ডেনিস হোপ
ডেনিস হোপ

চাঁদে জমি বিক্রি করা সেই ব্যক্তির পরিচয়

সম্প্রতি হিড়িক পড়ে গেছে চাঁদে জমি কেনার একটি বিষয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে যেন হিড়িক পড়ে গেছে এটার। সম্প্রতি এক বাংলাদেশি নাগরিক তার স্ত্রীকে চাঁদে জমি কিনে দিয়েছেন, এই ঘটনাটিই ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপর থেকেই জনমনে প্রশ্ন জাগে, জমি বিক্রি করছেন কে? তারই উত্তর মিলেছে এবার। আইনের ফাঁক গলে পুরো চাঁদের মালিকানা দাবি করে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেনিস হোপ। শুধু তাই নয়, ৩৫ বছর ধরে চাঁদের জমি বিক্রিও করে চলেছেন তিনি।

দূর থেকে যেই চাঁদকে আমরা হাতছানি দিতেই অভ্যস্ত, ভাবুন তো, সেই চাঁদে থাকবে আপনার নিজস্ব দু’কাঠা জমি! কাঠা নয় বরং একরের হিসাবে জমি কিনে, বাস্তবেই তার দলিল বগলদাবা করে ঘুরছেন অনেকে। কারণ মাত্র ২৫ মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি প্রায় ২ হাজার টাকাতেই মিলছে এক একর জমি। চাঁদে জমি বিক্রি করে, মূলত মার্কিন নাগরিক ডেনিস হোপের সংস্থা ‘লুনার অ্যাম্বাসি’। যার বাংলা অর্থ চন্দ্র দূতাবাস। তবে চাঁদের মালিকানা ‌কিন্তু হোপের। তার সংস্থাটি সব সজায়গাজমির ‘দেখভাল’ করে।

লুনার অ্যাম্বাসির সিইও হোপ নিজেই। যদিও এই সিইও’র অর্থ সেলেশ্চিয়াল এগজিকিউটিভ অফিসার। এর বাংলা অর্থ মহাজাগতিক বিশেষ অধিকর্তা। চাঁদের জমির ব্যবসার বুদ্ধি এবং রসদ দুই-ই হোপ পেয়েছিলেন তার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞানের বদৌলতে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের ফাঁকফোকরই সাহায্য করেছিল হোপকে।

জাতিসংঘ বলেছিল, বিশ্বের কোনো দেশ বা কোনো দেশের সরকার সৌরজগতের কোনো মহাজাগতিক বস্তুর উপর নিজেদের অধিকার, মালিকানা বা আইনি সত্ত্ব দাবি করতে পারবে না। ১৯৬৭ সালে আনা ওই প্রস্তাবে পৃথিবীর প্রায় সবক’টি দেশ সম্মতি দিয়েছিল।

এখানেই ফাঁক খুঁজেছেন হোপ। তার মতে কোনও ব্যক্তি যে এই দাবি করতে পারবেন না, এমনটা কোথাও উল্লেখ নেই। জাতিসংঘের প্রস্তাবের এই অসম্পূর্ণতাকে কাজে লাগিয়ে চাঁদের মালিকানা দাবি করেন হোপ, চিঠি পাঠান জাতিসংঘের কাছে। কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে তিনি ধরেই নিয়েছেন যে, জাতিসংঘের মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ।

বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত ৬০ লাখেরও বেশি ক্রেতার কাছে চাঁদের ৬১.১ কোটি একর জমি বিক্রি করেছেন হোপ। এর মধ্যে ৬৭৫ জন নামী তারকাও জমি কিনেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ক্রেতাদের মধ্যে নাকি তিন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, জিমি কার্টার ও রোনাল্ড রিগ্যানও রয়েছেন। আছে ম্যারিয়ট হিলটনের মতো বেশ কিছু হোটেল কর্তৃপক্ষও।

ক্রেতার ব্যাপারে কোনো বাছবিচার নেই হোপের। তারকা থেকে সাধারণ চাকুরিজীবী সবাই রয়েছেন তার ক্রেতার তালিকায়। তার দাবি, চাঁদের জমির চাহিদা ভালই। অনেকে আবার রিপিট কাস্টমারও হয়েছেন। হোপ জানিয়েছেন,তার জমি বিক্রির বিষয়টি বৈধ। কারণ দলিল, মৌজাসহ সব আইনি নথিও রয়েছে তার। তার ভাষ্য, চাঁদের সবচেয়ে বৃহদাকৃতি জমির অংশটিতে ৫৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৪০ একর জায়গা আছে। যদিও সেই জমির ক্রেতা এখনও পাননি। বেশি চাহিদা ১৮০০-২০০০ একরের জমিগুলোর।

পৃথিবীর জমির চেয়ে হোপের চাঁদের জমির দাম অনেকটাই কম, তাই এই জমি কেনা সাধারণ জনগণের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। হোপ বলেন, একরপ্রতি ২৪.৯৯ মার্কিন ডলার থেকে শুরু হয়ে তার জমি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ ডলার পর্যন্ত। তবে বেশি দামের জমিও আছে। এক একটি মহাদেশের সমান সেই জমির দাম প্রায় ১৪ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

হোপের জমি কিনতে হলে সরাসরি তার অফি‌সে যে‌তে হ‌বে। অথবা তাদের ও‌য়েবসাইটেও যোগাযোগ করতে হবে। জমি যেমনই হোক, একটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন হোপ, বিক্রিত জমির সব জায়গা থেকেই পৃথিবীকে সমান ভাবে দেখা যাবে। প্রসঙ্গত, একটা সময়ে চাঁদ ছিল মানুষের কাছে সব থেকে আকর্ষনের একটি বিষয়। কিন্তু এখন এই চাঁদই হয়ে গেছে মানুষের কাছে বিলাসিতার একটি বিষয়।

শেয়ার করুন: