খালেদা জিয়া

কর্মকৌশল ঠিক করেনি বিএনপি

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আজ বৃহস্পতিবার নাও হতে পারে—এটা মনে করে দলের কর্মকৌশল ঠিক করেনি বিএনপি। গতকাল বুধবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলার শুনানিসহ সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর জামিন আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে আজ শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তবে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, তা গতকাল রাত পর্যন্ত প্রস্তুত হয়নি বলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

তবে গত রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুঞ্জন ছড়ায় যে খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট গত রাতেই বিএসএমএমইউর উপাচার্যের কাছে জমা দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। কিন্তু বিষয়টি কোনো সূত্রেই নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গতকাল দিনভর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা ও প্রস্তুতি ছিল। আজ জামিন হলে এক রকম পরিস্থিতি, না হলে অন্যরকম কর্মসূচির প্রস্তুতি নেন দলটির নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল প্রতিবেদনের ভাষা সরকারের সংশ্লিষ্টরা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তথা বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আজ মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন আদালতে নাও যেতে পারে।

তবে গত রাতে বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলেছেন, আজ যদি আদালতে চেয়ারপারসনের মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা হয় এবং আদালত জামিন না দেন, তাহলে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গত রাতে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। সরকার কী করে, তা আমরা শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই। সরকার কী ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়, তাও দেখতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে প্রমাণিত হচ্ছে, তাঁরা খালেদা জিয়ার জামিনে হস্তক্ষেপ করছেন।’

এদিকে জামিন শুনানিতে আদালতে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনকে রাখার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। শুনানিতে ড. কামালকে রাখার বিপক্ষে মত দেন অধিকাংশ নেতা। তাঁরা মনে করেন, প্রথমত ড. কামাল হোসেন ক্রিমিনাল ল ইয়ার নন। দ্বিতীয়ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো না। সে ক্ষেত্রে যদি তিনি জামিন শুনানিতে অংশ নেন, তাহলে খালেদা জিয়ার জামিন নাও হতে পারে। এ ছাড়া প্রথম দিকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি সাড়া দেননি। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ফলে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দু-একজন এ বিষয়ে আলোচনা করলেও তা আর এগোয়নি।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের বিষয়ে প্রথম আগ্রহ দেখান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাঁর আগ্রহেই গত মঙ্গলবার ফ্রন্টের বৈঠক হয় এবং ওই বৈঠকে ড. কামালও কর্মসূচি নিয়ে আগ্রহ দেখান। পরে গতকাল সকালে ডা. জাফরুল্লাহর বাসায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ফ্রন্টের সিনিয়র নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখানে ড. কামালকে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়েও কথা হয়।

বৈঠকে তারেক রহমানের একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমানের ব্যারিস্টার এট ল ডিগ্রি অর্জন করায় নেতারা অভিনন্দন জানান। এ ছাড়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১১ ডিসেম্বর হোটেল লেক সোরে কূটনীতিকদের দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাবে বিএনপি।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। স্কাইপে লন্ডন থেকে তারেক রহমান এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

আইনি প্রক্রিয়া দেখে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত: রিজভী

এদিকে গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘জামিনের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া দেখে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যখন গণতন্ত্রের জায়গা বন্ধ হয়ে যায়, তখন রাজপথেই তার সমাধান করতে হবে।’

খালেদা জিয়ার জামিন না হলে বিএনপি কী ধরনের কর্মসূচি দেবে—এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘দেখি না আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) কী হয়? আমরা কত দিন অপেক্ষা করব?’ তিনি বলেন, আইন-আদালত, ন্যায়বিচার, সংবিধান, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার, বয়স, অসুস্থতাসহ সব বিবেচনায় তাঁর জামিন পাওয়া আইনগত অধিকার। দেশ-বিদেশের আইনজ্ঞরা বলছেন, এই মামলায় জামিন না পাওয়া বিস্ময়কর। তিনি নিশ্চিতভাবেই জামিনের হকদার। অথচ স্বাভাবিক এই জামিন নিয়ে কত রকমের টালবাহানা করা হচ্ছে। সরকারদলীয় লোকেরা প্রকাশ্যে হুমকি ও ঘোষণা দিয়ে জামিনে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, উচ্চ আদালত থেকে দেশনেত্রী ন্যায়বিচার পাবেন।’

শেয়ার করুন: