নিয়ন পোথোস

সবুজ পাতা ও ফুলে ঘেরা শখের বারান্দা

শহরের জীবনযাপনে যেদিকে তাকানো যায় শুধু ইট-পাথরের দালান। আর সেখানে সবুজ প্রকৃতি তো অনেক দুরের বিষয়! দালানকোঠার ভিড় ঠেলে এক টুকরো নীল আকাশ দেখার সুযোগটা পর্যন্ত নেই। তাই দালানকোঠার মাঝেই নিয়ে আসুন প্রকৃতির ছোঁয়া। আর এর জন্য আপনার নিজের রুম সংলগ্ন ছোট্ট বারান্দাটাকে বানিয়ে ফেলুন এক টুকরো অরণ্য। নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নার্সারি। খুব সহজেই এসব নার্সারি থেকে চারা কিনে গড়ে তোলা যায় এক টুকরো স্বর্গ, শুধুমাত্র নিজের জন্যে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক আপনার শখের বারান্দাটি কিভাবে সাজাবেন-

১. বিভিন্ন ধরনের গাছ 
বারান্দায় গাছ এনে দিবে আপনাকে প্রকৃতির ছোঁয়া। আজকাল নার্সারিগুলোতে মোটামোটি সব ধরনের চারা পাওয়া যায়। সাথে তারা বিভিন্ন সাইজের ছোটবড় টবও বিক্রি করে। বারান্দার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সবার আগে মাথায় আসে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। বেলি, জবা, হাসনাহেনা, গোলাপ, রঙ্গন, অ্যাডেনিয়াম, কাঁটামুকুট, অপরাজিতা, মর্নিংগ্লোরি, পরতুলিকা, রেইনলিলি থেকে শুরু করে শাপলা, পদ্ম, স্বর্ণকুমুদ, লেটুসপান ইত্যাদি সবকিছু দিয়েই আপনি আপনার ছোট্ট বারান্দাটিকে সাজিয়ে তুলতে পারবেন। পর্যাপ্ত রোদ, আলো, বাতাস পেলে ফুলের এই গাছগুলো আপনার পুরো বাসাটির শোভা বাড়িয়ে তুলবে হাজারগুণ। বিভিন্ন বর্ণ যেমন- নীল, সাদা, বেগুনি রঙের ডাবল অথবা সিঙ্গেল পাপড়ির অপরাজিতা, বিভিন্ন বর্ণের মর্নিংগ্লোরির শাখা-প্রশাখা বারান্দার গ্রিল বেয়ে বড় হয়, তখন সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে যায়।

২. জলজ বাগান
যদি শখের বারান্দা সাজানো অনন্য করতে চিন্তা করেন তবে জলজ বাগান করতে পারেন। বড় সাইজের কোন গামলায় পানি ভরে তাতে একটা টব বসিয়ে খুব সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন জলজ বাগান। টবের ভিতর শাপলা, পদ্ম, স্বর্ণকুমুদ, মেক্সিকান সোরড লিলি, জলগোলাপের মত জলজ গাছগুলো লাগাতে পারলে যেন বারান্দার সেই ছোট্ট আপন অরণ্যটা সম্পূর্ণ হয়। আর বারান্দায় জলজ বাগান তৈরি করতে হলে অবশ্যই গামলার পানিতে গাপ্পি মাছ, মলি মাছ ছাড়তে হবে কারণ গাপ্পি মশার ডিম খায়। আর এ ধরনের জলজ বাগান মশার ডিম পারার জন্য উপযুক্ত স্থান। চাইলে এই জলজ বাগানের সৌন্দর্য আরেকটু বাড়ানো জন্য ছোট্ট একটা ফোয়ারার ব্যবস্থা করা যায়। বাজারে বিশেষ করে অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকানগুলোতে মোটর পাওয়া যায়। সেই মোটরটিকে বড় গামলার ভিতরে রেখে সাথে একটা লম্বা টিউব লাগিয়ে টিউবের অপর প্রান্ত মাটির হাড়ি, প্লাস্টিকের পুরনো বোতল অথবা বাঁশ ফুটো করে আটকিয়ে বিভিন্নভাবে ডিজাইন করে খুব সহজেই জলজ বাগানের মাছগুলোর জন্য বানিয়ে ফেলা যায় ছোট্ট একটি জলপ্রপাত। সব শেষে পানির উপর বিভিন্ন ধরনের পানাও চাইলে দিতে পারেন। 

