নাম নিয়ে বিড়ম্বনা

দেশের ‘শ্রুতিকটু’ ১৫০ জায়গার নাম নিয়ে বিড়ম্বনা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেক-ইন দেয়া একপ্রকার ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। কোথাও ‍ঘুরতে গেলেন কিংবা প্রয়োজনে—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে চেক-ইন দেয়াটাই যেন প্রথম কাজ। কিন্তু দেশের এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোর নাম কিছুটা বিব্রতকর। এসব জায়গায় গিয়ে চেক-ইন তো দূরের কথা, অনেকসময় নাম মুখে নেয়াও দায় হয়ে পড়ে।

দেশে বেশ কিছু স্থানের নাম আছে দ্বৈত অর্থের বা বিব্রতকর শব্দবন্ধ দিয়ে গঠিত। এমনকি অন্য কোন অঞ্চলে ওই একই শব্দের হয়ত ভিন্ন অর্থও প্রচলিত থাকতে পারে। বিষয়টি এমন- ‘এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি।’

বিব্রতকর এসব নাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই আলোচনা হয়। অনেকের মতে, অনেক স্থানের নামই কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করে। এসব জায়গার নাম পরিবর্তন করা নিয়েও অনেকের মতামত শোনা যায়। অনেকেই আবার ইতিহাসের কারণে নাম পরিবর্তনের পুরোপুরি বিপক্ষে।

বিব্রতকর এমন জায়গাগুলোর নাম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। দেশে এমন জায়গার নামের সংখ্যা ১৫০টিরও বেশি। তবে কিছু নাম একটাই বিব্রতকর কিংবা মজার; যা সবসময়ই আলোচনার তুঙ্গে থাকে।

নামরে কারণে সবচেয়ে আলোচিত যেসব জায়গাঃ কিছু কিছু জায়গা দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে বিব্রতকর নামের কারণে পরিচিত। এর মধ্যে অন্যতম পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই শব্দটি নারীর প্রজনন অঙ্গের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে নামটি নিয়ে অনেকেই অস্বস্তি বোধ করেন।

নওগাঁর পত্নীতলাও আরেকটি উদাহরণ। পত্নী শব্দটি স্ত্রী শব্দের একটি প্রতিশব্দ, যে কারণে এই উপজেলাটি নিয়েও অনেকে হাস্যরস করে থাকেন। সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেরই আপত্তি রয়েছে, জায়গাটির না নিয়ে।

এছাড়া নওগাঁর পত্নীতলা, খুলনার সোনাপোতা, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা, ঝিনাইদহের চুলকানি বাজার, চাঁদপুরের ল্যাংটার হাট, টাঙ্গাইলের মহিষমারা, গাইবান্ধা জেলা, পটুয়াখালীর গলাচিপা এবং ঢাকার ভূতের গলি উল্লেখযোগ্য।

স্কুলের নাম নিয়েও হাস্যরসঃ রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলার একটি স্কুলের নাম চুমাচুমি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ নাম নিয়েও অনেকেই ট্রল করেন ফেসবুকে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, এই নামটি এসেছে সেখানকার একটি নদী থেকে।

নীলফামারী সদর উপজেলায় ‘মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর অবস্থান। এ নাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হয়েছে। অবশ্য ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নামটি পরিবর্তন করে ‘মানুষগড়া’ রাখা হয়েছে।

এছাড়া নেত্রকোণার ‘চোরের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’, ময়মনসিংহের ‘মাড়া দেওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’, নরসিংদীর ‘কুকুরমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’, কুড়িগ্রামের ‘দুধ খাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামই। শ্রুতিকটু।

আনাচে-কানাচে অনেক নামঃ দেশের আনাচে-কানাচে অনেক নাম রয়েছে যা শ্রুতিমধুর নয়। এর মধ্যে নাথেরপেটুয়া (কুমিল্লা), ভুরংগামারি (ফরিদপুর), সোমবাজ্যাহাট (চট্টগ্রাম), বড় দারোগার হাট (চট্টগ্রাম), সাইত্রিশ (মাগুরা), ছয় চার (মাগুরা), চিলমারি (কুড়িগ্রাম), ভুয়াপুর (টাঙ্গাইল), শনির আখড়া (ঢাকা), ছাগীপাড়া (সাভার), কাউয়ার চর (বরিশাল) উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া রয়েছে- কুত্তা মারা গলি (মগবাজার, ঢাকা), সোনাডাংগা (খুলনা), তালা (সাতক্ষীরা), ঘূর্ণি (সিলেট), জিন্দাবাজার (সিলেট), নুন গোলা (চট্রগ্রাম), পাগলা (নারায়ণগঞ্জ), চ্যাংড়া বান্ধা (উত্তরবঙ্গ), হোগলাকান্ধী (মুন্সিগঞ্জ), গুহেরকান্ধী (মুন্সিগঞ্জ), ঝুমঝুমপুর (যশোর), মদনপুর (মাগুরা), গদখালী (যশোর), কুঁচেমোড়া (যশোর), বুড়িমারি (লালমনিরহাট), জাহাজমারা (হাতিয়া)।

তবে এসব এলাকায় যারা জন্মেছেন ও বেড়ে উঠেছেন, তাদের অনেকের কাছে কাছে নামগুলো আলাদা করে বিব্রতকর নয়। যে কারণে তাদের কাছে নামগুলো স্বাভাবিক শোনায়। তবে অন্যদের কাছে ব্যতিক্রমী মনে হওয়াটা স্বাভাবিক।

শেয়ার করুন: