়মিত যত্ন নিতে হয়। অনেকটা অভিমানী এই গাছ তাই যত্নবান গাছ প্রেমীরা এই গাছ থেকে আয়ও করতে পারেন অনায়াসে।
৮.স্পাইডার প্ল্যান্ট দেখতে মাকড়সার জালের মতো এই গাছের নাম তাই স্পাইডার প্ল্যান্ট। এর মূল ভূমি আফ্রিকা অঞ্চলে। এটি দুই ডিগ্রী তাপমাত্রায়ও টিকে থাকতে পারে। দ্রুত বৃদ্ধি পায় এই গাছ তাই বেশ ভালো লাগে অনেকের কাছে। এছাড়া ঝুলন্ত পাত্রেও আপনি চাইলে এই গাছ সাজাতে পারেন।
৯. মথ অর্কিড শোভা প্রদানকারী নাম শুনলেই মনে হবে কোন পোকামাকড়। কিন্তু দারুন আকর্ষনীয় এই গাছ দেখলেই আপনি মুগ্ধ হবেন। প্রায় ৬০ প্রজাতির মথ অর্কিড আছে বিশ্বে। ব্র্যাক নার্সারী অথবা অন্য অনেক ভালো মানের নার্সারীতে ৪০০ – ১৫০০ টাকায় মথ অর্কিড গাছটি কিনতে পারবেন। ঝুলন্ত টবে এই গাছ ভালো হয়। তবে এই গাছের যত্ন নিয়মিত নিতে হবে। না হয় অভিমানী এই গাছ নষ্ট হয়ে যায় সহজেই। আদ্রর্তা ঠিক থাকলে খুব ভালো বেড়েউঠে এই গাছটি।
১০. মেইডহেয়ার ফার্ণ মেইডহেয়ার ফার্ণ নাম শুনলেই চোখে ভাসে একগুচ্ছ চুল। যদিও চুলের মত দেখতে। তাও এই গাছের একটি আলাদা মাধুর্য আছে। গাছ প্রেমীদের বিমোহিত করে। ২৫০ টির মতো প্রজাতি আছে এই ফার্ণ গাছের।সূর্যের আলো থেকে দূরে যেকোন আর্দ্র স্থানে এই গাছে সুন্দর করে বেড়ে উঠে।
১১. মুনলাইট পথোস (Moonlight Pothos)। বাংলাদেশে আসা পোথোস গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে মুন লাইট পোথোস। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার রেইন ফরেস্টে এর জন্ম। তাই মুন লাইট পেথোসের যত্নের মুল মন্ত্র হলও গরম ভ্যাঁপসা পরিবেশ। অর্থাৎ এই গাছ গরম আবহাওয়া এবং সেই সাথে প্রচুর জলীয়বাস্প পছন্দ করে। আর এই কারনে শীত প্রধান দেশের জন্য এটা লালন পালন কষ্টকর হলেও আমাদের দেশের জন্য কিন্তু খুবই সহজ। আমার মুনলাইটের অভিজ্ঞতা খুব অল্প সময়ের কিন্তু এই অল্প সময়েই যেটুকু বুঝেছি, বাংলাদেশের জন্য এটা একটা পারফেক্ট ইনডোর প্ল্যান্ট।
টিপস ও সতর্কতা যেহেতু ঘরের ভিতরে লাগানো হয় তাই অনেকেই একে তেমন যত্ন নিতে চায় না। তবে এই গাছের ও যত্নের প্রয়োজন আছে। আর তাই গাছ কেনার আগে অবশ্যই গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে জেনে নিবেন। আর সেই অনুযায়ী কাজ করবেন। আর সপ্তাহে ১ বাররোদে দিবেন। এতে গাছ সুস্থ থাকে আর বেড়ে উঠে সুন্দর ভাবে। নিয়মিত পরিচর্যার ফলে এই গাছ আপনার ঘরের যেমন শোভাবর্ধক রুপে কাজ করে।তেমনই আপনার পরিবেশ সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর দেরি না করে এখনই নিয়ে আসুন আপনার পছন্দসই ইনডোর প্ল্যান্ট। আর সবুজের ছোঁয়ায় জীবনকে করুন প্রাণবন্ত।