ভিটামিন ডি
Image Source: ntvbd.com

মূত্র-অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যে ভিটামিন ডি’র ভূমিকা

দেহ সুস্থ রাখতে শুধু হৃদযন্ত্র নয়, সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো রাখার চেষ্টা করতে হয়। হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক কীভাবে সুস্থ রাখা যায় তা নিয়ে মানুষের চিন্তার যেন শেষ নেই। অপরদিকে মূত্রনালী ও এই সম্বন্ধীয় কোনো কিছুর একটা সমস্যা না হওয়া পর্যন্ত সেদিকে কারও নজরই থাকে না।

মাত্রাতিরিক্ত মূত্রত্যাগ, বেগ চেপে রাখার ক্ষমতা হারানো, ‘পেলভিক ফ্লোর’য়ের যে কোনো সমস্যা, একাধিকবার ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন’য়ে আক্রান্ত হওয়া মানেই হল আপনার মূত্রনালী, বিশেষত মূত্রথলিতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

আর এই সমস্যার অস্বস্তি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই টের পাওয়া যায়। সমস্যায় পড়ার আগেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হলে জানতে হবে কী দরকার। আর বিশেষজ্ঞদের মতে ভিটামিন ডি এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউরোগাইনোকোলজি জার্নাল’য়ের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকা মূত্রথলি অতিরিক্ত সক্রিয় হওয়া, বেগ চেপে রাখতে না পারা, ‘পেলভিক ফ্লোর’য়ের সমস্যার পেছনে দায়ী।

মূত্রনালীর প্রদাহ হওয়ার পেছনেও এই ভিটামিনের অভাব ভূমিকা রাখে। ২০২০ সালের অগাস্টে হওয়া মূত্রনালীর গবেষণাগুলো নিয়ে পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূত্রথলি আর ভিটামিন ডি’র মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে।

সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ভিটামিন ডি এবং মূত্রনালীর সুস্বাস্থ্যের মধ্যে যোগাযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউরোলজিস্ট’ ও ‘ফিমেল পেলভিক মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ ডা. মাইকেল ইংবার বলছেন, “এই সম্পর্কের কারণটা এখনও নিশ্চিতভাবে বোঝা যায়নি। তবে ভিটামিন ডি’র একটি উপকারী দিক হল মূত্রথলির জন্য অন্যান্য উপকারী পুষ্টি উপাদানগুলো আরও কার্যকরভাবে শোষণে সাহায্য করে।”

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ডি। যে কারণে অন্ত্রের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের শোষণে ভূমিকা রাখতে পারে এই ভিটামিন।” “বৃক্কের সুস্বাস্থ্য রক্ষাতেও এর ভূমিকা আছে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা ভিটামিন ডি’র ঘাটতি ও প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার ওপর এর প্রভাব নিয়ে কাজ করছে। দেখা গেছে এই ভিটামিনের অভাবে প্রস্রাবের ওপর নিয়্ন্ত্রণ কমে।”

ডা. ইংবার আরও বলেন, “মূত্রথলির জন্য ক্যালসিয়াম জরুরি। এর কারণ হল ক্যালসিয়াম পেশির সংকোচন প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। এর মধ্যে একটি পেশি হল ‘ডিট্রুজর’ পেশি, যা মূত্রথলির দেয়ালে থাকে। এই পেশি শিথিল হওয়ার মাধ্যমে মূত্রথলিতে মূত্র জমা হওয়ার সুযোগ করে দেয়। আর সংকুচিত হয়ে মূত্র বের হওয়ার সুযোগ করে দেয়।”

“ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসও একই ভূমিকা পালন করে। আর এই তিন খনিজ শরীরে যাতে ভালোভাবে শোষিত হয় সেই দায়ভার থাকে ভিটামিন ডি’র ওপর। সম্ভ্যবত এটাই মূত্রঅন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার মূল কারণ।” দূর্ভাগ্যবশত, ভিটামিন ডি পাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। ডা. ইংবার বলেন, “খাবার থেকে ভিটামিন ডি পাওয়ার উপায়- স্যামন মাছ, কড লিভার অয়েল, টুনা মাছ ইত্যাদি। যারা প্রাণিজ উৎস থেকে আসা খাবার খান না অর্থাৎ শাকাহারি, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ‘সাপ্লিমেন্ট’ খান।”

“প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ মাইক্রোইউনিট ভিটামিন ডি গ্রহণের পরামর্শ দেই আমি। তবে কেউ যদি এর অর্ধেকটাও গ্রহণ করতে পারে তবে সেটাই সিংহভাগের জন্য যথেষ্ট,” বলেন এই চিকিৎসক। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি’র আরেকটি বড় উৎস। তবে সেক্ষেত্রে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার কথা ভুলে গেলে চলবে না। আর মাত্র ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকলেই যথেষ্ট।

শেয়ার করুন: