খাদ্যাভ্যাস

স্ট্রোক প্রতিরোধে খাবার

স্ট্রোক এমন একটি রোগ, যা মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে এবং এর ভেতরের ধমনিগুলোকে প্রভাবিত করে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, স্ট্রোকের শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ তেমন থাকে না, তবে আগে থেকেই দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস ইত্যাদির সম্পর্ক থাকতে পারে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও স্ট্রোক দেখা যাচ্ছে। তবে স্ট্রোক প্রতিরোধে ভালো খাদ্যাভ্যাসের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। স্ট্রোক প্রতিরোধ করে এমন কিছু খাবার হলো :

শাকসবজি ও ফলমূল
ফল ও সবজিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা রক্তনালিকে ক্ষয় হ্রাস করতে সহায়তা করে। এতে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি পরিমাণ পটাসিয়াম গ্রহণ করে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৪ শতাংশ কমানো সম্ভব। পটাসিয়ামযুক্ত খাবার হলো—কলা, ডাবের পানি, আমড়া, আমলকী, বরই, লেবু, কমলালেবু, আম, জাম, আলু, টমেটো, গাজর, ফুলকপি প্রভৃতি। একটি মাঝারি আকারের কলায় ৪২২ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে।

আঁশজাতীয়

ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও ওজন হ্রাসে যেমন সহায়তা করে, তেমনি স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। এ জন্য লাল চাল, লাল আটা, সব ধরনের সবুজ শাকপাতা খাওয়া উচিত। ১০০ গ্রাম পালংশাকে ২.৪ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

স্বাস্থ্যকর প্রোটিন
মাছ, চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস, মটরশুঁটি, দই, মসুর ডাল, বাদাম, সয়া, টফু ইত্যাদি খাবার স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডগুলো অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এজেন্ট, যা মস্তিষ্ক ও ধমনিতে, বিশেষত হৃৎপিণ্ডের কাছে থাকা প্ল্যাক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে এক-দুইবার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড গ্রহণে স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এ জন্য খেতে হবে তৈলাক্ত মাছ—ইলিশ, টুনা, পাঙ্গাশ, ভেটকি, স্যালমন, তিসি বীজ, চিয়া বীজ, বাদাম প্রভৃতি।

লাইকোপেনসমৃদ্ধ
লাইকোপেনসমৃদ্ধ খাবার স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। এই খাবারগুলো হলো টমেটো, গাজর, পেয়ারা, তরমুজ, লাল চেরি প্রভৃতি।

ম্যাগনেসিয়াম
সব ধরনের বাদাম, ডাল, মটর, মাংস, গম, ভুট্টা, গুড়, কফি, খেজুর, কুমড়া বীজ, শস্যদানা, ডার্ক চকোলেট ইত্যাদি স্ট্রোক প্রতিরোধক খাবার।

ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়াম
স্ট্রোক প্রতিরোধে ভিটামিন ‘ডি’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ‘ডি’ পেতে নিয়মিত সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে কিছু সময় রোদে থাকলেই চলবে। এ ছাড়া দুগ্ধজাতীয় খাবারেও ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়াম থাকে।

ভিটামিন ‘ই’
জলপাই তেল, সূর্যমুখী তেল, বাদাম তেল, সবুজ শাকপাতা, লেটুস—এগুলো নার্ভ পেশির ক্ষতিসাধন প্রতিহত করার পাশাপাশি স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।

বেরিজাতীয়
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, চেরি প্রভৃতি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবারগুলো ব্রেনের সেল ড্যামেজ করা থেকে রক্ষা করে।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
লবণ ও লবণাক্ত খাবার: অত্যধিক লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ জন্য বেকিং পাউডার, বোতলজাত খাবার, চিপস, চানাচুর, আচার, সস, সয়া সস, কোমলপানীয় ড্রিংকস বর্জন করা উচিত।

চিনি: অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তনালির ক্ষতি করতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ।

সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত : রান্নায় ঘি, মাখন, ডালডা মেয়োনেজ—এসব বেশি ব্যবহার করা যাবে না। কেননা এগুলো উচ্চ কোলেস্টেরল সৃষ্টি করে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

লাল মাংস: গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন লাল মাংস খেলে ৪২ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

ট্রান্সফ্যাটযুক্ত: বাইরের প্যাকেটজাত খাবার, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, ফাস্ট ফুড—এসব খাবার কোলেস্টেরল দ্রুত বৃদ্ধি করে। নিয়মিত এসব খেলে হতে পারে স্ট্রোক।

অ্যালকোহল ও ধূমপান: অ্যালকোহল ও ধূমপান রক্তকে ঘন করে তোলে এবং ধমনিতে প্ল্যাক তৈরির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

শেয়ার করুন: