ট্রাম্প-বাইডেন

শেষ পর্যন্ত কি করবেন ট্রাম্প?

৩ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ২০ দিন পার হলেও এখনও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়বেন, এমন ভাব নেই। বরং কোন কৌশল আছে কি না ক্ষমতায় টিকে থাকতে সেটাই খুঁজছেন। ট্রাম্পের আইনি লড়াইয়ের পক্ষে তাঁর নিজের দলের লোকজন কথা বললেও দিনকে দিন এর বিরোধিতাকারীর সংখ্যাও বাড়ছে।

কোর্টরুমের বাইরে সারাক্ষণ নির্বাচনে জালিয়াতির কথা বলে যাচ্ছে ট্রাম্পের দল। কিন্তু কোর্টরুমের ভেতরে তারা জালিয়াতির যুক্তি দেখাচ্ছে না।

এখনও নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেইনি যে নিরুঙ্কুশ ভোট পাওয়া ডেমোক্রেট বাইডেনই আগামী ৪ বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। যদিও সেই সম্ভাবনা নাকচ হওয়ার নজির হয়ত হবে না।

বাইডেন যেখানে তাঁর প্রশাসনের দায়-দায়িত্ব ঠিক করে ফেলছেন তখনও ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার বদলে উল্টো পথে হাঁটছেন।

এমনিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দেখা গেল যে মার্কিনীরা দুই ভাগে বিভক্ত। জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়াসহ সুইং স্টেটগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর জিততে হয়েছে বাইডেনকে।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ফেভার সবই কাজে লাগিয়েছেন বাইডেন। তবে কট্টর আমেরিকানদের কাছে ট্রাম্পের গুরুত্বও কম নয়। ফলে পাগলাটে, ক্ষ্যাপাটে ট্রাম্পের পক্ষেও বিপুল ভোট পড়ে। দ্বিতীয়বার ভোট গণনার দাবি করেও লাভ হলনা ট্রাম্পের, এবারও সেসব রাজ্যে জয় পেলেন বাইডেন। ফলে ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকার পধ এমনিতেই সংকুচিত হয়ে আসছে, এমনটাই মনে করছে অনেকে।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এখন ট্রাম্পের ক্ষমতা না ছাড়ার যে প্রবণতা তাতে কি তাঁর সমর্থকরা বিভ্রান্ত হচ্ছে না?

অনেকে বলছেন, ট্রাম্পের নিজ দলের অনেকেই বাইডেনের পক্ষে চলে যাচ্ছেন। এমনকি ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ও জামাতা কুশনারও চাইছেন ভালভাবে ট্রাম্প ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। কিন্তু নাছোড়বান্দা ট্রাম্প কিছুতেই মানতে চাইছেন না। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাইডেনকে কোন রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে না এমন অভিযোগ আছে বাইডেন সমর্থকদের।

২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে প্রথম যে গভর্নর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি ক্রিস ক্রিস্টি। তিনিও এবার বলছেন একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস ক্রিস্টি বলেছেন, "যদি খোলাখুলি বলি তাহলে ট্রাম্পের আইনজীবীরা যা করছেন তা একদম জাতীয় পর্যায়ের বিব্রতকর কার্যকলাপ।"

ট্রাম্প বিভক্তির রেস উসকানি দিয়ে সামনে নিয়ে গেলে পরবর্তী বাইডেন প্রশাসন কতটুকু স্বস্তিতে কাজ করতে পারবে সেটা নিয়েও সংশয় আছে। পররাষ্ট্রনীতি, বর্ণবাদ ইস্যু, অভিবাসন নীতি, বেকার সমস্যা এসব নিয়ে যে বাস্তব পরিস্থিতি দেশটিতে বিরাজ করছে তাতে ভবিষ্যতে আন্দোলনের খোরাক যোগাচ্ছেন ট্রাম্প মনে করছেন কেউ কেউ।

সহজে ক্ষমতা ছেড়ে না দেয়ার কৌশলে নেমেছেন যখন ট্রাম্প তখন রিপাবলিকানদের যে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য আছে সেখানে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট, অভ্যন্তরীণ বিভাজন বাড়ানো যিইয়ে রাখছেন ট্রাম্প।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাইডেনই পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট এটি মেনেই নিয়েছেন বলা চলে। তবে ট্রাম্পের কার্যকলাপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ইমেজ বিশ্বের কাছে নজিরবিহীনভাবে খারাপ হচ্ছে এমনটাও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সবমিলিয়ে ডামাডোলে যাচ্ছে মার্কিনীদের দিন। যদিও জানুয়ারিতেই তারা দেখতে পাবেন নতুন প্রেসিডেন্টের মুখ।

শেয়ার করুন: