ওয়াইস আল ক্বারনী

ওয়াইস আল ক্বারনী: সাহাবী হবার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন যে নেক সন্তান

মূল: ড. ইয়াসির ক্বাদি, অনুবাদ: লুৎফুর রহমান। ওয়াইস আল ক্বারনীর গল্প আপনাারা সবাই শুনেছেন নিশ্চই। তিনি আল্লাহর রাসূল সা. এর জামানায় ইয়েমেনে বসবাস করতেন। তিনি মদিনায় ইসলাম গ্রহণকারী ইয়ামেনের এক প্রতিনিধি দলের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।

যদিও তিনি কখনই মদিনায় গমন করেননি। তিনি সে সময়কার মানুষদের মধ্যে এক বিরাট এবং বিরল সম্মান অর্জন করেছিলেন। রাসূল সা. তাঁর নাম উল্লেখ করে প্রশংসা করেছেন (যদিও তাঁর সাথে কখনই সাক্ষাৎ হয়নি)।

হযরত উমার রা. এর খিলাফতকালে ইয়ামান থেকে এক প্রতিনিধি দল মদিনায় এসেছিল। উমার রা. স্বাভাবিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে সে প্রতিনিধি দলের জন্য মাদিনায় বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন। তিনি তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সকল কাফেলার কাছে জানতে চাইতে থাকলেন, “এখানে কি ক্বার্ণ গোত্রের কেউ আছে?”

অবশেষে এক ব্যক্তি একজন পথিককে দেখিয়ে ইশারা করলেন। তিনি সে ব্যক্তির দিকে ছুটে গেলেন, সামনে দাড়ালেন এবং উষ্ট্রীর রশি ধরে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ওয়াইস?”। তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। তিনি বললেন, ”তুমি কি ক্বার্ণ গোত্রের এবং ‘মুর্দ” পরিবারের?”। তিনি আরও বিস্মিত হলেন,তিনি বললেন, “হ্যাঁ”।

’উমর রা. তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ধবল রোগে আক্রান্ত ছিলে, এবং আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করেছেন, কিন্তু এক দিরহাম পরিমান ধবল এখনও বাকি রয়ে গেছে?”। তিনি বললেন, হ্যাঁ।

আমরা শুধু কল্পনাই করতে পারি যে, ওয়াইস কতটুকু বিস্মিত হয়েছিল, সে আবার উত্তর দিলো, “হ্যাঁ”।
তারপর উমার রা. আবার জিজ্ঞাসা করলেন. “তোমার মা কি এখনও জীবিত আছেন?”
”হ্যাঁ”।

সকল তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের পর এবং বুঝার পর যে এই সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে (আল্লাহর রাসূল সা.) তার উপস্থিতিতে বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলেন, তারপর উমার রা. বলেন, “আমি তোমার কাছে দোয়া চাচ্ছি যেন তুমি আল্লাহর কাছে আমার জন্য মাগফেরাতের দোয়া কর (আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন)।”

ইতোমধ্যে তাঁদের চারপাশে অনেক লোক জমায়েত হয়ে গেল। ওয়াইসও এ কথা জনাতো যে মদিনার বাইরে এসে যিনি দাঁড়িয়েে আছেন তিনি কে; তিনি আর কেউ নন, তিনি খলিফা স্বয়ং!

তাই ওয়াইস বললো, “বরং এটাইতো হওয়া উচিত যে আমি আপনার কাছে দোয়া চাইবো যেন আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য মাগফেরাতের দোয়া করেন। কেননা আপনি হলেন রাসূল সা. এর সাহাবী”।

এ সময় উমার রা. বললেন, “আমি শুনেছি রাসূল সা. বলেছেন; আমার উত্তরসূরিদের মধ্যে সেই ব্যক্তিটি হলো সর্বোত্তম যার নাম ওয়াইস যিনি ক্বার্ণ নামক গোত্রের লোক”।

তাঁর এক বৃদ্ধা মা আছে (সে যার সেবা যত্ন করে); তার ছিলো ধবল রোগ, তাই তার মা তার সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করেন এবং আল্লাহ তাঁর ধবল রোগ ভালো করে দেন তবে এক দিরহাম পরিমাণ ছাড়া। সে যদি কোন ব্যপারে আল্লাহর কসম করে তবে আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করেন এবং তাঁর কসম পূর্ণ করেন। যদি তোমরা তার কাছ থেকে নিজেদের ক্ষমার ব্যপারে দোয়া চাওয়ার সুযোগ পাও তবে অবশ্যই দোয়া চাইবে। (সহিহ মুসলিম)।
এ সময় ওয়াইস আল-ক্বারনী উমার রা. এবং তাঁর নিজের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফেরাতে দোয়া করেন। সে যখন ইয়েমেনে ফিরে আসলো তখন তার এ ঘটনাটা সবার মাঝে প্রচারিত হয়ে গেলো, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তাঁর কাছে দোয়া চাওয়ার জন্য আসতে শুরু করলো। তখন মনস্থির করলেন নিজেকে (মানুষের কাছ থেকে) গোপন করবেন। আর এ উদ্দেশ্যে তিনি কুফায় চলে যান। তিনি সেখানে অজ্ঞাত হয়ে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত অবধি বসবাস করেন।

তিনি ইচ্ছা করলে রাসূল সা. এর জীবনকালেই মদিনায় যেতে পারতেন এবং সাহাবী হওয়ার সম্মান অর্জন করতে পারতেন। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, কেন তিনি সেটি করেনেনি? আসবাগ বিন যায়েদ বলেন, “তাকে যে জিনিসটি মদিনায় রাসূল সা. কাছে যেতে বাধা দিলো সেটি হলো তার বৃদ্ধা মায়ের সেবা যত্ন করার ব্যস্ততা। “

ওয়াইস মদিনা থেকে শত-শত মাইল দূরে ছিলেন, তিনি তার মায়ের গৃহস্থলি কাজ এবং সেবা যত্ন করায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি রাসূল সা. কাছে অপরিচিত ছিলেন, অবশেষে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ওয়াইসের ঘটনা এবং বিস্তারিত বর্ণনা জানিয়ে দিলেন। এবং তিনি উমার রা. কে বললেন যেন তিনি ওয়াইসের কাছ থেকে উপকার নেন কেননা রাসূল সা. জনতেন উমার রা. এর সাথে কোন না কোনভাবে তার সক্ষাৎ হবে এবং ওয়াসের কাছ থেকে আল্লাহর কাছে মাগফেরাতের চাইতে বলেন।

ওয়াইস আল ক্বারনী: যিনি রাসূল সা. এর সাহাবী হওয়ার সুগোকে ছেড়ে দিয়েছিলেন যেন তাঁর মায়ের সেবা করতে পারেন। সেজন্যে আল্লাহ তাঁকে নিজের নবীর মুখে তার নাম উচ্চারণ এবং প্রশংসা বর্ণনার দ্বারা সম্মানিত করলেন।

ফুটনোটঃ মুসলিম ২৫৪২, আহমাদ ২৬৮, দারেমী ৪৩৯। রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৩৭৭। হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।

শেয়ার করুন: