আকাশে খায় আবার আকাশেই ঘুমায়। রহস্যময় এক পাখির কথা বলছি। এদের প্রায় ১০০ প্রজাতি রয়েছে। এই পাখিটির নাম রেড-ব্রেস্টেড বার্ড। এই পাখিদের বুকের অংশ টকটকে লাল রঙের। এই পাখিরা তাদের লাল বুকটি অদ্ভুতভাবে ফুলিয়ে রাখে। এদের স্বভাব আরো অদ্ভুত। এরা দীর্ঘ পথ ওড়ার সময় আকাশে ভেসে দিব্যি ঘুমিয়ে পড়ে। নিজেদের এই ‘অটোপাইলট মোড’-এ ছেড়ে দিয়ে তাদের উড়তে কোনো সমস্যাই হয় না।
১৯৫০ এর দশক থেকে গবেষকদের মধ্যে ধারণা ছিল, রেড-ব্রেস্টেড একটানা তিন মাসের বেশি সময় আকাশে উড়তে পারে। এই সময় একবারও তারা মাটিতে নামে না। তারা আকাশে উড়ন্ত পতঙ্গ খায়। প্রতিদিন গড়ে ৪১ মিনিট ঘুমিয়ে নেয় এই পাখিরা। তন্দ্রাচ্ছন্নতায় তারা ডুবে যায় খুব অল্প সময়ের জন্য, প্রতিবারে ১২ সেকেন্ড করে ঘুমায় এই পাখিরা। সাধারণত মস্তিষ্কের অর্ধেকটা তারা এ কাজে ব্যয় করে। অনেক সময় অবশ্য মস্তিষ্কের উভয় অংশ ব্যবহার করে তারা।
নেদারল্যান্ডসের লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আন্দেশ হেদেনস্ত্রমের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী এই গবেষণা করেছেন। তিন বছর আগে তারা প্রথম দেখতে পান, কমন রেড-ব্রেস্টেড বার্ড প্রজাতির পাখিরা টানা ১০ মাস আকাশে থাকতে পারে। পাখিদের মধ্যে এটি বিশ্ব রেকর্ড।
অন্য আরেকটি গবেষক দল দেখিয়েছে, অন্যান্য পাখিরা ঘুমের সময় তাদের অর্ধেক মস্তিষ্ক সজাগ রাখে। তা না হলে পাখিরা আকাশ থেকে সোজা মাটিতে পড়বে। তবে রেড ব্রেস্টেডরা আকাশেই পুরোপুরি ঘুমিয়ে যায় এবং তাদের ঘুম নিরবচ্ছিন্ন থাকে। আর তারা যখন ঘুমায় তখন তাদের পাখার ব্যবহারও তেমনটা ঘটে না।
চোখের সঙ্গে জুড়ে থাকা মস্তিষ্ক তাদের ওড়ার পথ নির্দিষ্ট রাখে। এর ব্যবহারেই তারা সজাগ থাকে। তবে সবসময় এই মস্তিষ্ক জাগিয়ে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। জীববিজ্ঞানী র্যাটেনবার্গ আরো জানান, এই পদ্ধতিতে ঘুমানোর কারণে তাদের একসঙ্গে ওড়ার সময় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ লাগে না। ঘুমানোর সময় নিজেদের নিরাপদ রাখার বিষয়ে এই পাখির বিশেষ বৈশিষ্ট্য আরো বেশি গবেষণা করতে হবে।
এর মাধ্যমে হয়তো মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর ঘুম সংক্রান্ত জটিলতাগুলো আরো পরিষ্কার করা যাবে। তবে সমুদ্রের ওপর দিয়ে ওড়ার সময় তারা এ কাজ করতে পারে না। কারণ এই পাখিদের পাখনা পানি প্রতিরোধী না। তবে স্থলে থাকাকালীন তারা দিনে ১২ ঘণ্টা ঘুমায়।
লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল, প্রায় ১৪টি রেড-ব্রেস্টেড পাখি নিয়ে নতুন করে গবেষণা করেন। এতে দেখা যায়, দুই থেকে সাড়ে তিন মাস একটানা আকাশে থাকে এই পাখিগুলো। গবেষকেরা পাখিগুলোর শরীরে আগে থেকে লাগানো যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের শরীরের নড়াচড়া ও চলাচল পর্যবেক্ষণ করেছেন। এতে দেখা যায়, ইতালিতে প্রজননকাল কাটিয়ে শীতে তারা পশ্চিম আফ্রিকায় যায়। এই যাত্রা পথেই পুরো শীত চলে যায়। এ সময় মাসের পর মাস তারা আকাশেই কাটায়।
bdview24.com Bangla News from Bangladesh regarding politics, business, lifestyle, culture, sports, crime. bdview24 send you all Bangla News through the day.