দু’জোটকে নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে বিএনপি!

জোটের দুইদল নতুন জোট ঐক্যফ্রন্ট এবং পুরানো সঙ্গী ২০ দল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। ২০ দলের নেতারা চান ঐক্যফ্রন্ট ত্যাগ করুক বিএনপি। তাদের বক্তব্য হলো- ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে বিভ্রান্ত করছেন।

তার প্ররোচনায় নির্বাচনে গিয়ে দল ও জোটের ক্ষতি করেছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে থাকলে আন্দোলন-সংগ্রাম বা সরকারকে সরানোর পরিকল্পনা সফল হবে না। এ নিয়ে দু’দলের মধ্যে এখন চলছে টানা পোড়ন।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের একাধিক শরিক মনে করে বিএনপি সংসদে গিয়ে আত্মঘাতীর কাজ করেছে। তাদেরকে সংসদ ছাড়তে হবে। একটি শরিক চায় ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেওয়া হোক।

সর্বশেষ বিএনপি সংসদে যোগ দেওয়ার কারণে দুই জেটোর নেতারাই ক্ষুব্ধ বিএনপির ওপর। সংসদ সদস্যদের শপথ ও নানা ইস্যুতে মান-অভিমান ও ক্ষোভের কারণে ইতোমধ্যে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে চলে গেছে বিএনপির দুই দশকের সঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। লেবার পার্টিসহ আরো কয়েকটি দল জোট ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। তারা ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, নির্বাচন পরবর্তী পর্যায়ে ঐক্যফ্রন্টকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়নি কেন?

এবিষয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পর কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন সাতজন শপথ নিলেন? এর সন্তোষজনক জবাব না পেলে আগামী ৮ জুনের পর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যাবে। ২০ দলের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব) অলি আহমদ বিএনপির সংসদে যোগদান করার কারণে প্রকাশ্যে তার ক্ষোভের কথা বলছেন সভা-সমাবেশে। তিনি নিজে বিএনপির নেতৃত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

গত ৬ মে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ হঠাত্ জোট ছাড়ার পর তাকে বিএনপির দুই নেতা তাকে ২০ দলে ফেরার অনুরোধ করলেও কোনো কাজ হয়নি।

এদিকে জানা গেছে, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ২০ দলীয় জোট ছাড়ার কারণ হিসাবে বলেন, আমি অনেকদিন বলে আসছি ঐক্যফ্রন্ট ছাড়েন। বিএনপি তাতে কর্ণপাত করেনি। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির রাজনীতি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী। যে কারণে বিএনপিতে ২০ দলের গুরুত্ব কমে গেছে। তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকায় ২০ দলীয় জোট অকেজো হয়ে গেছে।

বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন ২০ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। পরে দলের নেতারা তাকে শান্ত করতে পেরেছেন বলে জানা গেছে। তবে ইরানসহ আরো কয়েকটি শরিকদল ঈদের পরে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিতে পারে বিএনপিকে।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ড. কামালদের সঙ্গে জোট করা ছিল ভুল। তারা ছিল সরকারি এজেন্ট। সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। এখন কয়েকজন সংসদ সদস্য নিয়ে তারা আবার সংসদে যোগদান করে অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বড় ধরনের ভুল। তাই আমরা বলেছি, অবিলম্বে ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দিতে হবে।

অন্যথায় আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। ডা. ইরান বলেন, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সরকারের একটা মিশন নিয়ে এসেছেন ঐক্যফ্রন্টে। সরকারের এজেন্ডা নিয়েই তারা কাজ করছেন। এ কারণে বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়তে হবে। যার কারণে বিএনপিকে ড. কামালদের ছাড়তে হবে। তা না হলে ২০ দল অটুট থাকবে না।

জানা গেছে, জামায়াত এবং এলডিপি প্রকাশ্যে না বললেও গোপনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ‘মিশন’ সফল করতে। বিএনপির অনেক নেতাও চাচ্ছেন ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসুক। তবে মহাসচিবসহ কয়েকজন ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য অটুট রাখার পক্ষে মনোভাব পোষণ করেন।

তবে এমতাবস্থায় ভাঙন ঠেকিয়ে জোটের ঐক্য অটুট রাখাই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কেবল জোটে নয়, বিএনপির ভেতরও চলছে নেতায় নেতায় বিরোধ। এক নেতার বক্তব্যের সঙ্গে আরেক নেতার বক্তব্যের কোনো মিল নেই।

সংসদে বিএনপির যোগদানের পর সম্প্রতি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্রের বিরোধ দেখা দেয়। পরে দলের হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপে তা নিরসন হলেও আরো কয়েকজন নেতার সঙ্গে মহাসচিবের বিরোধ প্রকাশ্যে লক্ষ্য করা গেছে।

শেয়ার করুন: