নামের ভারে পিএসজির ‘ভয়ঙ্কর’ আক্রমণভাগ মাঠে কবে স্বরূপে ধরা দিবে? নতুন জার্সিতে লিওনেল মেসিই বা কবে গোল পাবেন? দুটি প্রশ্নের জবাব যেন মিলে গেল একটি মুহূর্তে। কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় গোল উদযাপনে মেতে উঠলেন আর্জেন্টাইন তারকা। ম্যানচেস্টার সিটির টানা আক্রমণ সামলে দারুণ জয় তুলে নিল মাওরিসিও পচেত্তিনোর দল।
পাক দি ফ্রাঁসে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচটি ২-০ গোলে জেতে স্বাগতিকরা। শুরুতে ইদ্রিসা গেয়ির গোলে এগিয়ে যায় দলটি। বার্সেলোনার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে অগাস্টে পিএসজিতে যোগ দেওয়া মেসি কিছুতেই যেন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। মাঝে পরপর দুই ম্যাচে পোস্টে বল লাগার হতাশাও যোগ হয়। এরপর হাঁটুর চোটে বাইরে থাকেন দুই ম্যাচ। এদিনের ফেরার ম্যাচে অনেকটা সময় ছিলেন বিবর্ণ। অবশেষে এলো সেই বিশেষ ক্ষণ। নজরকাড়া গোলে জানান দিলেন, নতুন ঠিকানায় পুরনো রূপে আলো ছড়াতে তিনি প্রস্তুত।
বল দখল, পাসিং ও আক্রমণে আধিপত্য করা সিটির জন্য এই ফল নিশ্চিতভাবেই ভীষণ হতাশার। পুরো ম্যাচে ১৮টি শট নেয় তারা, যার সাতটি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে পিএসজির ছয় শটের তিনটি লক্ষ্যে। আর এর দুটিই জড়ায় জালে।
ম্যাচের প্রথম পাঁচ মিনিটে পিএসজির ডি-বক্সের আশেপাশেই ছিল বল। এরপর প্রথম পাল্টা আক্রমণে ওঠে তারা এবং অষ্টম মিনিটে পেয়ে যায় গোলও।
ডান দিক থেকে ওঠা আক্রমণে আশরাফ হাকিমির পাস ধরে বাইলাইন থেকে কাটব্যাক করলেন এমবাপে। ফাঁকায় বলে ঠিকমতো পা লাগাতে পারলেন না নেইমার, ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলেন রিয়াদ মাহরেজ। পেনাল্টি স্পটের কাছে বল পেয়ে বিনা বাধায় জোরালা উঁচু শটে ঠিকানা খুঁজে নিলেন গেয়ি।
এরপর কিছুটা সময়ের মাঝমাঠকেন্দ্রিক ফুটবলের পর ২৬তম মিনিটে দুবার ভাগ্যের ফেরে গোল পায়নি সিটি। কেভিন ডে ব্রুইনের ক্রসে রাহিম স্টার্লিংয়ের হেড ক্রসবারে বাধা পাওয়ার পর ফিরতি বলে বের্নার্দো সিলভার টোকাও ক্রসবারে লাগে!
৩৮তম মিনিটে বাঁদিক দিয়ে প্রতি-আক্রমণে ওঠা এমবাপে ডি-বক্সের বাইরে খুঁজে নেন আন্দের এররেরাকে। কিন্তু বিনা বাধায় গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। মুহূর্ত বাদে এমবাপের গোলমুখে বাড়ানো বলে পা লাগাতে ব্যর্থ হন মার্কিনিয়োস। ৪৩তম মিনিটে ডে ব্রুইনের ক্রসে রুবেন দিয়াসের হেড গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় পিএসজি।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিটে বেশ কয়েকটি ভালো আক্রমণ করে সিটি; কিন্তু প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণে নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। ৫৪তম মিনিটে ডে ব্রুইনের কাছ থেকে জোরালো শট দোন্নারুম্মার পায়ে প্রতিহত হয়।
এভাবেই চলছিল ম্যাচ। প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলে মাঝেমধ্যে পাল্টা আক্রমণে উঠছিল পিএসজি। ৭৪তম মিনিটে তেমনই এক আক্রমণে নিজেকে মেলে ধরলেন মেসি। বল ধরে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্তকে এড়িয়ে ডি-বক্সে এমবাপেকে পাস দিলেন মেসি। ফরাসি তারকা প্রথম ছোঁয়ায় ফ্লিকে ফেরত পাঠালেন। আর বল ধরেই বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক শটে স্কোরলাইন ২-০ করলেন আর্জেন্টাইন তারকা।
রেকর্ড ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার পিএসজির জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এটি তার ১২১তম গোল। বাকি সময়েও সমানতালে আক্রমণ করে যায় সিটি। যোগ করা সমযের প্রথম মিনিটে সুযোগও আসে; কিন্তু রিয়াদ মাহরেজের ফ্রি কিক ঠেকিয়ে জাল অক্ষত রাখেন দোন্নারুম্মা।
প্রথম ম্যাচে লাইপজিগকে ৬-৩ গোলে বিধ্বস্ত করা সিটির এদিনের একের পর এক ব্যর্থ ফিনিশিং কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার জন্য দুর্ভাবনার কারণ হতে পারে। ইউরোপ সেরার গত আসরে এই সিটির বিপক্ষে দুই লেগেই হেরে বিদায় নিয়েছিল পিএসজি। সেই ক্ষতে এবার কিছুটা প্রলেপ দিল প্যারিসের দলটি।
প্রথম রাউন্ডে ক্লাব ব্রুজের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করা পিএসজি দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। দিনের আরেক ম্যাচে লাইপজিগকে ২-১ গোলে হারানো ক্লাব ব্রুজ সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে। ৩ পয়েন্ট নিয়ে সিটি আছে তিন নম্বরে। লাইপজিগের পয়েন্ট শূন্য।