বাজেট ৫২৩১৯০ কোটি টাকার

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি বাজেটই আকারে ছাড়িয়ে গেছে আগেরটিকে। এবার তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেটের আকারও আগের সব রেকর্ড ভাঙছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেটের আকার বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ।

‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামের খসড়া বাজেট প্রস্তাব আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম বাজেট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার হতে যাচ্ছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।

সে হিসাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। আসছে বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ ধরা হচ্ছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

এনবিআর বহির্ভূত করের পরিমাণ ধরা হচ্ছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান ধরা হচ্ছে চার হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।

আসছে বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।

আয়-ব্যয়ের বিশাল পার্থক্যের কারণে এবার বাজেট ঘাটতিও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি দাঁড়াতে পারে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।

অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে ২০ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। ওই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকার। এটি চলতি অর্থবছরে রয়েছে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ খাতের মধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ রয়েছে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তিন হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরে একই পরিমাণ রয়েছে।

আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮.২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ৮.১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৭.৮ শতাংশ। এ ছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫.৫ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সংশোধিত বাজেট : চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেশ কাটছাঁট করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায়।

অর্থাৎ মূল আকারে কাটছাঁট হয়েছে ২২ হাজার ৩২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ১৬ হাজার ৬১২ কোটি টাকায়।

চলতি অর্থবছর এডিপির পরিমাণ এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকায়। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ধরা আছে এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ১৪২ কোটি টাকায়। এটি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই আছে।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে এসেছে ৪৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়। ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।

সংশোধিত বাজেটে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকায়। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ ধরা আছে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকায়। জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

শেয়ার করুন: