ডিমের কুসুম

ডিমের কুসুম বাদ দেওয়ার কোনো মানে নেই

শুধু ডিমের সাদা অংশ খেলে বাদ পড়ে যায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। শরীরে প্রোটিনের অভাব মনে হলে এক বা একাধিক ডিম খেয়ে ফেলাটা খুবই সহজ সমাধান।

যুক্তরাজ্যের ম্যাসাচুসেটস’য়ের ‘নারিশআরএক্স’য়ের সনদ স্বীকৃত পুষ্টিবিদ এমা নিউয়েল বলছেন, “প্রতি কাপ ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন প্রায় ২৬ গ্রাম, সঙ্গে আছে ১২৬ ক্যালরি, দুই গ্রামেরও কম ‘কার্বোহাইড্রেট’ আর সামান্য চর্বি। তাই ডিমের সাদা অংশ পুষ্টিমানের দিক থেকে নিখাদ।”

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “তবে সাদা অংশে পানিই কিন্তু বেশি, ১০ শতাংশ প্রোটিন আর ৯০ শতাংশই পানি। প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডিম খুবই ভালো। তবে অন্যান্য পুষ্টিগুন এতে খুবই সামান্য।”

কুসুমসহ আর কুসুমছাড়া ডিমের পুষ্টিমানের তফাৎ: ডিমের সাদা অংশ যে স্বাস্থ্যকর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ডিম তখনই একটি পুষ্টিগুনে ভরা পরিপূর্ণ খাবার হয় যখন তা পুরোটা খাওয়া হবে। খাবারের পুষ্টিমানের ঘনত্ব হিসাব করা হয় ওই খাবারের ক্যালরির পরিমাণের তুলনায় তার পুষ্টিমান কতটুকু তার ওপর ভিত্তি করে।

যে খাবারগুলোতে পুষ্টিমানের ঘনত্ব বেশি বা ‘নিউট্রেয়েন্ট ডেনস’ সেগুলো প্রচুর পরিমাণে ‘ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট’ ও ‘মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট’ থাকে। ডিম তেমনই একটি খাবার। বড় আকারের আস্ত একটা ডিম থেকে পাওয়া যায় ১৩ ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও ৬ গ্রাম প্রোটিন। এতে ক্যালরির মাত্রা ৭০।

কুসুমের পুষ্টিমান: নিউয়েল বলেন, “একটি ডিমের কুসুমে পাঁচ গ্রাম চর্বি আর ২১১ মি.লি. গ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। আর এই দুই উপাদানের জন্য মানুষ ডিম খাওয়ার সময় কুসুম বাদ দেন।”

তবে এভাবেই অনেকগুলো ‘মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট’ থেকেও মানুষ বঞ্চিত হয়। যেমন ‘লুটেইন’ আর ‘জিয়ায্যানথিন’ নামক দুটি ‘ক্যারোটিনয়েড’ যা চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। হাতে গোনা কয়েকটি খাবার থেকে মেলে ‘কোলিন’, যা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে। ডিমের কুসুমে সেই উপাদানও থাকে।

কুসুমে থাকা ‘ফোলেইট’ উপাদান গর্ভের শিশুর ‘নিউরাল টিউব’য়ের অস্বাভাবিকতা রোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও তাতে আছে ভিটামিন বি টুয়েলভ, ‘রিবোফ্লাভিন’। আর চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ, ডি এবং কে।

পরামর্শ: নিউয়েল বলেন, “শুধু ডিমের সাদা অংশ যতই প্রোটিনে পরিপূর্ণ থাক না কেনো তা থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ পাওয়া যাবে না। কুসুমে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো বাদ দিয়ে ডিম খেলে পরিপূর্ণ তৃপ্তি মিলবে না।”

“কুসুম একেবারেই খেতে না পারেন এমনটা হলে কিছু করার নেই। তবে আমি সকলকে পরামর্শ দেবো কুসুমসহ ডিম খাওয়ার। কারণ ডিমের সাদা অংশ শুধুই প্রোটিন যোগায়। তাই কুসুম বাদ দিলে অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হবেন।” পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।

“কিছু মানুষ আবার বলেন ডিমের সাদা অংশ কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে। এর সপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে ডিমে কোনো ভোজ্য আঁশ না থাকায় এমনটা হওয়ার পেছনে কারণ হতে পারে।” বলেন তিনি। আর হৃদরোগের আক্রান্ত ও ঝুঁকি আছে এমন মানুষও ডিম খেতে পারেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে পরিমাণের দিকে খেয়াল রেখে।

শেয়ার করুন: