বিসিক

এক ডিপ টিউবওয়েলে ৩৬ লাখ, ঠাকুরগাঁও যাতায়াতে ৯ লাখ

প্রকল্প বিষয়ে জ্ঞান নিতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভ্রমণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্প চলাকালে ঢাকা-ঠাকুরগাঁও যাতায়াত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ লাখ টাকা। আর একটি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করতে চাওয়া হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের আকচা মৌজায় ৫০ একর জায়গায় ৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বিসিক।

বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনে ১ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। এই প্রকল্পে একটি টিউবওয়েল স্থাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা।

অস্বাভাবিক এ ব্যয়ের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোশতাক হাসান বলেন, এই ব্যয় ডিপিপিতে থাকলেও পরবর্তীতে খরচ না হলে এগুলো আমরা সমন্বয় করে কাজে লাগাব।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, তাদের তথ্য অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে সহজেই পানি পাওয়া যায়। অর্থাৎ ওই এলাকায় ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের প্রয়োজন পড়ে না। যদি পানি পাওয়া না যায়, তাহলে ডিপ টিউবওয়েল বসাতে হয়। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় শ্যালো টিউবওয়েল বসাতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা এবং ৪ ইঞ্চি পাইপের ডিপ টিউবওয়েল বসাতে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। তবে বিসিক যেহেতু ওখানে শিল্পনগরী করবে সেহেতু অনেক পানির প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে হয়তো আরও মোটা (বেশি ইঞ্চির) পাইপ বসাতে হবে। তারপরও ব্যয় এত বেশি হওয়া কথা নয়।

এ প্রসঙ্গে বিসিক চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোশতাক হাসান উল্টো বলেন, ‘এখানে ব্যয় বরং কমা ধরা হয়েছে। একটি শিল্প নগরীতে ৩৬ লাখ টাকা দিয়ে ডিপ টিউবওয়েল হয় না। ডিপ টিউবওয়েল বসাতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা টাকা লাগে। আমরা যেটা নির্ধারণ করেছি সেটা অনেক আগের ব্যয়ের হিসাবে করা। এখন করতে গেলে আরও বেশি টাকা খরচ হবে।’

এই প্রকল্পে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প নগরী করতে কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়া বা প্রশিক্ষণের আদৌ কোনো দরকার আছে কি না- জানতে চাইলে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পে সাধারণত বৈদেশিক প্রশিক্ষণ হয় না। আমি এখানে আড়াই বছরে একটি প্রকল্পেও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ পাইনি। এটা হয়তো অন্য কারণে হতে পারে। তাছাড়া যেহেতু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পনগরী বাংলাদেশে আর নেই, সেজন্যই মনে হয় এটা রাখা হয়েছে। কারণ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এসব নগরীতে কীভাবে খাদ্য প্রক্রিয়া করে সেটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতেই মনে হয় খাতটি রাখা হয়েছে ।’

কোন কোন দেশে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ডিপিপি না দেখে বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয় কাছাকাছি হবে। ভারত, থাইল্যান্ড অথবা ইন্দোনেশিয়া হতে পারে।

প্রকল্পে দেশের মধ্যে ঢাকা-ঠাকুরগাঁও যাতায়াত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ লাখ টাকা। এত বেশি যাতায়াত ব্যয় ধরার কারণ কী? এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হয়তো প্রতিমাসে একবার করে প্রকল্প পরিচালক ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও যাবেন। প্রতি মাসে একবার গেলে তিন বছরে ৩৬ বার হয়। এটা সম্ভবত পিডির যাতায়াতের জন্যই ব্যয় করা হবে। পিডি যদি ঠাকুরগাঁও থাকেন তাহলে প্রতিমাসে আমাদের হেড অফিসে মিটিংয়ে তার আসতে হবে। পিডি এলে ট্রেনে, বাসে নাকি বিমানে আসবেন তার ওপর ব্যয়টা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিপিপি দেখলে বিস্তারিত বলতে পারব। তাছাড়া খাতে টাকা থাকলেই যে খরচ করতে হবে বিষয়টা সেরকম নয়। প্রয়োজনে সংশোধনীতে ব্যয় কমানো হবে।’

বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের কাছ থেকে আমরা যত টাকা নিই, সেগুলো ৫ শতাংশ সুদে আবার ফেরত দিই। যেমন- এই প্রকল্পটি করতে যে ব্যয় হবে সেই টাকা আমরা সুদসহ ফেরত দেবো। এজন্য আমাদের শিল্প নগরীগুলো ক্ষুদ্র শিল্পের পাশাপাশি মাঝারি ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দিচ্ছি। এতে করে পরিবেশের মান বজায় রেখে এবং কৃষি জমির ক্ষতি না করে দেশব্যাপী কলকারখানাগুলো একই প্লাটফর্মে আনা সম্ভব হবে এবং এতে ভালো সাড়া পাচ্ছি।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ঠাকুরগাঁও জেলা সফরের সময় এ জেলায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিসিককে চিঠি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৫০ একর জমিতে বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নে ৫০ একর জায়গায় বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী স্থাপন করা হবে।

শেয়ার করুন: