ধর্ষণের অভিযোগ থেকে আজহারের খালাস

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে প্রথম অভিযোগ বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়েও প্রমাণিত হয়েছে চারটি অভিযোগ। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে দেয়া ধর্ষণের অভিযোগে ২৫ বছরের দণ্ড থেকে আপিলে খালাস পেয়েছেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। রায়ে এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলেও মামলায় আনা ধর্ষণের অভিযোগ থেকে রেহান পেলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকালে প্রসিকিউশনের আনা দুই, তিন ও চার নম্বর অভিযোগে বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।অপরদিকে, ধর্ষণের দায়ে পাঁচ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন আজহারুল ইসলাম। ছয় নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের সাজা বহাল রয়েছে। তাতে বিচারপতিরা সর্বসম্মত মতামত দিয়েছেন।

আজ সকাল ৯টা ৭ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন-বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্দেহাতীতভাবে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল। এর মধ্যে দুই, তিন ও চার নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। ধর্ষণের পাঁচ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর ও ছয় নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এক নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান তিনি।

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায়ের ব্যাখ্যা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যুদণ্ডের তিন অভিযোগে আপিলের রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে বহাল আছে। অভিযোগগুলো হলো- ২, ৩ ও ৪। ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে খলাস এবং ৬ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের সাজা বহাল আছে। কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আশা করি শিগগিরই রায় প্রকাশ হবে।

আজহারের বিরুদ্ধে ছয় অভিযোগ

প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ) নেতা ও রংপুর শহরের বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে অপহরণ, আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন এবং ৩ এপ্রিল রংপুর শহরের দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে ‘ব্রাশফায়ার’ করে তাদের হত্যা করা। এই অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়নি। ফলে এ অভিযোগের বিরুদ্ধে আপিল হয়নি।

দ্বিতীয় অভিযোগ : একাত্তরের ১৬ এপ্রিল তার নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপাড়ায় ১৫ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রয়েছে আপিলে।

তৃতীয় অভিযোগ : একই বছরের ১৭ এপ্রিল নিজ এলাকা বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিলে অন্তত ১২শ’ নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ। আপিলে এ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রয়েছে।

চতুর্থ অভিযোগ : ১৭ এপ্রিল কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপকের স্ত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা। এ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রয়েছে আপিলে।

পঞ্চম অভিযোগ : ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারীদের ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো। একই সঙ্গে, নারীসহ নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের অপহরণ, আটক, নির্যাতন, গুরুতর জখম, হত্যা ও গণহত্যা। এ অভিযোগ থেকে সর্বসম্মতভাবে ২৫ বছরের সাজা থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

ষষ্ঠ অভিযোগ : একাত্তরে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় একজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। একই বছরের ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে একজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন ও গুরুতর জখম। এ অভিযোগে আপিলে পাঁচ বছরের সাজা বহাল আছে।

শেয়ার করুন: