রেকটিফাইড স্পিরিট

হোমিওপ্যাথি ওষুধ তৈরির আড়ালে অবৈধ মদের ব্যবসা

বগুড়া শহরের নাটাই পাড়ায় অবস্থিত করতোয়া হোমিও হল অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ থেকে এক হাজার ৬২৪ লিটার রেকটিফাইড স্পিরিট উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের নাটাইপাড়া এলাকার করতোয়া হোমিও ল্যাবের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে এগুলো উদ্ধার করা হয়। বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে মৃত্যুর মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এই অভিযান চালায় বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, বগুড়ায় গত কয়েকদিনে বিষাক্ত মদ পানে এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, পুলিশ বলছে বিষাক্ত মদ পানে জেলায় এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি সদর থানায় একটি মামলা হয় এবং পুলিশ গতকাল চারজনকে আটক করেন। পরে আদালতে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জানা গছে, গত দুদিনে বিভিন্ন হোমিওপ্যাথি দোকান এবং ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গতকাল খান হোমিও হল থেকে ৫ লিটার ইথাইল এলকোহল, পারুল এবং পুনম হোমিও ল্যাবরেটরি থেকে জব্দ করা হয় ২০ লিটার রেকটিফাইড স্পিরিট এবং ৭টি কার্টুনে ভরা ইথাইল এলকোহল জাতীয় হোমিওপ্যাথি ওষুধ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও, পুলিশ ইথানল মিশ্রিত আরও কিছু তরল পদার্থ জব্দ করেছে।

বগুড়া ওষুধ প্রশাসন সূত্র জানায়, করতোয়া হোমিও হল অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজের বছরে মাত্র ২৯ লিটার রেকটিফাইড স্পিরিট আমদানির অনুমতি আছে। কিন্তু, তারা অবৈধভাবে এই পরিমাণ ইথানল (রেকটিফাইড স্পিরিট) আমদানি করেছে।

বগুড়া ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম মোল্লাহ বলেন, ‘পারুল এবং পুনম হোমিও ল্যাবরেটরিজের এই মুহূর্তে রেকটিফাইড আমদানির কোনো লাইসেন্স নেই। ওষুধ প্রশাসনের দেওয়া পুনমের লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০০৫ সালে এবং পারুল হোমিও ল্যাবের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৫ সালে।’

বগুড়ায় বিষাক্ত মদ পানে ১৩ জনের মৃত্যুর পরে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য প্রশাসনের যথাযথ নজরদারির অভাবে গোপনে রেকটিফাইড স্পিরিটের অবৈধ ব্যবহার বেড়েছে। রেকটিফাইড স্পিরিটের অবৈধ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম মোল্লাহ বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের।

বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঁইয়া বলেন, ‘বিষাক্ত মদপানে মৃতের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি বগুড়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং হোমিওপ্যাথি ওষুধ তৈরির সাথে জড়িত ব্যক্তিরা অধিক লাভের আশায় ইথানলের সঙ্গে মিথানল মিশিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করছে। এতে মদে বিষক্রিয়ার কারণে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। আমরা তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনব।’

সূত্র বলছে, বগুড়ার বেশির ভাগ হোমিও ল্যাব ওষুধ প্রশাসন এবং মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রেকটিফাইড স্পিরিট আমদানির অনুমতি নিয়ে অথবা অনুমতি ছাড়া বিপুল পরিমাণ ইথানল আমদানি করে অধিক লাভের আশায় মিথানল মিশিয়ে স্থানীয় মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করে। এভাবে তারা বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। এই মিথানল মিশ্রিত রেকটিফাইড স্পিরিট বিষাক্ত হয়।

সূত্র আরও বলছে, বাজারে মিথানলের দাম কেজি প্রতি ১৫০ টাকা। অন্যদিকে রেকটিফাইড স্পিরিট বা ইথানলের প্রতি কেজির দাম ৪৫০ টাকা। এ কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মিশিয়ে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করছে।

এ বিষয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেহেদী হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব হোমিও ল্যাবরেটরিজ নির্দিষ্ট পরিমাণ রেকটিফাইড স্পিরিট (বগুড়ায় ২০-৪০০ লিটার) আমদানির লাইসেন্স নিয়েছে, তারা যখন রেকটিফাইড স্পিরিট আমদানি করে তখন আমাদের একজন অফিসার গিয়ে সেটা তদারকি করে। ওই কর্মকর্তা তদারকির পরে হোমিওপ্যাথি ওষুধ তৈরির অনুমতি দিয়ে আসেন।

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব ল্যাবরেটরি বেশি ইথানল আমদানি করে এবং খোলা বাজারে বিক্রি করে তারা সেগুলো খুব গোপনে তাদের গোডাউনে কিংবা অন্য কোনো জায়গায় সংরক্ষণ করে। ফলে আমাদের নজরে পড়ে না। আবার আমরা গোপন সংবাদ পেলে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে থাকি।’

বগুড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুনম হোমিও ল্যাবরেটরির রেকটিফাইড স্পিরিট আমদানির কোনো লাইসেন্স নেই। পারুলের লাইসেন্স গত বছর থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এর আগে তারা বছরে ৪০০ লিটার রেকটিফাইড আমদানির অনুমতি নিয়েছিল হোমিওপ্যাথি ওষুধ তৈরি করতে।

শেয়ার করুন: