রোজা

সৌদির সাথে মিলে আরাফার রোজা ও কিছু কথা

রেজাউল করিম আবরার: আরাফার রোজা সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে রাখার কথা ইদানিং খুব জোরেশোরে কেউ কেউ প্রচার করছেন৷ কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে সেটা প্রচার করছেন৷ আল্লাহ রাব্বাল আলামিন বিশেষ কিছু দিনকে সম্মানিত করেছেন৷ সে দিনের বিশেষ কিছু আমল দিয়েছেন৷ আশুরা, আরাফা হলো অন্যতম৷

প্রথমে আমরা আশুরার দিন নিয়ে কথা বলব৷ আশুরার রোজার ফজিলতের কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে৷ তিনি বলেন,
"صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ". অর্থাৎ আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন৷ (মুসলিম: হাদিস নং, ১১৬২)

আশুরার দিন হলো মুহাররামের ১০ তারিখ৷ এ তারিখে রোজা রাখার ফজিলতের কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন৷ আর মুহাররামের ১০ তারিখ পুরো পৃথিবীতে একই দিনে হয় না৷

সৌদি আরবে যে দিন ১০ মুহাররাম হয়, বাংলাদেশে সেদিন ৯ মুহাররাম হয়৷ বাংলাদেশের কোন শায়খই সৌদির সাথে মিলিয়ে আশুরার রোজা রাখেন না৷ অথচ আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারি যে, আজ সৌদিতে আশুরার দিন অতিবাহিত হচ্ছে!

এর কারণ হলো, তারিখের সম্পর্ক হলো চাঁদের সাথে৷ আর চাঁদের ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ হলো, প্রত্যেকেই তাদের উঁদয়স্থলে চাঁদ দেখে চাঁদের তারিখ হিসেবে রোজা রাখবেন৷

এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা না করে মাত্র একটি হাদিস উল্লেখ করছি৷ কুরাইব রাহি. বর্ণনা করেন,
بَعَثَتْهُ إِلَى مُعَاوِيَةَ بِالشَّامِ قَالَ فَقَدِمْتُ الشَّامَ فَقَضَيْتُ حَاجَتَهَا وَاسْتُهِلَّ عَلَىَّ رَمَضَانُ وَأَنَا بِالشَّامِ فَرَأَيْتُ الْهِلاَلَ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ ثُمَّ قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فِى آخِرِ الشَّهْرِ فَسَأَلَنِى عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - ثُمَّ ذَكَرَ الْهِلاَلَ فَقَالَ مَتَى رَأَيْتُمُ الْهِلاَلَ فَقُلْتُ رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ. فَقَالَ أَنْتَ رَأَيْتَهُ فَقُلْتُ نَعَمْ وَرَآهُ النَّاسُ وَصَامُوا وَصَامَ مُعَاوِيَةُ. فَقَالَ لَكِنَّا رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ السَّبْتِ فَلاَ نَزَالُ نَصُومُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلاَثِينَ أَوْ نَرَاهُ. فَقُلْتُ أَوَلاَ تَكْتَفِى بِرُؤْيَةِ مُعَاوِيَةَ وَصِيَامِهِ فَقَالَ لاَ هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-.

আমাকে আমার মালিক মুয়াবিয়া রাঃ এর কাছে শামে পাঠান।আমি আামার প্রয়োজন যখন শেষ করলাম,এমতাবস্থায় রমযান চলে আসল।আমরা শামে জুমার রাত্রিতে চাঁদ দেখলাম।মাসের শেষ দিকে আমি মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলাম।তখন ইবনে আব্বাস রাঃ আমাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন?আমি বললাম:আমরা জুমার রাতে চাঁদ দেখছি।তিনি বললেন:তুমি নিজে দেখেছ?আমি বললাম:হ্যাঁ,আমি নিজে দেখেছি এবং লোকেরা দেখে রোযা রেখেছে।এমনকি মুয়াবিয়া রাঃ ও রোযা রেখেছেন।তখন ইবনে আব্বাস বললেন:কিন্তু আমরা চাঁদ দেখেছি শনিবারে।সুতরাং আমরা মাস ত্রিশ হওয়া পর্যন্ত অথবা উনত্রিশ তারিখে চাঁদ দেখা না পর্যন্ত রোযা ছাড়বনা।আমি তখন তাকে বললাম:আপনার জন্য কি মুয়াবিয়ার চাঁদ দেখা এবং রোযা রাখা যথেষ্ট নয়?তিনি বললেন:না।আমাদের কে রাসূল সাঃ এমনভাবে আমল করতে আদেশ দিয়েছেন।(মুসলিম,১০৮৭.মুসনাদে আহমদ,২৭৮৯.তিরমিযি,২৩৩২)

হাদীসে লক্ষ করুন। শামবাসীরা চাঁদ দেখেছে মদিনার একদিন আগে।সে হিসেবে মদীনাবাসীরা নিশ্চিত প্রথম রোজা ভেঙ্গেছে। কিন্তু ইবনে আব্বাস রা. বলেন,আমরা শামের চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল নয়। বরং আমরা ঈদ করব মদিনার উদয়স্থলে চাঁদ দেখা অনুসারে। এ mটার কারণে বাংলাদেশে কোন বিধান আরোপিত হবে না৷।সেটার নির্ভর হল বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখার উপর।

এবার যাই আরাফার রোজা প্রসঙ্গে৷ অারাফার রোজার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده. অর্থাৎ আরাফার দিনে রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা পেছনের এবং সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন৷

আরাফার রোজার ফজিলত এবং আশুরার ফজিলতের ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই ধরণের শব্দচয়ন করেছেন৷ আশুরার ক্ষেত্রে তারিখের হিসেব করলে আরাফার ক্ষেত্রে কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে এড়িয়ে যেতে চান ৷

আরাফার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন৷ : أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصوم تسعا من ذي الحجة ويوم عاشوراء وثلاثة أيام من كل شهر أول اثنين من الشهر وخميسين অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিলহজ মাসের নয় তারিখ আশুরার দিন এবং প্রত্যেক মাসের তিনদিন রোজা রাখতেন৷ (নাসায়ি: ২৪১৭)

এ হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ বলেন, وهو محمول على أنه لم يكن محرما لأن الثابت في الصحيحين أنه كان مفطرا يوم عرفة
অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইহরাম অবস্থায় থাকতেন না তখন নয় তারিখ রোজা রাখতেন৷ আরাফার ময়দানে থাকলে রোজা পারতেন না৷

এ হাদিস থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে জানতে পারলাম যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিলহজের মাসের নয় তারিখে রোজা রাখতেন৷ এর থেকে সহজেই অনুমেয় যে, আমরাও আমাদের নয় তারিখে রোজা রাখব৷

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরেকটি হাদিস খেয়াল করুন৷ জাবের রাযি. বর্ণনা করেন, «كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يكبر من يوم عرفة من صلاة الغداة إلى صلاة العصر آخر أيام التشريق» অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিনের ফজর থেকে আইয়্যামে তাশরিকের শেষদিন আসর পর্যন্ত তাকবির বলতেন৷

আলি রাযি. থেকেও হাসান সনদে কিতাবুল আছারে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে৷ আমাদের দেশের যে সকল শায়খরা যুক্তি দিয়ে সৌদির সাথে মিলিয়ে আরাফার রোজা রাখেন, তারা কিন্তু সৌদির সাথে মিলিয়ে আরাফার দিন থেকে তাকবিরে তাশরিকের আমল শুরু করেন না৷

শেয়ার করুন: