বদভ্যাস

১১টি বদভ্যাস আপনাকে অন্যদের চেয়ে স্মার্ট প্রমাণ করে

বদভ্যাসগুলো ভালো কিছু নয়। এমনটাই সবাই জানি। কিন্তু এবার ভিন্ন কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিছু কিছু বদভ্যাস কিন্তু স্বাস্থ্যকর জীবনের লক্ষণ হয়ে উঠতে পারে। এখানে তেমনই ১১টি বদভ্যাসের কথা তুলে ধরা হলো। এসব অভ্যাস যাদের রয়েছে তারা অন্যদের চেয়ে নিজেদের স্মার্ট ভাবতে পারেন।

১. আপনি দাঁত দিয়ে নখ কাটেন ৫ বছর বয়সী এক হাজার শিশুকে বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখেন। ৫, ৭, ৮ এবং ১১ বছর বয়সে তাদের বাবা-মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় তারা দাঁত দিয়ে নখ কাটে কিনা। কিংবা বুড়ো আঙুল চোষার অভ্যাস রয়েছে কিনা। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের একটি বা দুটো অভ্যাসই রয়েছে বলে জানা যায়। এরপর বয়স যখন ১৩ এবং ৩২ বছর, তখন বিশেষজ্ঞরা সেই তাদের অ্যালার্জি পরীক্ষা করেন। দেখে গেছে, যে শিশুগুলোর মাঝে নখ কাটা বা বুড়ো আঙুল চোষার অভ্যাস ছিল তাদের অ্যালার্জি অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি কম। অবশ্য একই সময়ে বাবা-মায়েদের বলা হয়, শিশুদের এসব আচরণ দেখলে তারা যেন নিষেধ করেন। কারণ নখ কাটা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি না করলেও অন্য ঝামেলায় ফেলতে পারে। দাঁত দিয়ে নখ কাটলে আঙুলের চারপাশের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। আবার কোনো শিশুর দাঁত ওঠার সময় বুড়ো আঙুল মুখে দিয়ে রাখলে বাকি দাঁতগুলো ওঠার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

২. কাজে গড়িমসি করেন কাজে গড়িমসি করার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক পরামর্শই দেয়া হয়। তবে হোয়ার্টন প্রফেসর এবং 'অরিজিনাল' এর লেখক অ্যাডাম গ্র্যান্টের মতে, দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি বা গড়িমসি করা কেবল অলসতার লক্ষণ হতে পারে না। এর অর্থ হতে পারে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকা। অন্য অর্থে বলা যায়, গড়িমসির স্বভাব মানুষের সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং বড় কোনো আইডিয়া সৃষ্টির সুযোগ করে দেয়। এমন অভ্যাসকে কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু করার উদাহরণ হিসেবে গ্র্যান্ট অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের কথা তুলে আনেন। অনেক আইডিয়া বাস্তবায়নে জবস গড়িমসি করতেন এবং এর মাঝে আরো সম্ভাব্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে যেতেন। অবশেষে সবচেয়ে ভালোটা দিয়েই কাজ শেষ করতেন স্টিভ।

৩. দেরি করে আসেন এই অভ্যাস ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনের ক্ষেত্রে একেবারে এলোমেলো এবং আরো খারাপ কিছু হিসেবে তুলে ধরে যেকোনো মানুষকে। কিন্তু 'নেভার বি লেট অ্যাগেইন' বইয়ের লেখিকা ডায়ানা ডিলঞ্জর ভিন্ন মত দিয়েছেন। নিই ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষৎকারে তিনি বলেন, অনেক মানুষই একই সময়ে আশাবাদী এবং বাস্তবতা বিবর্জিত হয়ে থাকেন। তারা বিশ্বাস করেন, আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে একটু দৌড়ে আসা, ময়লা কাপড়গুলোকে ড্রাই ক্লিন করা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনা এবং বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসার কাজ সেরে ফেলা যাবে। অন্যদিকে, বিলম্বে আসা মানুষগুলো আশাবাদী থাকেন এবং সেরাটাই আশা করেন, যা কিনা দৈনন্দিন জীবনে দুই দিকেই ধার করা তলোয়ারের মতো হতে পারে।

৪. অভিযোগ তুলে ধরেন কেউ-ই এমন বন্ধু চান না যিনি কিনা সব ধরনের পরিস্থিতি কেবল মেনেই নিতে থাকেন। বিরক্তিকর সহকর্মী কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি বা রেস্টুরেন্টের বাজে সেবা- যাই হোক না কেন সবকিছুতে চুপ থাকা আসলে অনাকাঙ্ক্ষিত। দ্য আটলান্টিকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়, যারা অর্থপূর্ণভাবে অভিযোগ তুলে ধরেন তাদের মনে নির্দিষ্ট ফলাফলের বিষয়টি স্পষ্ট থাকে। আর তারাই অন্যদের চেয়ে বেশি সুখী থাকেন। তবে অভিযোগ করারও পদ্ধতি রয়েছে। অন্যদের হতাশ না করেও কিছু নেতিবাচক বিষয় তুলে এনে সমস্যাটাকে সুস্পষ্ট করা যায়। আর এটাই হলো কার্যকর অভিযোগ।

ফলপ্রসূ অভিযোগ এমন একটা বিষয়কে তুলে আনে যেটাকে ঠিক করা সম্ভব এবং এতে এমন কোনো ব্যক্তির কথা বলা হয় যিনি এর সমাধান দিতে পারবেন। ফলপ্রসূভাবে অভিযোগ উত্থাপনের তিনটি স্তর রয়েছে। এক. অভিযোগ এমনভাবে তুলতে হবে যেন অন্যকেউ আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে না চলে যান। দুই. এমনভাবে বলতে হবে যেন অভিযোগটা আসলে কোনো হিংস্র বিষয় নয়। তিন. সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বোঝান তিনি সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকৃত হবেন।

৫. চিউইং গাম চিবাতে থাকেন এটা কোনো চাকরির ইন্টারভিউয়ে বসে করাটা শোভনীয় নয়। কিন্তু আপনি যখন একা বসে আছেন, তখন মুখে চিউইং গাম থাকলে উৎপাদনশীলতা বাড়তে পারে। দেহ-মন আরাম পেতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখ গেছে, গাম চিবাতে থাকলে মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত বেশি সচেতন থাকে। এক গবেষণায় দেখে গেছে, গাম চিবাতে চিবাতে যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তারা অন্যদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। অন্যান্য গবেষণায় বলা হয়েছে, চিউইং গাম মানুষের মেজাজ ভালো করে দেয় এবং স্ট্রেস হরমোন হিসেবে পরিচিত কর্টিসলের ক্ষরণমাত্রা কমিয়ে আনে।

৬. আপনার টেবিলটা এলোমেলো অফিসে সহকর্মীর এলোমেলো ডেস্কের দিকে তাকিয়ে যদি তার সম্পর্কে বাজে ধারণা আসে, তবে তা বদলানোর সময় হয়েছে। অগোছালো টেবিল সংশ্লিষ্ট কর্মীর ভালো দিকটি প্রকাশ করতে পারে। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এলোমেলো স্বভাবের মানুষগুলো লক্ষ্য অর্জনে অনেক বেশি সচেষ্ট থাকেন। এছাড়াও অফিসের এমন টেবিলে যিনি বসেন তিনি অনেক বেশি উৎপাদনশীল হতে পারেন।

৭. দিবাস্বপ্ন দেখেন ২০১০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অসম্ভব কল্পনা মানুষকে অসুখী করতে পারে। তবে কয়েক মিনিট দিবাস্বপ্নে ডুবে থাকলে বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায় এবং আরো বেশি সৃষ্টিশীল ও উৎপাদনশীল হওয়া সম্ভব। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ে এক গবেষণায় বলা হয়, কোনো জটিল কাজ করা অবস্থায় ১২ মিনিট কল্পনায় ডুবে গেলে কাজে ফিরে আসার পর তা আরো সহজ মনে হতে পারে এবং সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে।

৮. ছটফট করতে থাকেন যখন বসের সাথে মিটিংয়ে বসে আছেন, তখন ছটফট করাটা উচিত হবে না। কিন্তু কাজের টেবিলে বসে পা নাড়ানো, আঙুল কামড়ে ধরা ইত্যাদি আপনাকে কাজের গতি বাড়িয়ে দেবে। এক গবেষণায় বলা হয়, যে নারীরা ছটফটে স্বভাবের তাদের মৃত্যুঝুঁকি অন্য নারীদের তুলনায় বেশ কম।

৯. পরচর্চার স্বভাব থাকলে কাছের কোনো বন্ধুর কাছে অন্য বন্ধুদের নানা বিষয় নিয়ে এটা-সেটা বলাটা ভালো দেখায় না। কিন্তু পরচর্চার ভালো দিকও রয়েছে। পরচর্চার মাধ্যমে অন্যের উপকার হলে আপনি নিজেও ভালো বোধ করবেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা খেলায় চুরি করেন তাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।

১০. রাত জেগে থাকেন যারা দ্রুত ঘুমিয়ে সকালে ওঠেন তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে- এটা সবাই জানেন। কিন্তু একদল মনোবিশেষজ্ঞদের গবেষণায় ভিন্ন ফল মিলেছে। শিশুদের ঘুমাতে যাওয়ার সময়ের সঙ্গে তাদের আইকিউ এর সম্পর্ক খুঁজেছেন তারা। দেখা গেছে, যারা দ্রুত ঘুমাতে যায় তাদের চেয়ে দেরিতে ঘুমাতে যাওয়াদের আইকিউ অনেক বেশি। এছাড়াও দেখা গেছে, যে ব্যক্তিরা দেরিতে ঘুমাতে যান তাদের আয়-রোজগার দ্রুত ঘুমাতে যাওয়াদের চেয়ে ঢের বেশি।

১১. কথা বলার সময় 'উম...', 'আ...' জাতীয় উচ্চারণ যদিও কোনো অফিসিয়াল প্রেজেন্টেশনের সময় এসব উচ্চারণ অপেশাদারের স্বভাব হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু কোয়ার্টাজ এর একটি নিবন্ধে 'আম', 'উহ' জাতীয় শব্দ বক্তব্যের পরবর্তী অংশগুলোকে মনে করিয়ে দিতে সহায়তা করে। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ন্যায়বান এবং পরিশ্রমী মানুষরা কথা বলার সময় এসব উচ্চারণ বেশি করেন।

শেয়ার করুন: