করোনা সংক্রমণের ফলে আমাদের ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা হারানোর ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। এমনকি সংক্রমণ থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও আমরা সেই ক্ষমতা সাময়িক ভাবে হারিয়ে ফেলতে পারি। শুধু করোনা নয় যে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণেই আমাদের ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা নষ্ট হয়। কারণ কভিডের মতো অন্য ভাইরাসগুলোও আক্রমণ করে আমাদের শ্বসনতন্ত্রের উপর দিকটায়। দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের একটি ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক একটি বিবৃতিতে ব্রিটিশ রাইনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ক্লেয়ার হপকিন্স এবং ইউকে ইএনটি-র প্রেসিডেন্ট নির্মল কুমার বলেছেন, ‘‘এটা অনেক দিনই আমরা জানি ভাইরাসগুলি থেকে জ্বর ও পরে সংক্রমণ হলে পরে যখন রোগী সংক্রমণ মুক্ত হন তখনও তাদের নানা ভাবে ভুগতে হয়। এগুলোকে বলা হয় ‘পোস্ট-ইনফেকশাস লসেস’। দুশ’রও বেশি ভাইরাস আছে যারা আমাদের শ্বসনতন্ত্রের উপর দিকটার ক্ষতি করে সংক্রমণের মাধ্যমে। তাই কভিড রোগীরাও যে ঘ্রাণশক্তি বা স্বাদক্ষমতা হারাচ্ছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নাকের নাসারন্ধ্র্রের ভিতরে আমাদের ঘ্রাণশক্তি ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে যে বিশেষ ধরনের কোষগুলি, কভিড-১৯ ভাইরাস সেই কোষগুলিকেই সংক্রমিত করছে। সেই কোষগুলি তখন সংক্রমণ রুখতে ব্যস্ত হয়ে উঠছে। ফলে তাদের যেটা মূল কাজ সেই ঘ্রাণশক্তিকে অক্ষুণ্ণ রাখার কাজে তাদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য ওই কোষগুলি আর জরুরি বার্তা পাঠাতে পারে না স্নায়ুগুলিকে। ফলেমকভিড রোগীরা প্রাথমিক ভাবে হারিয়ে ফেলছেন ঘ্রাণশক্তি। অন্য ভাইরাসের সংক্রমণেও এটা হয়।
সংক্রমণ শুরু হওয়ার ৫ মাস পর দেখা গিয়েছিল শরীরের খুব বেশি তাপমাত্রা বা জ্বর, লাগাতার সর্দি, হাঁচি, কাশির মতোই কভিড রোগীরা প্রাথমিক পর্বে তাদের ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘অ্যানোস্মিয়া’। কভিড রোগীদের এমনকী স্বাদক্ষমতাও হারাতে দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ মিষ্টিকে নোনতা বলে মনে করছেন। কখনও মিষ্টিজাতীয় জিনিস তাদের টক লাগছে। ওই সময় ব্রিটেনের একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র জানায় কভিড রোগীদের অর্ধেকই প্রাথমিক পর্বে হারিয়ে ফেলছেন ঘ্রাণশক্তি। আর ১৬ শতাংশ কভিড রোগী সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার পরেও তাদের ঘ্রাণশক্তি ফিরে পাননি। তার পর বিভিন্ন গবেষণাপত্রে দাবি করা হয় কভিড সংক্রমণের পর ‘ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা হারানো খুব স্বাভাবিক’। প্রতি ১০ জন কভিড রোগীর মধ্যে এক জনের চেয়েও বেশি ক্ষেত্রে এই দু’টি লক্ষণ দেখা গিয়েছে।
পরে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় কোভিড রোগীরা যে শুধুই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছেন তাই নয়; তারা কোনও একটি গন্ধের সঙ্গে অন্য ধরনের গন্ধকে গুলিয়ে ফেলছেন। কফির গন্ধও কারও কটূ লাগছে। কেউ আঁশটে গন্ধ পাচ্ছেন। কারও পচা মাছের গন্ধ নাকে আসছে। কভিড রোগীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনার সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়তে দেখা যায়।