যুগ যুগ ধরেই শহুরে জীবনে অবসর সময় কাটানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হলো বাসার বারান্দা আর ছাদ। নিজের বাসায় নিজস্ব আবহে একটুখানি একান্ত সময় পাবার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত স্থান হয় না! আর এই জায়গাটিকে যদি সাজানো যায় নিজের মনের মতো করে, তাহলে মনের স্ফূর্তি বেড়ে যায় বহুগুণ!
তবে বারান্দা আর ছাদ বা টেরেস সাজাবার কৌশলগুলো একটু ভিন্ন। কারণ একটিতে স্থান সঙ্কুলান কম হয়, অপরটিতে যথেষ্ট জায়গা থাকে। চলুন জেনে নেই বাসার বারান্দা আর টেরেস ডেকোরেশনের টুকটাক সহজ কিছু উপায়।
বারান্দা নিজের ঘরের সাথে সংলগ্ন হোক অথব পুরো বাসার জন্য কমন, বিকেলে অথবা সকালে বারান্দায় অন্তত একবার যান না, এমন শহুরে মানুষ পাওয়া কঠিন। নিজের বারান্দাটিকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলতে এই কাজগুলো করতে পারেন –
একটুখানি বসার জায়গা সকাল অথবা বিকেলবেলার চা’টুকু বারান্দায় বসে উপভোগ করতে পারলে কিন্তু দিনটাই সুন্দর হয়ে যায়। যেহেতু বারান্দায় জায়গা কম থাকে, তাই ছোট কফি টেবিল আর দু’খানা চেয়ার রাখতে পারেন বারান্দায়। আরো ভালো হয় যদি সেগুলো ফোল্ডিং হয়। তাহলে প্রয়োজনের সময় ভাঁজ করে সরিয়েও রাখতে পারবেন।
সবুজের সমারোহ কংক্রিটের দেয়ালে এখন আমাদের দৃষ্টি আটকে যায়। এই ব্যস্ত চোখ দু’টোকে আরাম দিতে বারান্দায় ছোট আর মাঝারি আকারের টব রাখতে পারেন। পাতাবাহারির পাশাপাশি তাতে যুক্ত হতে পারে নানান রঙের ফুল গাছ। আপনার পরিবারকে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনও সরবরাহ করবে এসব গাছ।
আলোর খেলা শুধু তো দিনের বেলায় নয়, বারান্দায় আড্ডা বসে সন্ধ্যাবেলাতেও। অনেকে রাতের নীরবতা উপভোগ করেন একলা বারান্দায় সময় কাটিয়ে। ঝুলন্ত ল্যাম্প অথবা স্ট্যান্ডিং ল্যাম্পশেড ব্যবহার করলে বারান্দার আমেজটাই বদলে যাবে। আলো-আঁধারির মাঝে তৈরি হবে এক মায়াবী পরিবেশ!
দেয়ালের সদ্ব্যবহার দেয়ালের খালি অংশগুলোকে কেন ফেলে রাখবেন? ওয়াল শেলফ-এর ব্যবস্থা করতে পারেন। তাতে রেখে দিতে পারেন শো-পিস আর ছোট ছোট গাছের টব। ফলে আপনার বারান্দার দেয়ালটি হয়ে উঠবে এক স্বতন্ত্র সবুজের বাগান!
ছাদ বাড়ির ছাদে তুলনামূলক জায়গা বেশি। তাই এখানে ডেকোরেশন হতে পারে আরো শৌখিন। যেমন ধরুন –
একটুখানি ছায়া ছাদে রোদ পড়ে। বাদলা দিনে ভিজে যায়। আবহাওয়ার এমন স্বেচ্ছাচারিতা উপেক্ষা করেও যাতে একান্ত সময়টি উপভোগ করতে পারেন, সেজন্য ছাদের একটি অংশে টানিয়ে দিতে পারেন শামিয়ানা। এতে করে রোদেলা দিনে পাবেন ছায়া আর বাদলা দিনে একটুখানি শুষ্কতা।
আয়োজন হোক আরামদায়ক ছাদে বসার জন্য কেউ কাঠ অথবা প্লাস্টিকের টুল ব্যবহার করেন, কেউ রাখেন চেয়ার। আবার কেউ গোটা সোফা সেটই কিনে ফেলেন! তবে বসার আয়োজন যেমনই হোক না কেন, হতে হবে আরামদায়ক। অবসরযাপনে বসে যদি অস্থির হয়ে থাকতে হয়, তাহলে তো অবসরের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে! চেয়ার বা সোফার সাথে যোগ করতে পারেন ছোট ছোট বালিশ।
খাবার না হলে চলে? শৌখিনতা করে অনেকেই বারবিকিউ এর ব্যবস্থা রাখেন ছাদে। পরিবার, প্রিয়জন নিয়ে উৎসব উদযাপনে সবাই মিলে ছাদে বারবিকিউ করার মজাই আলাদা! ছাদের যেকোন এক কোণায় হতে পারে এই আয়োজন।
অপরিহার্য সবুজ বারান্দার মতই ছাদেও গাছ-গাছালি থাকা জরুরী। এতে অক্সিজেন-এর সরবরাহ অটুট থাকার পাশাপাশি মনেও আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে সবুজের স্বস্তিদায়ক দৃশ্য খুলে দিবে আপনার মনটা! যান্ত্রিক শহরে নিজের ছাদে একটুখানি সবুজ মানে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার এক সুবর্ণ সুযোগ।
দেখলেন তো, ঘরের ভেতরেই বিনোদনের জায়গা তৈরি করা কত সহজ! একটুখানি প্রচেষ্টা আর কৌশল খাটালেই দারুণভাবে বদলে যায় বারান্দা আর ছাদের চেহারা। আপনার রোজকার ব্যস্ত দিনের মাঝে যুক্ত হতে পারে নির্মল বিনোদনের ছোঁয়া। আর এ সবকিছুই করা যায় স্বল্প বাজেটের ভেতরে!