বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

এমপি ও তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে দূরত্ব কমানোর ‘টোটকা’

তৃণমূল আওয়ামী লীগে চলছে নেতায় নেতায় শীতল লড়াই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের (এমপি) সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বিবাদ একেবারেই দৃশ্যমান। কোনো কোনো এলাকায় এক নেতা হয়ে উঠেছেন আরেক নেতার চক্ষুশূল। এর ফলে খেই হারাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটির সাংগঠনিক গতি।

বিষয়টি আমলে নিয়ে এরই মধ্যে এমপির সঙ্গে নেতাদের বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সংশ্লিষ্ট নেতাদের ঢাকায় ডেকে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা চলছে। দেওয়া হচ্ছে মনোমালিন্য ভোলার নানা ‘টোটকা’। জানা গেছে, গেল এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে চট্টগ্রামের তিনটি সংসদীয় আসনের উপজেলাগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে আলাদা তিনটি বৈঠক হয়।

সকালে সাতকানিয়া ও লোহাগড়া উপজেলা, বিকেল ৩টার দিকে পটিয়া উপজেলা, বিকেল ৪টার দিকে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।

সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে সাতকানিয়া ও লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এবং কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝারেন। তাঁরা বলেন, সরকারের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ কিংবা সংসদ সদস্যের কোনো অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা আমন্ত্রণ পান না। সংসদ সদস্য নিজের মতো করে নিজস্ব লোকদের নিয়ে চলেন। এসব অভিযোগের উত্তরে অভিযুক্ত সংসদ সদস্য নদভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয় না। আমাকে দলের কোনো কর্মসূচিতে ডাকা হয় না।’

কেন্দ্রীয় নেতারা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁদের একসঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেন। উপস্থিত সংসদ সদস্য ও নেতারা ভবিষ্যতে সব কর্মসূচি সমন্বয় করে পালন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। আর কর্মসূচি নিয়ে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব নিরসনে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক চলছে। গত ২ জুন চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গত রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। গত সোমবার তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হয়। তিনটি বৈঠকই জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহ্মুদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেও নেতারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে জড়িয়ে পড়েন।

সূত্রগুলো জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। আগামী ৪ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। সংগঠনে বিরোধ নিরসন করে দল শক্তিশালী করতে বিভিন্ন জেলায় বর্ধিত সভা ও সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। আগামী ২৪ জুন কোন্দলে জর্জরিত কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হবে। আগামী ১৯, ২০ ও ২১ জুন চট্টগ্রামে গিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহ্মুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা সংগঠন গোছানোর কাজ করছি। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে চট্টগ্রামের সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য বলা হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব উপজেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম জেলার সম্মেলন আয়োজন করা হবে। ঘরে বসে কোনো কমিটি হবে না। করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন, আর তা না হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বড় আকারে কোনো সভা না করে ছোট ছোট বৈঠক আয়োজন করতে যাচ্ছি। এতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার সুবিধা হয়। আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫ সাংগঠনিক জেলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর শেষ করা হবে।’ রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করছেন। আগামী ১৫ জুন পাবনা জেলা এবং পাঁচ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্যদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে।

এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘করোনার মধ্যে মাঠে দলীয় কর্মসূচি পালন করা যাচ্ছে না। সে জন্য আমরা দলীয় অভ্যন্তরীণ বিবাদগুলো মেটানোর জন্য গুরুত্ব দিচ্ছি। যেখানে যে সমস্যা আছে সেগুলো শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী অক্টোবরে আমরা রাজশাহী বিভাগের জেলা ও উপজেলাগুলোর সম্মেলন করতে চাই। সে জন্য এসব কোন্দল নিরসন জরুরি হয়ে পড়েছে।’

শেয়ার করুন: