সুপ্রিম কোর্ট

যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ কত বছর, রায় ১ ডিসেম্বর

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কত বছর কারাভোগ করতে হবে সে বিষয়ে আগামী ১ ডিসেম্বর রায় দেবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার রায়ের দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ নিয়ে দেশের প্রচলিত আইনে আছে এক রকম, কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ থেকে এ বিষয়ে দুই রকম রায় দেওয়া হয়েছে। ফলে এ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড, নাকি ৩০ বছর কারাদণ্ড হবে, নাকি অন্য কোনো সিদ্ধান্ত আসবে, তা জানা যাবে এ রায়ের মধ্য দিয়ে।

গতকাল আপিল বিভাগে একটি রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে আদেশ দেওয়া হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

২০০১ সালে সাভারে জামান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০০৩ সালে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্টে আপিলের পর বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল থাকে। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন সর্বোচ্চ আদালত। মামলার ৯২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ওই বছরের ২৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। রায়ে বলা হয়, যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড। রায়ে আরো বলা হয়, যদি হাইকোর্ট বিভাগ বা এই আদালত (আপিল বিভাগ) মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন তখন এবং নির্দেশ দেন যে আসামি স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত এই কারাদণ্ড ভোগ করবেন, তখন এ ধরনের মামলায় সাজা কমানোর আবেদন গ্রাহ্য হবে না। আদালতের এ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপরাপর আসামির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রসচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে বলা হয়। পরে ওই বছরই আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ করেন জামান হত্যা মামলার আসামি আতাউর রহমান মৃধা।

এ রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানিকালে আপিল বিভাগ উভয় পক্ষের আইনজীবী ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ চার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনের যুক্তি শোনেন। শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পর যেকোনো দিন রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখার আদেশ দেওয়া হয় গত বছর ১১ জুলাই। গতকাল ওই রিভিউ আবেদনের ওপর আবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৫৭ ধারা, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক) ধারা এবং কারাবিধির ৫৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে ৩০ বছর। রেয়াত শেষে যা দাঁড়ায় সাড়ে ২২ বছর।

সূর্য বেগম হত্যা মামলায় রোকেয়া বেগমকে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে বলা হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ সাড়ে ২২ বছর কারাদণ্ড (১৯ বিএলসি, পৃষ্ঠা ২০৪)। আপিল বিভাগের এ রায় ও আইন বলবৎ থাকাবস্থায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ সাভারের জামান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আতাউর রহমানের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে বলা হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড।

ভারতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান করে আইন করা হয়েছে। ভারতের মতো যদি পরিবর্তন করতে হয় তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক), ৪০১ ও ৪০২ ধারা এবং দণ্ডবিধির ৫৫ ধারা এবং কারাবিধির ৫৯ নম্বর ধারা সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে।

আইনজীবীরা বলছেন, জামান হত্যা মামলায় আতাউর রহমানসহ আসামিদের করা রিভিউ আবেদনে নতুন সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ। এই রায়ের মধ্য দিয়ে বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে বলে মনে করেন তাঁরা।

শেয়ার করুন: