৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সরকারি ত্রাণ চেয়ে জরিমানার মুখে পড়া নারায়ণগঞ্জের সেই ফরিদ উদ্দিন এবার ‘পুরস্কৃত’ হলেন। চারতলা বাড়িসহ একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তাঁকে ১০০ দুস্থ ব্যক্তিকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে তাঁর ‘প্রকৃত অবস্থা’ জানার পর এ বাবদ খরচ হওয়া প্রায় ৭৫ হাজার টাকার পুরোটাই তাঁকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাল গতকাল জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামীম ব্যাপারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ফরিদ উদ্দিনের (৫৭) বাড়ি সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ী এলাকায়। তিনি তাঁর বাবার রেখে যাওয়া চারতলা ভবনটির তৃতীয় তলার এক পাশের ছাদে টিনশেডের দুটি কামরায় প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। বাড়িটির মালিক তাঁরা ছয় ভাই ও এক বোন। একটি হোসিয়ারি কারখানায় ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন ফরিদ।
মাস তিনেক আগে স্ট্রোক করে বাঁ চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। কথাবার্তাও গুছিয়ে বলতে পারেন না। প্রয়োজন থেকেই ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলেন বলে জানালেন ফরিদ। তবে ফোন পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার ত্রাণ দিতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ফরিদ চারতলা বাড়িটির মালিক এবং তাঁর একটি হোসিয়ারি কারখানা আছে। এ অবস্থায় সরকারি লোকজনকে হয়রানি করার দায়ে ফরিদকে ১০০ দুস্থ ব্যক্তিকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাজিও হন তিনি। সে অনুযায়ী গত শনিবার বিকেলে সেই ত্রাণ দিতে এসেছিলেন ইউএনওসহ অন্যরা। তখন ফরিদের প্রকৃত অবস্থা তাঁরা জানতে পারেন। তখন তাঁরা আশ্বাস দেন, বিষয়টি তাঁরা খুব ভালোভাবে দেখবেন এবং ফরিদের ব্যাপারে ভ্রান্ত তথ্য দেওয়ায় প্রয়োজনে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ত্রাণের টাকা জোগাড় করতে নিজের আর ভাইয়ের স্ত্রীর স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখেছেন ফরিদ উদ্দিন। ইউপি সদস্য আইয়ুব আলীর কাছ থেকে সুদে ১০ হাজার টাকা ধারও করেছেন।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘গত দুই দিন আমরা ইউএনও আপার কাছে যেতে চাইলেও মেম্বার আইয়ুব আলী আমাদের ভয় দেখিয়েছেন, ত্রাণ দেওয়ার আদেশ না মানলে তিন মাসের জেল হয়ে যাবে।’ এ ব্যাপারে আইয়ুব আলী প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, ‘ফরিদ উদ্দিন একজন হোসিয়ারি ব্যবসায়ী, চারতলা বাড়ির মালিক। তিনি কেন ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেবেন? আর খাবারের দরকার হলে আমাকে বলতেন, আমি স্থানীয় মেম্বার।’