পিস-টিভির সাবেক সঞ্চালক এবং আইএসআইএস-এর প্রচারক মুসা সেরান্টোনিও সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নিজেকে নাস্তিক বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনে তার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকার, তিনি এ কথা জানান।
৩৭ বছর বয়সী সেরান্টোনিও ইতালিয়ান অস্ট্রেলিয়ান মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ভাষা ও ইসলামের ইতিহাস নিয়ে তার আগ্রহ ছিল প্রবল।
একজন শেতাঙ্গ-ধর্মান্তরিত হিসেবে তিনি শীঘ্রই বিখ্যাত হয়ে যান এবং অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ভারত, কুয়েত, কাতার, ফিলিপাইন সহ আরও কিছু দেশে তিনি ইসলাম সম্পর্কে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন।
ড. জাকির নায়েকের পিস টিভির অনেকগুলো টক-শো এবং ইসলামিক অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন। এছাড়া তিনি ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত পিস কনফারেন্সের প্রধান অতিথিও হয়েছেন।
সেরান্টোনিও ইসলামে উল্লেখিত এন্ড অব টাইমের একজন অনুরাগী ছিলেন। তিনি তার ফেসবুক ও ইউটিউব পোস্টে ইমাম মাহাদির আগমন, দাজ্জালের উত্থান এবং মালহামা (গ্রেট ব্যাটল) নিয়েই ঘুরেফিরে কথা বলতেন।
সেরান্টোনিও সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের নিন্দা করতেন পশ্চিমাদের সাথে তাদের সুসম্পর্কের জন্য। তিনি এই দেশগুলোকে ‘তাগুত’ বলতেন।
২০১৪ সালের দিকে তার ফেসবুক ফলোয়ার ছিল ১২ হাজার। এবং তিনি এই প্লাটফর্মটিকে আইএসআইএসের সপক্ষে কথা বলার জন্য ব্যবহার করতেন।
কেন সেরান্টোনিও ইসলাম ত্যাগ করলেন?
আটলান্টিকের সূত্র মতে, সেরান্টোনিও কুরআনে উল্লেখিত জুলকারনাইন এবং আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন।
“সেরান্টোনিও জুলকারনাইন এবং ইতিহাসের দ্য আলেক্সান্ডারের মধ্যে কোনও সাদৃশ্য খুঁজে পাননি। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সিরিয়ার ভাষায় লেখা আলেক্সান্ডারের ইতিহাসের সাথে তিনি জুলকারনাইনের মিল পেয়েছেন।”
আটলান্টিক সেরান্টোনিও-কে উদ্ধৃত করে জানায়, “এটা যখন বুঝলাম যে জুলকারনাইন কোন বাস্তব চরিত্র নয় বরং আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের উপর তৈরি একটা কল্পিত চরিত্র, তখন আমি একমাত্র একটি সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতে পারলাম, আর তা হলো: কুরআন দৈব অনুপ্রাণিত কিছু নয়।”
সেরান্টোনিও এখন একজন নাস্তিক। যে কিনা রিচার্ড ডাউকিন্সের অনুরাগী।
কুরআনে উল্লেখিত জুলকারনাইনের বাস্তবতা
কুরআন জুলকারনাইন নামে এক রাজার কথা বলে, যাকে আল্লাহ বিশাল এক সাম্রাজ্য দিয়েছিলেন। যদিও ট্রাডিশনাল মুসলিম পণ্ডিত ও ইতিহাসবিদরা জুলকারনাইনের ব্যাখ্যাকে তর্কের বিষয় হিসেবে দেখেন।
তাদের তর্কটা হলো, “কুরআনের কোথাও উল্লেখ নেই যে জুলকারনাইন (আলেক্সান্ডার) কতদিন বেঁচে ছিলেন এবং কোন যুগে সে বেঁচে ছিল।”
তারা বলেন, “জুলকারনাইন, যে কুরআনে উল্লেখ আছে, তিনি আলেক্সান্ডার দ্য ম্যাসেডোনিয়া বা গ্রিক, যে আলেকজান্দ্রিয়া তৈরি করেছেন, তিনি নন। এ হচ্ছে সেই আলেক্সান্ডার যে কিনা ৩৩ বছর বয়সে মারা যান। যেমনটা খ্রিস্ট ধর্মের বইতে উল্লেখ আছে। যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৩২৪ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
পণ্ডিতরা আরও বলেন, জুলকারনাইন, যে কুরআনে উল্লেখ করা আছে, সে নবী আব্রাহামের সময়ে বেঁচে ছিলেন এবং এটা বলা হয় যে, তিনি আব্রাহামের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি হজ্বেও যান।
তবে পণ্ডিতরা তাকে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। তিনি আসলে নবী নাকি ধার্মিক দাস নাকি রাজা এই নিয়ে তারা একমত নন, তবে তারা এই নিয়ে একমত যে, তিনি মুসলিম ছিলেন, একেশ্বরবাদী ছিলেন এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত ছিলেন।
বিখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনে খাতির তার রচিত বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১/৪৯৩)-তে উল্লেখ করেন, আলেক্সান্ডার-ই ছিলেন জুলকারনাইন। তিনি দ্য ম্যাসেডোনিয়ান, দ্য গ্রীক, দ্য ইজিপশিয়ান, আলেকজান্দ্রিয়ার নির্মাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যার জীবনের ঘটনার উপর ভিত্তি করেই গ্রীকদের ক্যালেন্ডার তৈরি হয়। তিনি প্রথম আলেক্সান্ডারের অনেক পরে এসেছেন। এটা যিশুখ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৩০০ বছর আগের ঘটনা। দার্শনিক এরিস্টটল ছিলেন যার মন্ত্রী এবং যিনি দার ইবনে দার (দারিউস)-কে হত্যা করেন। পার্সিয়ার রাজাদের অপদস্থ করেন এবং তাদের ভূমি দখল করে নেন।
উপরিউক্ত ঐতিহাসিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে, মুসলিম পণ্ডিতরা বলেন, আমরা তার উপর কথা বলেছি কারণ অনেকে ভাবে যে তারা এক এবং কুরআনে যার উল্লেখ আছে, তার মন্ত্রী ছিলেন দার্শনিক এরিস্টটল, যার ফলে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পূর্বেকারজন ছিলেন একজন ধার্মিক দাস এবং একজন রাজা। পরে ধর্ম ত্যাগ করে এবং তার একজন দার্শনিক মন্ত্রী ছিলেন। এই দুইজনের মধ্যে প্রায় দুই হাজার বছরের ব্যবধান। তারা এক নয় এবং তাদের মধ্যে কোন মিলও নেই। মিল শুধু মাত্র আছে বোকাদের মাথায়, যারা কিছুই জানে না।