৩. কন্টক বা ক্যাকটাস গাছ
যদি মনে হয় বিভিন্ন কর্ম-ব্যস্ততার জন্য গাছগাছালির যত্ন নেয়া সম্ভবনা। সেক্ষেত্রে আপনি লাগাতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস বা  সাকুলেন্ট। এই গাছগুলোতে খুব একটা পানি দিতে হয়না। মরু গাছ কিনা তাই মাটি যখন একেবারেই শুকিয়ে যাবে তখন পানি স্প্রে করে দিলেই হবে। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি যাতে না জমে। পানি গোড়ায় জমে গেলে এ ধরনের গাছ পচে যায়। আর সারাদিন মোটামুটি ৫ ঘণ্টা রোদ পায় এমন জায়গায় রেখে দিলে আপনি নিশ্চিন্ত মনে টানা কয়েকদিন কাটিয়ে দিতে পারবেন।

৪. রোদবিহীন বারান্দা সাজুক পাতাবাহারে
আপনার ঘরের বারান্দায় যদি রোদ না আসে সেক্ষেত্রে লাগিয়ে দিন কয়েক প্রজাতির পাতাবাহার। রোদ যেহেতু আসে না তাই বিভিন্ন ধরনের অর্কিড ছাড়া হয়ত অন্য ফুল পাবেননা, কিন্তু বিনিময়ে পাবেন সবুজের ছোঁয়া। এছাড়া লাগাতে পারেন মানিপ্ল্যান্ট, কয়েনপ্ল্যান্ট, লাকিব্যাম্বু, পামগাছ, ইঞ্চিপ্ল্যান্ট, স্পাইডারপ্ল্যান্ট- এর মত কয়েক ধরনের গাছ। কয়েনপ্ল্যান্ট আর স্পাইডারপ্ল্যান্ট যদি সম্ভব হয় তবে সপ্তাহে ১-২ দিন রোদের একটু ব্যবস্থা করে দিতে পারলে ভালো।

৫. বক্স বারান্দা ও ছাদ হোক ছোট্ট বাগান
যদি আপনার একটি বক্স বারান্দা বা পুরো ছাদ থাকে তবে শুধু ফুল কেন, ফল থেকে শুরু করে শাকসবজি সবকিছুই লাগাতে পারবেন। আজকাল আম, কাঠাল, ডালিম, কামরাঙ্গা, লেবু, আমড়া ইত্যাদি ধরনের গাছ লাগানোর জন্য বিভিন্ন সাইজের ড্রাম পাওয়া যায়। আর এ ধরনের জায়গাতে বড় পরিসরে জলজ বাগানের ব্যবস্থাও করা যায়। আর পুরো বিল্ডিং-এর শোভা বাড়ানোর জন্য বাগানবিলাস, মাধবিলতার যেন জুড়ি নেই। এক্ষেত্রে শুরুর দিকে হয়ত পুরো বিল্ডিং-এ অরন্যের ছাপ আসবে না, কিন্তু একটু ধৈর্য ধরে ৬-৭ বছর বা তারও কম সময় অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন তখন আপনার এই অরন্যে ফুলের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের পাখি, মৌমাছি আর প্রজাপতির মেলা। 

৬. বাংলোর ক্ষেত্রে
আপনার বাড়িটা যদি বাংলো হয়ে থাকে তবে মেইন গেট থেকে বাড়ির মেইন দরজা পর্যন্ত রাস্তার উপর মাচা বানিয়ে সেখানে কুঞ্জলতা অথবা বাসরলতা লাগাতে পারেন। লতানো গাছ কিনা তাই কিছুদিন পর ছায়া তো পাবেনই সাথে ফুলে ফুলে ছেঁয়ে যাবে আপনার ঘরের প্রবেশদ্বার।

শেয়ার করুন: