খ্রিস্টান থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে ইউটিউবার কিম

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ইউটিউবার জে কিম। মুসলিম হওয়ার পর তিনি আগের নাম বদলে নতুন নাম রাখেন দাউদ কিম। জে কিম ইসলাম গ্রহণের সেই সোনালি মুহূর্তটির একটি ভিডিও আপলোড করেছেন তার ইউটিউব চ্যানেলে। সেটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ইসলাম গ্রহণের পর বদলে গেছে জে কিমের ইউটিউব চ্যানেলের কাভার পিকচারও। কালো গম্বুজে তার নামের ওপরে লিখে দিয়েছেন ‘আলহামদুলিল্লাহ!’

ইউটিউবে আপলোড করা জে কিমের ইসলাম গ্রহণের ছয় মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, ঈমানের প্রাথমিক বিষয়গুলো তাকে শেখাচ্ছেন একজন ধর্মীয় বিজ্ঞ ব্যক্তি (আলেম)। সেটি মগ্ন হয়ে অবনত মস্তকে শুনছেন জে কিম। তার মধ্যে এক ধরণের ভক্তি লক্ষ করা গেছে।

ইউটিউবার জে কিম আগে থেকেই ইসলামের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলে বিভিন্ন বিষয়ে ব্লগ করতেন। ওইসব ব্লগে ধর্মের প্রতি তার অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে। তার ইউটিউব চ্যানেলের সাবসক্রাইবার প্রায় ছয় লাখ।

ইসলাম গ্রহণের পর জে কিম লিখেন, ‘যখন থেকে আমি ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহী হলাম, আমার জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি এখনো পূর্ণ প্রস্তুত নই, তবুও একটু একটু করে ভালো মুসলিম হয়ে উঠব। যদিও আমি আগে অনেক পাপ করেছি, এখন তওবা করে শুদ্ধ হতে চাই। আমি জন্মগত মুসলিম নই। কিন্তু আমার বিশ্বাস—আল্লাহ সব সময় আমার সঙ্গেই ছিলেন। সঠিক পথ দেখানোর জন্য আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।’

কীভাবে আগ্রহী হলেন ইসলামে

, এই গল্প শুনিয়েছেন। আলাপটি তার ইসলাম গ্রহণের আগের, তবে এই সময়ের উপযোগী। অনুবাদ করেছেন রাকিবুল হাসান।

আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয়? আমার নাম জে কিম। ২৬ বছর বয়সী কোরিয়ান যুবক। জন্ম শেওনানে। আগে গান করতাম, এখন ইউটিউব ভিডিও তৈরী করি।

ইসলামের প্রতি কখন এবং কীভাবে আগ্রহী হলেন? কয়েক বছর আগে ইন্দোনেশিয়া, তিউনিসিয়ার মতো কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশের মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ হয়। তখন থেকেই ইসলাম সম্পর্কে জানতে শুরু করি। ভিগো লাইভ সম্প্রচারে এসেছিলাম, দক্ষিণ এশিয়ায় লাইভটি সাড়া ফেলেছিলো। মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় আমার কিছু ফ্যান আছে। ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠার ক্ষেত্রে তাদের অবদানের কথা স্বীকার করতেই হবে।

মুসলমানদের সম্পর্কে আমি জানতাম না বললেই চলে। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় এত মুসলিম, এটাও জানতাম না। সত্য বলতে ইসলাম নিয়ে আমার মনে একপ্রকার কুসংস্কার ছিলো। দাঁড়ি, পাগড়ি, জুব্বা, বোরকা, হিজাব—অদ্ভুত লাগতো আমার কাছে। জাকার্তায়, ইন্দোনেশিয়ায় যখন আমার ফ্যানদের সাথে দেখা করলাম, বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম। আমার কুসংস্কার কর্পূরের মতো উবে গেলো। দেখলাম মুসলিমরা প্রবল দয়ালু, নম্র। তাদের আচার-আচরণ মুগ্ধ করার মতো। ঠিক যেমনটা আমি পছন্দ করি।

গত বছর তিউনিসিয়ার এক মঞ্চে কথা বলি। সেখানের মুসলিম ফ্যানরা এতটাই সম্মান ও আপ্যায়ন করেছে, আমি লজ্জায় পড়ে গেছি। তাদের ভালোবাসা আমার দৃষ্টিভঙ্গি পালটে দিয়েছে। আমিও তাদের ভালোবাসতে শুরু করেছি। তাদের সম্পর্কে পড়তে শুরু করেছি। আমি প্রথম শিশুদের জন্য লেখা ইসলামি বইগুলো পড়তে শুরু করি। আরবি পারি না, তাই পড়তে শুরু করি কুরিয়ান ভাষায় কোরআনের অনুবাদ।

মসজিদ পরিদর্শন করতে কোন জিনিসটি আপনাকে উৎসাহিত করেছে? ইউটিউবে যেহেতু আমি ইসলাম নিয়ে কথা বলতাম, আমার অনেক মুসলিম বন্ধু তৈরী হয়ে গিয়েছিলো। তারা আমাকে মসজিদ পরিদর্শন করতে উদ্বুদ্ধ করতো। সবচে আশ্চর্য লেগেছে, ইসলামের অনেক নিয়ম এমন, যেগুলো আমার চিন্তার সাথে মিলে যায়। অনেকেই মনে করে মুসলিমরা উগ্র। কথাটা ভুল; মুসলিমরা সবচে শান্ত, সবচে বিনয়ী। এমনকি আমি তাদের ঘৃণা করলেও তারা আমাকে আরও শ্রদ্ধা, আরও ভালোবাসা দেয়। সৎ কাজ করো, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকো, অন্যকে সাহায্য করো’ ইসলামের এই মানবিক, প্রেমময় বাণীটি ইসলাম পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে।

এই প্রথম রোজা রাখলেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো? রোজা রাখার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিলো মুসলিমদের বুঝা। কিন্তু রোজা রেখে আমি মানসিক প্রশান্তি, শারীরিক উন্নতি অল্প সময়েই দেখতে পেয়েছি। রোজা রাখছিলাম আর অবাক হয়ে আমার মন, শরীর, মেজাজের স্বর্গীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করছিলাম। ইটস আমেজিং!রোজা রেখেই আমি অনুভব করেছি, খাবার এবং পানি কতটা প্রয়োজন আমাদের। যিনি আমাদের এই প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়েছেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসে।

প্রথম নামাজ পড়ার অভিজ্ঞতা? প্রথম নামাজ পড়ার অনুভূতি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। যেন আমি নতুন জন্মগ্রহণ করেছি। সারাজীবন মানসিক দ্বন্দ্বে ছিলাম — কোথায় যাচ্ছি? কিন্তু নামাজে দাড়ালে এই দ্বন্দ্ব কেটে যায়। মনে হয় সঠিক জায়গায় আছি।

কোরিয়ায় ইসলাম গ্রহণ করা কতটুকু চ্যালেঞ্জের? কঠিন চ্যালেঞ্জের। তবে আমি মনে করি বিশ্বাসে মেলায় বস্তু।

আপনার পরিবার কেমন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে? তারা আমাকে নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি—আমি যদি সত্যটা তাদের সামনে প্রতিনিয়ত তুলে ধরি, তারা উপলব্ধি করতে পারবেন এবং আমাকেও মেনে নিবেন।

শেওলে কোনো মুসলিম সংগঠন আছে? মুসলিম সংগঠন সম্পর্কে আমি খুব বেশী জানি না। তবে ইতাইওনে একটি মুসলিম সংগঠন আছে, তারা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। কুরিয়ার ইসলামি যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সালাম নূরীর ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলাম একদিন। সেখানে দারুণ অভীজ্ঞতা হয়েছে। অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে।

আপনি কি প্রত্যাশা করেন যে, কোরিয়ানরা আরও বেশি ইসলাম সম্পর্কে জানুক? আমি প্রত্যাশা করি না, তারা হুট করেই ইসলাম নিয়ে উঠেপড়ে লেগে যাবে। তবে এতটুকু অবশ্যই প্রত্যাশা করি, তারা বিশ্বাস করুক মুসলিমরা টেরোরিস্ট নয়। মুসলিমরা আমাদের মতোই সভ্য নাগরিক। কারণ সেখানে মুসলিমদের সম্পর্কে ভালো তথ্য জানা খুব দুষ্কর। মিডিয়া সারাক্ষণ ৯/১১ বিস্ফোরণ, তালেবান এবং আইএসআই নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এই মিথ্যা নিউজ তাদের মস্তিষ্কে ধোঁয়ার মতো সব সত্যকে আড়াল করে দেয়।

শেয়ার করুন: