চোখ

কনজাঙ্কটিভাইটিস কি করোনার লক্ষণ?

করোনার উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে নতুন নতুন লক্ষণ। আর সে কারণে রোগের প্রতিকার খুঁজতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। হাঁচি, সর্দি, কাশি শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের উপসর্গ ছাড়াও সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে দেখা দিচ্ছে নতুন ধরনের উপসর্গ। কোথাও আবার রোগীর স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাচ্ছে, আবার কোনো জায়গায় পা ও হাতের পাতায় পড়ছে ফোসকা, পায়ের আঙুলে দেখা দিচ্ছে র্যাশ। এসবের পাশাপাশি এই রোগের নতুন উপসর্গের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি অনুসারে, চোখেও সংক্রমিত হতে পারে করোনাভাইরাস। চোখ কনজাঙ্কটিভাইটিসের মতো লাল হয়ে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। গবেষকেরা এর নাম দিয়েছেন পিংক আই। এমনটাই প্রকাশ করেছে বোল্ডস্কাই।

কনজাঙ্কটিভাইটিস কী? আমাদের চোখের সাদা অংশের উপরে যে পাতলা একটি আবরণ থাকে তাকে বলা হয় কনজাংটিভা। কোনো কারণে চোখের এই অংশে প্রদাহ হলে তাকে কনজাঙ্কটিভাইটিস বলা হয়। সাধারণত আমরা এই অসুখকে ‘চোখ ওঠা’ নামে চিনি। অ্যালার্জি, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চোখের সাদা অংশটি লাল হয়ে যায়, পানি পড়ে এবং চোখ চুলকাতে থাকে। এছাড়াও চোখ ও মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে এ কারণে।

করোনার সঙ্গে কনজাঙ্কটিভাইটিসের সম্পর্ক কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের চোখ হতে পারে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পথ। কোনো সংক্রামিত ব্যক্তি হাত দিয়ে চোখ ঘষে পরে সেই হাত দিয়ে অন্য কাউকে স্পর্শ করলে ভাইরাস সেই ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করবে। সংক্রমিত ব্যক্তির চোখের পানি যদি কোনোভাবে অন্য কেউ স্পর্শ করে এবং চোখে. মুখে বা নাকে লাগিয়ে ফেলেন, তাহলেও সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকে।

জ্যামা অপথালমোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ৩৮জন রোগীর মধ্যে ১২জনের চোখে কনজংটিভাল কনজেশন বা কেমোসিস অর্থাৎ চোখের কনজাংটিভা ফুলে যাওয়া, এপিফোরা অর্থাৎ চোখ দিয়ে অত্যাধিক পানি পড়া, ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছিল। এই লক্ষণগুলো গুরুতরভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই দেখা গিয়েছিল।

দ্য জার্নাল অফ্ দ্য আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ্ অপথালমোলজিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ১-৩ শতাংশের এই ধরনের চোখের সমস্যা দেখা যায়। জ্বর, শুকনো কাশি, গলা ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, ইত্যাদি নেই কিন্তু শুধুমাত্র কনজাঙ্কটিভাইটিস এর লক্ষণ রয়েছে এরকম হলে ভয়ের কিছু নেই। তবে মূল উপসর্গগুলোর একটি বা দুটিসহ চোখ লাল হওয়ার সমস্যা থাকলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেডিসিন ও প্যাথোলজির অধ্যাপক জন ইভান্স প্যাটারসনের মতে,করোনায় আক্রান্ত রোগীর হাঁচি/কাশি থেকে নির্গত ড্রপলেটস সুস্থ ব্যক্তির নাকে-মুখে ঢুকলে যেমন করোনায় আক্রান্ত হতে পারে, তেমনই ড্রপলেটস চোখে ঢুকেও সংক্রামিত করতে পারে। আর সে কারণেই মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি প্রয়োজন সুরক্ষা-চশমাও।

যেসব সতর্কতা মেনে চলবেনঃ * যদি এমন সমস্যঅ টের পান তবে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। * চোখে হাত দেয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই হাত ভালো করে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন। স্পর্শ করার পরেও একইভাবে হাত পরিষ্কার করবেন।

* মাস্ক তো ব্যবহার করবেনই, সেইসঙ্গে ব্যবহার করুন চশমাও। এটি আপনাকে সুরক্ষিত থাকতে সাহায্য করবে। * চোখে ড্রপ ব্যবহার করলেও ব্যবহারের আগে ও পরে হাত ধুয়ে নেবেন।

* নিজে ব্যবহৃত তোয়ালে অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেবেন না। তেমনই অন্যের ব্যবহৃত তোয়ালে ব্যবহার করবেন না। * বিছানাপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন। বিছানার চাদর, বালিশের কভার সপ্তাহে অন্তত দুইবার ধোয়ার ব্যবস্থা করুন। * চোখে যে চশমা ব্যবহার করেন, তা নিয়মিত পরিষ্কার করুন। * নিজের আই কসমেটিকস অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন না।

শেয়ার করুন: