প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তৈরি হবে ভ্যানিলা ফ্লেভার। এই ভ্যানিলা ব্যবহার করে বানানো হবে আপনার পছন্দের আইসক্রিম, কেক। বানোয়াট গল্প নয়; স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এরই মধ্যেই ভ্যানিলা বানানোর এই প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একবার ব্যবহারযোগ্য বোতলসহ নানা ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্যে টেলিপ্যাথালিক নামের এক ধরনের অ্যাসিড থাকে। এই অ্যাসিডের সঙ্গে ভেনিলিনের রাসায়নিক গঠনে বেশ মিল রয়েছে। ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার সহায়তায় জৈব প্রযুক্তির সাহায্যে এই অ্যাসিডকে ভ্যানিলিনে রূপান্তরিত করা যায়। ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক দিন রাখলে ৭৯ শতাংশ অ্যাসিড ভ্যানিলিনে রূপান্তরিত হয়। যার গন্ধ ও স্বাদ ভ্যানিলা বিন থেকে প্রস্তুত ভ্যানিলার মতোই।
গ্রিন কেমিস্ট্রি জার্নালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে বিশ্বে ভ্যানিলার চাহিদা ছিল ৩৭ হাজার টন। ২০২৫ সালে এ চাহিদা ৫৯ হাজার টনে পৌঁছাবে। এ চাহিদা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ভ্যানিলা বিন থেকে এ বিরাট চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ পূরণ হয়। বাকি ৮৫ শতাংশ আসে জীবাশ্ম জ্বালানির রাসায়নিক (পেট্রোলিয়াম) থেকে। প্লাস্টিক দিয়ে ভ্যানিলা বানানো শুরু হলে বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য আর চিন্তা করতে হবে না। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক রিসাইকেলেরও একটি চমৎকার খাত তৈরি হবে।
এ গবেষণায় প্লাস্টিকের বর্জ্যকে বিশ্বের জন্য একটি বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, প্রতি মিনিটে বিশ্বে ১০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল বেচাকেনা হয়। এর মাত্র ১৪ শতাংশ পুনরায় ব্যবহার করা হয়। বাকি ৮৬ শতাংশ বোতল যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। ভ্যানিলা বানানোর কার্যক্রম বাণিজ্যিকভাবে শুরু হলে প্লাস্টিক বর্জ্যও কমে আসবে।
এ প্রসঙ্গে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক এবং এই গবেষণায় নিযুক্ত বিজ্ঞানী স্টিফেন ওয়ালেস বলেন, আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল প্লাস্টিকের প্রতি মানুষের মনোভাব বদলে দেওয়া। প্লাস্টিককে ক্রমবর্ধমান সমস্যা বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা প্লাস্টিককে এমন কোনো কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম যাতে এটিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়।
কসমেটিকস এবং ভ্যানিলা সুগন্ধি বানাতেও প্লাস্টিক থেকে উৎপাদিত এ ভ্যানিলা ব্যবহার করা যাবে বলে দাবি করেছেন স্টিফেন ওয়ালেস ও তাঁর দল।
রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির পক্ষ থেকে এ এলিস ট্রাফোর্ড বলেন, প্রকৃতির ক্ষতি না করে প্লাস্টিক বর্জ্যকে রিসাইকেল করে ব্যবহার উপযোগী করতে পারাটা একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এতেই প্রমাণিত হয় আমরা গ্রিন কেমিস্ট্রি দুনিয়ার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি।