সৌদি প্রিন্স

নতুন এয়ারলাইন্স আনছে সৌদি আরব

দূরপাল্লার বিমানযাত্রা (ফ্লাইট) সেবা খাতে মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ কাতার এবং আমিরাতের একচেটিয়া ব্যবসায় ভাগ বসাতে নতুন একটি এয়ারলাইন্স চালুর পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের বর্তমান ডি-ফ্যাক্টো নেতা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ট দু’জন ব্যক্তি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য দিয়েছেন।

২০১৭ সালে যুবরাজ হিসেবে অভিষেকের পর থেকে দেশের বিভিন্ন উৎপাদন ও সেবা খাতের বিকাশে জোর দিচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবকে তেলভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সরিয়ে শিল্পোৎপাদন ও সেবা খাতভিত্তিক অর্থনীতির দেশে উন্নীত করাই এর মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা।

মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ট ব্যাক্তিরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি যাত্রীসেবা ও পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই নতুন এয়ারলাইন্স আনার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। নতুন এই এয়ারলাইন্সটির প্রাথমিক মূলধন আসবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) থেকে।

তারা জানিয়েছেন, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদকে কেন্দ্র করে চালু করা হবে এই এয়ারলাইন্স। অর্থাৎ এই এয়ারলাইন্সের সরাসরি ও কানেক্টিং ফ্লাইটের বিমানসমূহ রিয়াদ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নতুন এয়ারলাইন্সটি হবে দেশটির ষষ্ঠতম সরকারি বিমানসেবা প্রতিষ্ঠান।

২০২০ সালে মহামারি শুরুর আগ পর্যন্ত দূরপাল্লার আন্তর্জাতিক ফ্লাইটসেবায় এশিয়ার যে কয়েকটি দেশের একচেটিয়া প্রধান্য ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি এয়ারলাইন্স এমিরেটস এবং কাতারের সরকারি এয়ারলাইন্স কাতার এয়ারওয়েজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিমানসেবা প্রতিষ্ঠান। সেই তুলনায় সৌদি আরবের প্রধান সরকারি বিমানসেবা প্রতিষ্ঠান সৌদিয়া এয়ারলাইন্স বেশ নিষ্প্রভ।

তবে মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে এমিরেটস ও কাতার এয়ারওয়েজ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারকে এমিরেটস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকার ফলে শুধু ২০২০ সালেই প্রায় ৫৫০ কোটি ডলার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিমান ও জাহাজসেবা খাতকে ঢেলে সাজাতে ইতোমধ্যে ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির সরকার।

কাতার এয়ারওয়েজের ক্ষয়ক্ষতির অংক এখনও জানা না গেলেও কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মহামারির ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তারাও।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষকরা বলছেন, দূরপাল্লার আন্তর্জাতিক বিমান সেবা খাতের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সাবেক দুই জায়ান্টের সাম্প্রতিক নাজুক পরিস্থিতিরই সুযোগ নিতে চাইছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

আরব গালফ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ রবার্ট মোগিলেনিকি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই বিমানসেবা খাতে পরস্পরকে টেক্কা দিতে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে বিভিন্ন দেশের এয়াললাইন্স কোম্পানিগুলোর মধ্যে। মধ্যপ্রাচ্যও তার বাইরে নয়।’

‘একসময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। তবে ইদানিং দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধের পরিবর্তে বাণিজ্যক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতাতেই তাদের আগ্রহ বেশি। এর কিছু ভাল দিক যেমন আছে, কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। প্রতিযোগিতা যদি তীব্র হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলে ফের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

শেয়ার করুন: